রোহিতের অধিনায়কত্বে ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে ভারত
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়কত্ব করবেন রোহিত শর্মা। রাজকোটে গতকাল একটি অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমকে এ কথা বলেছেন ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সেক্রেটারি জয় শাহ। ১ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে শুরু হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
রোহিত এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়কত্ব করবেন। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর অধিনায়কত্বে সেমিফাইনালে উঠেছিল ভারত। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সেবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের কাছে হারতে হয় ভারতকে। ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর সেই হারের পর গত বছর এই সংস্করণে একটি ম্যাচও খেলেননি রোহিত। গত জানুয়ারিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতের অধিনায়কত্ব করেন। তখনই অনেকে বুঝে নিয়েছিলেন, এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভারতের অধিনায়কত্ব থাকবে রোহিতের হাতেই। জয় শাহ সেটাই নিশ্চিত করলেন।
সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের নাম পাল্টে নিরঞ্জন শাহ স্টেডিয়াম রাখার অনুষ্ঠানে জয় শাহ বলেছেন, ‘প্রায় এক বছর পর সে (রোহিত) আফগানিস্তান সিরিজে অধিনায়কত্বে ফিরেছে। এর অর্থ হলো সে অবশ্যই নেতৃত্ব দেবে (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে)।’
রোহিতের অধিনায়কত্বে গত বছর ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছে ভারত। এর কয়েক দিন পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতের অধিনায়কত্ব করেন সূর্যকুমার যাদব। গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ভারতের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এর পাশাপাশি আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসও জানিয়েছিল, রোহিতের জায়গায় তাদের অধিনায়কত্ব করবেন হার্দিক পান্ডিয়া। গত জানুয়ারিতে আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে এই সংস্করণে ফিরে প্রথম দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর তৃতীয় ম্যাচে ১২১ রান করেছিলেন রোহিত। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেটা ছিল প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৫ শতকের রেকর্ড।
ক্রিকইনফো জানিয়েছে, জয় শাহ বলেছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের নেতৃত্ব রোহিতের হাতে থাকলেও এ সংস্করণে দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়ক হিসেবে হার্দিক পাণ্ডিয়াই প্রাথমিক পছন্দ। গত বছর একাধিক টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতের অধিনায়কত্ব করেছেন এই অলরাউন্ডার। শাহ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রয়োজনের খাতিরেই রোহিতকে এই সংস্করণে অধিনায়ক হিসেবে ফেরানো হয়েছে। কারণ, গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে চোট পেয়েছিলেন হার্দিক, ‘টি-টোয়েন্টিতে নিশ্চিতভাবেই হার্দিক অধিনায়ক হবে (ভবিষ্যতে)।’
বিসিসিআইয়ের এই সেক্রেটারি বলেছেন, ‘আমরা জানি রোহিতের সামর্থ্য আছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপেই সে তা দেখিয়েছে, আমরা টানা ১০ ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছিলাম। রোহিতের অধিনায়কত্বে বার্বাডোজে ভারতের ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।’
কোহলি কি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবেন?
রোহিতের মতো বিরাট কোহলিও এক বছরের বেশি সময় পর এ বছর জানুয়ারিতে আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ফেরেন। তাঁকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখা যাবে কি না, এ বিষয়ে জয় শাহর কাছে জানতে চেয়েছিল সংবাদমাধ্যম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তার ব্যাপারে দ্রুতই কথা বলব।’
ব্যক্তিগত কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলেননি কোহলি। পরের দুই ম্যাচে খেলেছেন। এরপর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেন কোহলি। জয় শাহ কোহলিকে নিয়ে বলেছেন, ‘১৫ বছরের ক্যারিয়ারে কেউ যদি প্রথমবারের মতো ব্যক্তিগত কারণে ছুটি চায়, তবে সেই অধিকার তার আছে। বিরাট কোনো কারণ ছাড়াই ছুটি চাওয়ার মতো খেলোয়াড় না। আমাদের উচিত নিজেদের খেলোয়াড়ের ওপর আস্থা রাখা ও সমর্থন দেওয়া।’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে ভারত কি পাকিস্তানে যাবে?
২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক দেশ পাকিস্তান। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত হবে এই টুর্নামেন্ট। ভারত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে পাকিস্তানে যাবে কি না, সে ব্যাপারেও জানতে চাওয়া হয়েছিল জয় শাহর কাছে। তিনি জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত নেবে ভারত সরকার, ‘সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে (পাকিস্তানে খেলতে যাওয়ার ব্যাপারে) ভারতের অবস্থান।’ রাজনৈতিকভাবে বৈরী সম্পর্ক রয়েছে এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে। ভারত কোনো সিরিজ খেলতে সর্বশেষ পাকিস্তানে গিয়েছে ২০০৮ এশিয়া কাপে।
চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা বাধ্যতামূলক:
বিসিসিআই সেক্রেটারি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের পাশাপাশি নির্বাচকদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ক্রিকেটারদের ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেলতে হবে। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকারকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ঈশান কিষান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দল থেকে বাদ পড়লেও রঞ্জি ট্রফিতে খেলছেন না। তাঁকে নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে আলোচনা-সমালোচনা শুরুর পর এ ব্যাপারে জয় শাহর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল।
জয় শাহ এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘আমি আগামীকাল একটি চিঠি লিখব। যদি প্রধান নির্বাচক, কোচ কিংবা অধিনায়ক মনে করেন কাউকে লাল বলের ক্রিকেটে খেলতে হবে, তবে সেটা বাধ্যতামূলক। আমরা খেলোয়াড়দের ফিটনেসের ব্যাপারে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির মেডিকেল স্টাফদের পরামর্শ গ্রহণ করব। ফিট থাকলে কোনো অজুহাত চলবে না। কেন্দ্রীয়ভাবে চুক্তিবদ্ধ সব খেলোয়াড়ের ওপরই এটা কার্যকর হবে। তাদের খেলতেই হবে। খেলোয়াড়েরা নিজেদের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে পারে না, সেটা নির্বাচকদের দায়িত্ব।’