২৯ স্ট্রাইকরেট, ৩৩ গড়, নেই কোনো ছক্কা—ভারতীয় দলে এই খেলোয়াড় না থাকাতেই খুশি হ্যাজলউড
৮ ইনিংস, ২৭১ রান। গড় ৩৩.৮৭। সর্বশেষ বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে চেতেশ্বর পূজারার পারফরম্যান্স এটি। টেস্টে তিন নম্বর ব্যাটসম্যানদের জন্য এই গড়টা ভালো না খারাপ? সরলভাবে পরিসংখ্যান বিবেচনায় এটাকে খারাপ বলে চালিয়ে দেওয়াই যায়।
তবে ক্রিকেটে ম্যাচ পরিস্থিতি বলতে একটা বিষয় আছে। সেই বিবেচনায় এমন গড়পড়তা গড়ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আর তেমনটাই হয়েছিল সর্বশেষ বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে পূজারার বেলায়। সেই সিরিজে ভারতের জয়ের পেছনে অবদান এতটাই ছিল যে এবার তিনি না থাকাতে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার জশ হ্যাজলউড।
ভারতের জন্য সর্বশেষ বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফি নানা কারণে ঐতিহাসিক। প্রথম টেস্টে নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৩৬ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর সেই সিরিজ জেতা যেকোনো বিবেচনাতেই বড় অর্জন। সঙ্গে সেই সিরিজে ভারত পূর্ণ শক্তির দলও পায়নি।
প্রথম টেস্টের জন্য ব্যক্তিগত কারণে দলে ছিলেন না অধিনায়ক বিরাট কোহলি। দলকে নেতৃত্ব দেন অজিঙ্কা রাহানে। পুরো সিরিজে ভারত খেলিয়েছে ২০ জনকে। অভিষেক হয় ৫ ক্রিকেটারের। আরেকটি পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। ব্রিসবেন টেস্টে ভারতীয় দলে থাকা বোলারদের সব মিলিয়ে উইকেট ছিল মাত্র ১৩, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার ১০৪৬টি। এমন একটি অনভিজ্ঞ দল নিয়ে ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়া হারায় ভারত, জেতে সিরিজ।
অনভিজ্ঞ এই দলে পূজারার মতো কাউকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হতো। তিনি সেটা নিয়েছিলেনও। পুরো সিরিজে পূজারা বল খেলেন ৯২৮টি। ব্যাটিং করেছেন ২৯.২০ স্ট্রাইকরেটে। ব্রিসবেনে দ্বিতীয় ইনিংসে ফিফটি করেন ১৯৬ বলে। সিরিজের তৃতীয় টেস্টে সিডনিতে ভারত যখন প্রচণ্ড চাপে তখন দুই ইনিংসেই ফিফটি করেন পূজারা।
প্রথম ইনিংসে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন ১৭৬ বলে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৭ রান করেন ২০৫ বলে। ভারত যেন প্রথম টেস্টের মতো ব্যাটিং বিপর্যয়ে না পড়ে, সিরিজের বাকি টেস্টগুলোতে সেটাই নিশ্চিত করেছেন পূজারা। কখনো সেটা স্টার্কদের বাউন্সে ডাক করে, কখনো সেটা আর্ম বা বুকে লাগিয়ে। এভাবেই পূজারা অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের হতাশ করেছেন, যে সুযোগটা অন্যপ্রান্ত থেকে নিয়েছেন ঋষভ পন্তরা।
তবে সেই পূজারা ভারতের টেস্ট দলে অনেক দিন ধরেই নেই। ভারতের হয়ে সর্বশেষ টেস্ট তিনি খেলেছেন ২০২৩ সালের জুনে, এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। মূলত পূজারার রয়েসয়ে টেস্ট খেলার কৌশল থেকে সরে এসেছে ভারত। এখন ভারতের হয়ে ৩ নম্বরে ব্যাটিং করেন শুবমান গিল। তবে এরপরও বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফির আগে পূজারার নামটা আলোচনায়। বিশেষ করে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ধবলধোলাই হওয়ার পর। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পূজারার পারফরম্যান্সও তাঁকে আলোচনায় নিয়ে আসছে। ২৫ টেস্ট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর গড় প্রায় ৫০। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পূজারার ব্যাটিং গড় ৪৭.২৮।
এমন একজন দলে না থাকলে তো পেসার হ্যাজলউডের খুশি হওয়ারই কথা, ‘চেতেশ্বর পূজারা না থাকায় আমি খুশি। সে অনেক সময় নিয়ে ব্যাটিং করে, উইকেটে অনেক সময় ব্যয় করে। প্রতিবার তাঁর উইকেট অর্জন করতে হয়। আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে খুব ভালো করেছে সে।’
সংবাদ সম্মেলনে হ্যাজলউড আরও বলেছেন, ‘আমি বলতে চাইছি, প্রথম শ্রেণির অনেক ক্রিকেটারই দলে (ভারত) আসে। ভারতীয় দলে পারফর্ম করার চাপ অনেক বেশি। তাই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অনেক ক্রিকেটারই আসতে থাকে, তাই সব মিলিয়ে তাদের একাদশে অবিশ্বাস্য ক্রিকেটারদের একটা মিশ্রণ থাকেই। তাই এটা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না, তারা সবাই বড় খেলোয়াড়।’