ধোনি, কোহলি, রোহিত আমার ছেলের ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছে, দাবি স্যামসনের বাবার
ভারতের ক্রিকেটে বেশ কিছুদিন হলো আলোচিত নাম সঞ্জু স্যামসন। গত মাসে হায়দরাবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ টি–টোয়েন্টিতে ৪০ বলে সেঞ্চুরির পর এ মাসে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে ৪৭ বলে সেঞ্চুরি করেছেন স্যামসন। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ইতিহাসে টানা দুটি সেঞ্চুরি করা চতুর্থ ও ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান তিনি।
অথচ এই স্যামসনই বছরের পর বছর ভারতীয় দলে উপেক্ষিত ছিলেন। ৩০ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান ২০১১ সাল থেকে পেশাদার ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন। ভারতীয় দলে অভিষেক হয় ২০১৫ সালে, জিম্বাবুয়ে সফরে টি–টোয়েন্টি দিয়ে। এরপর দেশের হয়ে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলতে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর।
তাঁর এখনো টেস্ট অভিষেক হয়নি। ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি মিলে খেলার সুযোগ হয়েছে ৫১ ম্যাচে। ঘরোয়া ক্রিকেটে, বিশেষ করে আইপিএলে নিয়মিত পারফর্ম করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁকে ভারতের দ্বিতীয় সারির দলে রাখা হতো, যে দলে একাধিক শীর্ষ তারকা, এমনকি প্রধান কোচকেও বিশ্রাম দেওয়া হতো।
সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও স্যামসন এতগুলো বছর কেন ভারতীয় দলে নিয়মিত জায়গা পাননি? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তাঁর বাবা স্যামসন বিশ্বনাথ। তিনি সরাসরি ভারতের তিন তারকা অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান কোচকে দায়ী করেছেন।
মালয়ালম ভাষার টিভি চ্যানেল ‘মিডিয়া ওয়ান টিভি’কে বিশ্বনাথ বলেছেন, ‘তিন-চার জন মানুষ আছে, যারা আমার ছেলের ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ১০ বছর নষ্ট করেছে। ধোনি, বিরাট (কোহলি) ও রোহিতের মতো অধিনায়ক এবং কোচ (রাহুল) দ্রাবিড়—এই চারজন আমার ছেলের জীবন ধ্বংস করেছে। কিন্তু তারা সঞ্জুর (স্যামসন) যত বেশি ক্ষতি করেছে, সে আরও শক্তিশালী হয়ে সংকট থেকে বেরিয়ে এসেছে।’
সঞ্জু স্যামসনের বাবার দাবি একেবারে ভিত্তিহীনও নয়। ৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে স্যামসন এখন পর্যন্ত যে ৫১টি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন, এর ৪০টিতেই ধোনি, কোহলি কিংবা রোহিত অধিনায়ক ছিলেন না। রাহুল দ্রাবিড় কোচ থাকাকালেও স্যামসন খুব বেশি ম্যাচে সুযোগ পাননি। বরং ভিভিএস লক্ষ্মণকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচের দায়িত্ব দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) যখন দল ঘোষণা করে, তখনই একাদশে বেশি সুযোগ পেয়েছেন স্যামসন।
ধোনির নেতৃত্বে কখনোই ভারতীয় দলের একাদশে জায়গা হয়নি স্যামসনের। এ ক্ষেত্রে একটা বড় কারণ হতে পারে, ধোনি–স্যামসন দুজনই উইকেটকিপার। তা ছাড়া আউটফিল্ডে স্যামসনের ফিল্ডিং করার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। তাই ধোনির সময়ে স্যামসনকে স্কোয়াডে রাখা হলেও একাদশে জায়গা হতো না।
ধোনির পর ভারতের অধিনায়ক হন কোহলি। তাঁর নেতৃত্বে পাঁচটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন স্যামসন। আর বর্তমান টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক রোহিতের নেতৃত্বে খেলেছেন ছয় ম্যাচ। সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও স্যামসনকে রিজার্ভ দলে রেখেছিলেন রোহিত–দ্রাবিড়।
সেই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে এই সংস্করণকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন রোহিত। চুক্তির মেয়াদ শেষে দায়িত্ব ছেড়েছেন দ্রাবিড়ও। এর পর থেকে নতুন টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর ওপেনার হিসেবে স্যামসনের ওপর আস্থা রেখে চলেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ভিভিএস লক্ষ্মণের আস্থা তো আগে থেকেই ছিল।
নিজের পছন্দের ব্যাটিং পজিশনে সুযোগ পেয়ে আস্থার প্রতিদানও দিয়ে চলেছেন স্যামসন। ভারতের হয়ে তাঁর তিন সেঞ্চুরির তিনটিই এসেছে গত ১১ মাসে টপ অর্ডারে নেমে। ২০১৫ সালে অভিষেক থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ভারতের হয়ে স্যামসনের ব্যাটিং গড় ছিল ২৯.৩৮। তবে গত বছরের নভেম্বর থেকে এ বছরের নভেম্বর অর্থাৎ গত এক বছরে তাঁর ব্যাটিং গড় বেড়ে হয়েছে ৪০.৬৩। ১২ মৌসুম আইপিএল খেলে এ বছরই সবচেয়ে বেশি রান (৫৩১) করেছেন তিনি।
আজ রাতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টি–টোয়েন্টিতে খেলতে নামছেন স্যামসন। ৪ ম্যাচের সিরিজে এখন ১–১ সমতা।