একা নিগারের লড়াই, অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় হার বাংলাদেশের

ফিফটি করেছেন নিগার সুলতানা, তবে লড়াই করতে পারেননি আর কেউআইসিসি

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হারা ম্যাচে দুই ইনিংসেই কোনো না কোনো পর্যায়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের কাছে। তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ঠিক তেমন কিছু করতে পারল না তারা। লড়াই যা করার, ব্যাটিংয়ে একাই করলেন নিগার সুলতানা। তাঁর ৫০ বলে ৫৭ রানের পরও ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১০৭ রানের বেশি তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। পরে অধিনায়ক মেগ ল্যানিংয়ের ৪৯ বলে ৪৮ রানের সঙ্গে অ্যালিসা হিলির ৩৬ বলে ৩৭ রানের ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ১০ বল ও ৮ উইকেট বাকি থাকতেই। কেপটাউনের পর কেবেহায় হার—দুই ম্যাচ পর এবারের আসরেও তাই এখন পর্যন্ত জয়শূন্যই থাকল বাংলাদেশ।

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এর আগে একবারই এ সংস্করণে দেখা হয়েছিল বাংলাদেশের। ২০২০ সালের বিশ্বকাপের সে ম্যাচেও হারতে হয়েছিল বড় ব্যবধানে। অস্ট্রেলিয়ার এ দলের বিপক্ষে শক্তিমত্তায় বেশ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের ম্যাচেও যেন ফুটে উঠল সে চিত্রটাই। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ইনিংস খুব সহজেই দুটি ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে নিগার, অন্যটিতে বাকি সবাই। দলের ৫৩.২৭ শতাংশ রান অধিনায়ক করেছেন একাই, একাই মেরেছেন সাতটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা। বাকি ব্যাটাররা সবাই মিলে মারেন মাত্র চারটি চার।

চতুর্থ ওভারের মধ্যেই ডার্সি ব্রাউনের বলে ফেরেন দুই ওপেনার শামীমা সুলতানা ও মুর্শিদা খাতুন, দলের রান তখন মাত্র ১১। এরপর সোবহানা মোস্তারির সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ২৫ বলে ৩১ রানের পর চতুর্থ উইকেটে স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে নিগার যোগ করেন ৫৩ বলে ৪৪ রান। এ দুটি জুটিতে নিগারের সঙ্গিনীদের অবদান ছিল সব মিলিয়ে ১৮ রান। জর্জিয়া ওয়ারেহামের হাফ ট্র্যাকারেই মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে ফেরেন সোবহানা, ১৭ বলে মাত্র ৭ রান করে।

বাংলাদেশ ইনিংসে এমন দৃশ্য ছিল নিয়মিত
আইসিসি

সোবহানার মতো স্বর্ণার সঙ্গেও নিগারের জুটি ছিল বৈপরীত্যে ভরা। একদিকে নিগার রান করছেন, সুযোগ পেলেই মারছেন বাউন্ডারি। অন্যদিকে স্বর্ণা ভুগছেন স্ট্রাইক বদলাতেই। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা প্রথম ২৩ বলে করেন মাত্র ৭ রান। এরপরই অ্যাশলেই গার্ডনারকে লং অন ও লং অফের মাঝ দিয়ে চার মেরে খোলস ছেড়ে বেরোনোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে পরের ওভারে লেগ স্পিনার ওয়ারেহামের গুডলেংথের বলে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ২৭ বলে ১২ রান করে। নেমে প্রথম বলে চার মারার পর ওই ওভারেই বোল্ড হন রুমানা আহমেদও।

নিগার এর আগেই পান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ফিফটি, সেটি পূর্ণ করেন ৪১ বলে। ১৯তম ওভারের শেষে গিয়ে গার্ডনারকে তুলে মারতে গিয়ে টপ-এজড হয়ে ক্যাচ দেন। নিগারের ৫৭ রানের আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল রুমানার, ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি করেছিলেন ৪১ রান। নিগার ফেরার পর ৭ বলে বাংলাদেশ যোগ করে ৮ রান। শেষ ৪ ওভারে ২৭ রান তুলতে তারা হারায় ৪টি উইকেট।

অস্ট্রেলিয়ার রানতাড়ায় মারুফা প্রথম থেকেই সমস্যায় ফেলছিলেন ওপেনারদের। তৃতীয় ওভারে প্রথম আঘাত করেন তিনি, অফ স্টাম্পের বাইরে ফুললেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে একমাত্র স্লিপে ক্যাচ দেন বেথ মুনি। সে ওভারেই স্লিপে ক্যাচ তুলেছিলেন মেগ ল্যানিং-ও, তবে সেটি পড়ে স্লিপের আগেই।

বেথ মুনির উইকেট নেওয়ার পর মারুফার উল্লাস
আইসিসি

২ ওভার করানোর পর মারুফাকে সরিয়ে নেন নিগার। বাকিদের ওপর চড়াও হন অ্যালিসা হিলি। পাওয়ারপ্লেতে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৪৫ রান। ২৫ রানে দাঁড়িয়ে ফাহিমা খাতুনের বলে আরেকবার ক্যাচ তোলেন হিলি, ওয়াইড লং অফে দারুণ প্রচেষ্টাতেও সেটি নিতে পারেননি মারুফা। পরে ফাহিমা একবার হিলির ফিরতি ক্যাচ নিয়েছেন ভেবে উদ্‌যাপনও করেন, আদতে সেটি ছিল বাম্প বল। এর মাঝেই ল্যানিংয়ের সঙ্গে হিলির জুটি ফিফটি পেরোয়।

শেষ পর্যন্ত হিলিকে ফেরান স্বর্ণা, এক্সট্রা কাভারে নিগারের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়া ওপেনার করেন ৩৬ বলে ৩৭ রান, ল্যানিংয়ের সঙ্গে তাঁর জুটি ৬৯ রানের। ১৫তম ওভারে অবশেষে মারুফাকে ফেরান নিগার, তবে খুব একটা পার্থক্য গড়তে পারেননি। ২০ বলে ১৯ রান করা গার্ডনারকে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেই ফেরেন ল্যানিং।