২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

‘পাকিস্তানে কোনো টেস্ট ম্যাচের বোলার নেই’

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে হারের পর অভিযোগের তির উঠেছে পাকিস্তানের পেসারদের প্রতিএএফপি

রশিদ লতিফের লেখা কলামের দুটি লাইনের বাংলা অর্থ, ‘আমাদের ফাস্ট বোলাররা শুধু সাদা বলের ক্রিকেটে কার্যকর। পাকিস্তানে কোনো টেস্ট ম্যাচের বোলার নেই।’

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে গত রোববার বাংলাদেশের কাছে ১০ উইকেটে হেরেছে পাকিস্তান। স্বাভাবিকভাবেই এই হারের পর পাকিস্তান ক্রিকেট দল ও দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন সাবেকরা। সেই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ক্রিকবাজ’ এ কলাম লিখেছেন পাকিস্তানের সাবেক উইকেটকিপার রশিদ লতিফ। সেখানে পাকিস্তান দলে টেস্ট ম্যাচের বোলার নেই দাবি করে ৫৫ বছর বয়সী সাবেক এই ক্রিকেটার বর্তমান দলের পেসারদেরও ধুয়ে দিয়েছেন। লতিফের দাবি, শাহিন আফ্রিদি–নাসিম শাহরা টেস্ট ম্যাচে ৩০ ওভার বোলিং করার সামর্থ্যও রাখেন না।

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের স্কোরকার্ডে তাকানো যাক। চোট কাটিয়ে এই ম্যাচ দিয়ে ১৩ মাস পর লাল বলের ক্রিকেটে ফেরা নাসিম শাহ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ২৭.৩ ওভার বোলিং করে ৩ উইকেট নেন। আরেক তারকা পেসার শাহিন আফ্রিদি ৩০ ওভার বোলিং করে নেন ২ উইকেট।

রাওয়ালপিন্ডিতে নামার আগে মাত্র এক টেস্টের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ২৪ বছর বয়সী পেসার খুররম শেহজাদও প্রায় ৩০ ওভার বোলিং করেছেন (২৯ ওভারে ২ উইকেট)। চার পেসারের মধ্যে শেষজন মোহাম্মদ আলী ৩১ ওভারের নেন ২ উইকেট। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ যেহেতু ৬.৩ ওভারের মধ্যেই জয় তুলে নিয়েছে, তাই এই ইনিংসের বোলিং বিশ্লেষণ কোনো কাজে আসবে না। তবে এই ইনিংসে নাসিমের ৩ ওভার হিসাবে নিলে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে নাসিমের বোলিং বিশ্লেষণে ওভারসংখ্যা ৩০.৩ ওভার।

শাহিন আফ্রিদিদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রশিদ লতিফ
এএফপি

অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে (১৬৭.৩ ওভার) পাকিস্তানের চার পেসারের বোলিং বিশ্লেষণ লতিফের দাবির বেশ বিপরীত। কিন্তু কলামে তিনি লিখেছেন, ‘টেস্ট ম্যাচে তারা ৩০ ওভার বোলিংও করতে পারে না। এমন বোলিং নিয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলা সম্ভব না।’

লতিফের এই মন্তব্যে একটি কথা তাৎপর্যপূর্ণ—‘এমন বোলিং নিয়ে’। এটুকুতে বোঝা যায়, সমস্যাটা সম্ভবত ৩০ ওভার বোলিং করা নিয়ে নয়, বরং এ সময়ে কার্যকর হতে না পারায় অর্থাৎ প্রয়োজনের সময় উইকেট এনে দিতে না পারায় ‘টেস্ট ক্রিকেট খেলা সম্ভব না’ মন্তব্যটি করেছেন লতিফ।

