আগের ম্যাচেই লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের কাছে ৫৬ রানে হেরেছিল পাঞ্জাব কিংস। লক্ষ্ণৌয়ের রান–পাহাড়েই চাপা পড়েছিল তারা। কিন্তু আজ চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে চেন্নাই সুপার কিংসের ২০০ রান পাঞ্জাব তাড়া করল দারুণভাবেই। ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত লড়াইয়ে শেষ বলে গড়ানো শ্বাসরূদ্ধকর এক ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে পাঞ্জাব। শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাঞ্জাবের দরকার ছিল ৯ রানের, শেষ বলে ৩। নখ কামড়ানো উত্তেজনার মধ্যে চেন্নাইয়ে স্বাগতিক দর্শকদের হতাশ করেছেন সিকান্দার রাজা। শেষ বলে ৩ রান তুলে পাঞ্জাবের এই দারুণ জয়ে নায়ক এই জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটারই।
পাঞ্জাবের এই জয়ে বড় কোনো ইনিংস নেই কোনো ব্যাটসম্যানেরই। সবাই নিজের জায়গা থেকে অবদান রেখেছেন দলের জয়ে। প্রভসিমরান সিং ২৪ বলে ৪২ করে শুরুটা করেছিলেন। তবে অধিনায়ক শিখর ধাওয়ান ১৫ বলে ২৮ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে পাঞ্জাবকে ম্যাচে খুব ভালোভাবেই রেখেছিলেন লিয়াম লিভিংস্টোন। তিনি ৪ ছক্কায় ২৪ বলে ৪০ রান করে চেন্নাইয়ের বোলিংকে এলোমেলো করে দেন। তাঁকে দারুণ সঙ্গ দেন স্যাম কারেন। তিনি ২০ বলে ২৯ করেন। তবে শেষ দিকে জিতেশ শর্মা আর সিকান্দার রাজার দুটি ছোট্ট ও কার্যকর ইনিংসেই চেন্নাইয়ের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেয় পাঞ্জাব। জিতেশ শর্মা করেন ১০ বলে ২ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ২১। সিকান্দার রাজা শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ৭ বলে ১৩ করে পাঞ্জাবকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। চেন্নাইয়ের মাঠে এটি সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। এর আগে ২০২১ সালে কলকাতা এই মাঠে জয় পেয়েছিল ১৯২ রান তুলে।
চেন্নাইয়ের সেরা বোলার দুজন—তুষার দেশপান্ডে ও রবীন্দ্র জাদেজা। নতুন ‘মালিঙ্গা’ মাতিশা পাতিরানা নিয়েছেন ১ উইকেট। তবে শেষ ওভারটিতে পাতিরানা প্রায় বাজিমাত করে ফেলেছিলেন। দারুণ বোলিং করেন তিনি। স্লোয়ার দিয়েছেন, করেছেন শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি। অফ স্টাম্পের বাইরে বল রেখে কঠিন করে দিয়েছেন বড় শট খেলা। কিন্তু পাতিরানার দারুণ বোলিংকেও চ্যালেঞ্জ করেছেন সিকান্দার রাজা। স্কয়ার লেগ, ফাইন লেগ আর ডিপ মিডউইকেটে বল ঠেলে রান তুলেছেন। শেষ ওভারে প্রয়োজনীয় ৯ রান যে মাথা ঠান্ডা রাখলেই তুলে ফেলা যাবে, সেই ব্যাপারটিই মাথায় রেখে খেলেছেন সিকান্দার রাজা। শেষ বলে একটা বাউন্ডারিরই প্রয়োজন ছিল। রাজা স্কয়ার লেগে খেলেও দেন ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে। চেন্নাইয়ের ফিল্ডার বলের পেছনে ছুটছিলেন, বাউন্ডারিও ঠেকালেন। কিন্তু এই ফাঁকেই দরকারি ৩টি রান তুলে নেন রাজা আর শাহরুখ খান।
