টেস্ট বাঁচাতে জাদুর কাঠির আশা কামিন্সের

টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্সএএফপি

আলোচনাটা যে নতুন, তা নয়। তবে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ–সংক্রান্ত সে আলোচনা নতুন করে সামনে এসেছে নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় সারির দল ঘোষণার পর। এবার তা নিয়ে কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, ব্যাটসম্যান উসমান খাজা। কামিন্সের আশা, কোনো এক জাদুকরি শক্তি এসে বাঁচিয়ে দেবে টেস্ট ক্রিকেটকে। আর ম্যাচ ফি বাড়িয়ে আরও বেশি ক্রিকেটারকে উৎসাহিত করতে বলছেন খাজা।

টেস্ট ক্রিকেটের যে নাটকীয় অবনতি ঘটেছে, কামিন্স অবশ্য এর সঙ্গে একমত নন। সিডনিতে আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া শেষ টেস্টের আগে কামিন্স এ সংস্করণের ভবিষ্যৎ নিয়ে বলেন, ‘আমার আশা, আগামী ১০ বা ২০ বছরে এটি এখনকার চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আমার মনে হয়, এবারের টেস্ট মৌসুমের আগে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিছু প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ ছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি দুর্দান্ত টেস্ট ম্যাচ হয়েছে, অনেক সমর্থন, অনেক দর্শক ছিল।’

এরপর কামিন্স যোগ করেন, ‘ফলে যেভাবে বলা হচ্ছে, এটি যে ততটা নিচের দিকে যাচ্ছে, আমি তা মনে করি না। তবে যে পরিমাণে অন্যান্য ক্রিকেট হচ্ছে, সেখানে একটা ব্যাপার আছে। অবশ্যই অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে মেধার প্রতিযোগিতা এখন অনেক বেশি।’

অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের আশা, দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় সারির দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়েই থাকবে, ‘আমি বেড়ে উঠেছি টেস্ট ক্রিকেটকে দারুণ ভালোবেসে। আমার মনে হয়, এটি বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যায়। আমি জানি, দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের সেরা দলটি পাঠাচ্ছে না। আশা করি, এটি (বিচ্ছিন্ন) একটা ঘটনা হয়ে থাকবে।’

কামিন্সের আশা, টেস্ট ক্রিকেট আগামী ১০-২০ বছরে আরও ভালো অবস্থানে থাকবে
এএফপি

অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোর জন্য টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাপারটি এখনো আলাদা। এবার যেমন পাকিস্তানের বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দুই দিনই এক লাখের বেশি দর্শক ছিলেন মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। তবে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় ব্যাপারটি মোটেও এমন নয়, কামিন্সের দুশ্চিন্তাও সেটি নিয়েই, ‘অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি মৌসুমই আগেরবারের চেয়ে বড় মনে হয়। তবে বিদেশে গেলে অবশ্যই ব্যাপারটি এমন। কিছু ব্যাপারে মাঝেমধ্যে চিন্তাই হয়। তবে একই সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এত সমর্থক এর আগে কখনোই ছিল না আর আমার মনে হয়, বিশ্বে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সমর্থক এখন ক্রিকেট দেখছে।’

আদর্শগতভাবে এটি টিকিয়ে রাখতে গেলে ১৫ থেকে ২০টি টেস্ট খেলুড়ে জাতি থাকবে, যারা সত্যিই শক্তিশালী। আমি জানি, অনেক রকমের ভিন্ন চ্যালেঞ্জ আছে।
প্যাট কামিন্স, অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক

ক্রিকেটের বিশ্বায়নে টি-টোয়েন্টিই সবচেয়ে বড় মাধ্যম হবে, এটিও বেশ আগে থেকেই প্রচলিত। কামিন্স সে বাস্তবতাটি জানেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আমি তো চাইব সবাই টেস্ট ক্রিকেট দেখুক। কিন্তু এ মুহূর্তে ক্রিকেট যতটা শক্তিশালী, আগে কখনো দেখিনি।’

২০২৩ সালে এমসিজিতে বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিন
এএফপি

এসবের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটকে টিকিয়ে রাখতে গেলে কী করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কামিন্সের মত, ‘আদর্শগতভাবে এটি টিকিয়ে রাখতে গেলে ১৫ থেকে ২০টি টেস্ট খেলুড়ে জাতি থাকবে, যারা সত্যিই শক্তিশালী। আমি জানি, অনেক রকমের ভিন্ন চ্যালেঞ্জ আছে। অস্ট্রেলিয়ায় যে এটি প্রাধান্য পায়, সে কারণে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। যখনোই খেলি, অনেক সমর্থন পাই। আমি জানি না, জাদুকরি সমাধান কী হতে পারে, তবে এমন কিছু থাকলে দারুণ হতো।’

সম্প্রতি টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ডের মতো বড় দেশগুলোর কঠোর সমালোচনা করেছেন কামিন্সের পূর্বসূরি স্টিভ ওয়াহ। টেস্ট ক্রিকেটকে টিকিয়ে রাখতে গেলে আরও বেশি ম্যাচ ফি দিয়ে আরও বেশি খেলোয়াড়কে উৎসাহিত করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। প্রায় একই রকম কথা বলেছেন খাজাও।

আরও পড়ুন

ফক্স ক্রিকেটকে খাজা বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, অন্য কিছু দল দুর্ভাগ্যজনকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে সেভাবে টাকা পায় না। এটি আসলে মূল কারণগুলোর একটি। আমি জানি, কারণ অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি, তাদের গড় বেতন কত, দেশের হয়ে ম্যাচ খেলার চুক্তি কেমন।’

আরও পড়ুন

এরপর খাজা বলেন, ‘সব কটি বোর্ডের আর্থিক অবস্থা কেমন, সেটা দেখাটা দারুণ হবে। তারা কি ভুগছে, অর্থ কি ঠিক জায়গায় যাচ্ছে, এটি কি খেলোয়াড়েরা পাচ্ছে। তাদের জন্য একটা পথ বের করতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে আরও উৎসাহিত হয়। এ ক্ষেত্রে সব বোর্ডের দিক থেকে সচ্ছতা লাগবে, কীভাবে সেরা উপায়ে তারা খেলোয়াড়দের টাকা দিতে পারে।’