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তান যেহেতু কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনার রাখেনি তাই দলকে ম্যাচে ফেরানোর দায়িত্বটা পেসারদের ওপরই ছিল। টেস্ট শুরুর আগে পেসবান্ধব উইকেট ভেবে পেসারসর্বস্ব বোলিং আক্রমণ সাজিয়েছিল পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু টেস্টের তৃতীয় দিন শেষেই পাকিস্তানের সহকারী কোচ আজহার মেহমুদ বলেছেন, ‘যেমন চেয়েছিলাম, পিচ তেমন আচরণ করছে না। এ নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।’

কিন্তু ওয়াসিম আকরাম–ওয়াকার ইউনিস–শোয়েব আখতারদের সময়ে ক্রিকেট খেলা লতিফ রাওয়ালপিন্ডিতে হারের পেছনে অন্য কারণও দেখছেন। পাকিস্তানের সেরা পেসারদের মধ্যে আগের সেই ভয় ধরিয়ে দেওয়া গতি আর দেখেন না ৩৭ টেস্ট ও ১৬৬ ওয়ানডে খেলা লতিফ, ‘বিশ্ব জানত পেসই আমাদের শক্তি। কিন্তু আমাদের শীর্ষ ফাস্ট বোলাররা আর ভয় ধরিয়ে দেওয়া গতিতে বোলিং করে না। গতকালের (রোববার) হারের এটাই মূল কারণ। তাদের গতি পড়ে গেছে। চোট থাকলে তাদের সেটা বলা উচিত। শাহিন, নাসিম ও খুররম ১৪৫ কিমি গতিতে (ম্যাচ) শুরু করেছে। কিন্তু সবারই গতি নেমেছে ১৩০ এ (কিমি)।’

পাকিস্তানের সাবেক উইকেটকিপার রশিদ লতিফ
এএফপি

লতিফ এ জন্য দুষেছেন পাকিস্তান দলের ট্রেইনার ও ফিজিওদের। তাঁর যুক্তি, জফরা আর্চার, যশপ্রীত বুমরা ও প্যাট কামিন্স চোটের কারণে দীর্ঘদিন পর খেলায় ফিরে এতটুকু গতিও হারাননি। তাহলে নাসিম–শাহিনদের ক্ষেত্রে এমন হবে কেন? লতিফ সে কথাটাই বলেছেন এভাবে, ‘আমাদের বোলারদের গতি কেন কমছে? অবশ্যই আমাদের সাপোর্ট স্টাফ ঠিকমতো কাজ করছে না। ১৪৪ কিলোমিটার গতির বোলার ১২৮ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।’

রাওয়ালপিন্ডির উইকেট কেন পাকিস্তান দলের প্রত্যাশানুযায়ী আচরণ করেনি, কলামে সেই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন লতিফ, ‘এখন আগস্ট চলছে। আবহাওয়া শুকনা। আগস্টে খেললে স্পিনার লাগে। কিন্তু আমাদের ভালো মানের স্পিনার নেই। কোনো স্পিনার ছাড়াই আমরা টেস্টে নেমেছি। (ম্যাচের আগে) বৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু সেটা গরমের কারণে, কন্ডিশনও শুকনা ছিল। এমন গরম কন্ডিশনে সবুজ উইকেট কাজে লাগে না।’

কন্ডিশনের প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের বোলারদের প্রশংসাও করেছেন ৫৫ বছর বয়সী লতিফ, ‘বাংলাদেশ ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে...আমাদের বোলাররা বেশি খাটো লেংথে বোলিং করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের (বোলারদের) ফুল লেংথ বোলিংয়ে নজর ছিল। এটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের মতো দুজন যোগ্য স্পিনারও আছে তাদের। ব্যক্তিগতভাবে আমি হলে তাইজুল ইসলামকেও অন্তর্ভুক্ত করতাম।’

কলামের শেষটা করেছেন লতিফ এভাবে, ‘বাংলাদেশ কন্ডিশন ভালোভাবে বুঝে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করেছে। তারা পাকিস্তানি বোলারদের জরাজীর্ণ বানিয়ে তারপর সুবিধা তুলে নিয়েছে।’