দুপুরের ম্যাচ, তাই টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া ছাড়া অন্য কিছু ভাবেননি চেন্নাই অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। ব্যাটিংয়ে নেমেই বাউন্ডারির ফুলঝুরি ছুটিয়েছিলেন ডেভন কনওয়ে। সাকল্যে মারলেন ১৬টি বাউন্ডারি। ছক্কা মাত্র একটি। কিন্তু এবারের আইপিএলে তিনি নিজের দারুণ ফর্ম আবারও দেখালেন চেন্নাইয়ে। তবে আক্ষেপ থেকেই গেল সেঞ্চুরি পেলেন না বলে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানের ৫২ বলে ৯২ রানের ইনিংস আগে ব্যাটিং করা চেন্নাই স্কোরবোর্ডে তোলে ৪ উইকেটে ২০০ রান। কনওয়ের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে চেন্নাইয়ের ইনিংসে অবশ্য রুতুরাজ গায়কোয়াড়, শিবম দুবে, মঈন আলী, রবীন্দ্র জাদেজা আর অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি রেখেছেন ছোট ছোট অথচ কার্যকর অবদান। ধোনি শেষে নেমে ৪ বলে ১৩ রান করেন। ২ ছক্কা মেরে চেন্নাইয়ের সংগ্রহ নিয়ে যান ২০০-তে।
দুপুরের রোদে খেলা। টস জিতে শুরুতে ব্যাটিং না করার কোনো কারণ দেখেননি চেন্নাই অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। কনওয়ে আর গায়কোয়াড়ের ওপেনিং জুটিতে আসে ৮৬। গায়কোয়াড় ৩১ বলে ৩৭ রান করে আউট হন অফ স্পিনার সিকান্দার রাজার বলে উইকেটরক্ষক জিতেশ শর্মার হাতে স্টাম্পড হয়ে। এ ছাড়া শিভাম দুবে ১৭ বলে ১৮, মঈন আলী ৬ বলে ১০, রবীন্দ্র জাদেজা ১০ বলে ১২ রান করেন।
রোববার দুপুরে খেলা। চেন্নাইয়ে সন্ধ্যার দিকে শিশির পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ধোনি। তাঁর সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, প্রমাণ করে দেন কনওয়ে। ওপেন করতে নেমে পুরো ২০ ওভার রইলেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটার। ৫২ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলেন কনওয়ে। ১৬টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। অন্য ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড় ৩১ বলে ৩৭ রান করেন। শুরু থেকেই দ্রুত রান তুলছিল চেন্নাই।
৩ নম্বরে নেমে শিবম দুবে ১৭ বলে ২৮ রান করেন। এই ম্যাচে অজিঙ্ক রাহানেকে নামানো হয়নি। পাঞ্জাবের বোলারদের বিরুদ্ধে বাঁহাতি ব্যাটাসম্যানদের নামানোর সিদ্ধান্ত নেন ধোনি। কনওয়ে রান করেন। শিবম রান করেন। মইন আলী ও রবীন্দ্র জাদেজা যদিও রান পাননি। কিন্তু একের পর এক বাঁহাতি ব্যাটাসম্যান নামিয়ে পাঞ্জাবের স্যাম কারেন, আরশদীপ সিংহ ও রাহুল চাহারের মতো বাঁহাতি বোলারদের বিরুদ্ধে আক্রমণের চেষ্টা করেছিল চেন্নাই। সফলও হয় তারা।
ধোনি ব্যাট করতে নামেন শেষ ওভারে। জাদেজা সেই ওভারের প্রথম বলে আউট হওয়ার পর ব্যাট করতে নামেন তিনি। মাত্র চার বল খেলার সুযোগ পান। সেটাই কাজে লাগান ধোনি। দলের রান ২০০ পারই হতো না ধোনি ছক্কা না মারলে। যদিও তিনি রান করায় কনওয়ে অপরাজিত হয়ে থেকে গেলেও শতরান করতে পারলেন না।