ওপেনিংয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত আসলেই কি রোহিতের টেস্ট ক্যারিয়ার বাঁচিয়ে দিয়েছে
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আড়াই দিনেই নাগপুর টেস্ট জিতে বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে ভারত। যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ে অসহায় আত্মসমর্পণের পর স্টিভেন স্মিথ–ডেভিড ওয়ার্নাররা যতটা সমালোচিত হচ্ছেন, ঠিক ততটাই প্রশংসিত হচ্ছেন রোহিত শর্মা–রবীন্দ্র জাদেজারা।
ফিরেই অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন জাদেজা। রোহিত দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি করেছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। একমাত্র ইনিংসে ১৫ চার ও ২ ছক্কায় ১২০ রান করেছেন তিনি। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় অধিনায়কের সেই রানটুকুই করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। স্বাগতিকদের ঘূর্ণি–ফাঁদে মাত্র ৯১ রানে গুটিয়ে গেছে তারা।
নাগপুর টেস্ট নিয়ে ভারতীয় দৈনিক মিড–ডেতে নিজের অভিমত জানিয়েছেন ইয়ান চ্যাপেল। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই অধিনায়ক গত বছর বর্ণাঢ্য ধারাভাষ্য ক্যারিয়ারকে বিদায় জানালেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখে যাচ্ছেন। মিড–ডেতে লেখা কলামেও ক্ষুরধার বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতে, মিডল অর্ডার ছেড়ে ওপেনিংয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই রোহিতের টেস্ট ক্যারিয়ার বাঁচিয়ে দিয়েছে।
৭৯ বছর বয়সী চ্যাপেল লিখেছেন, ‘নিচে ব্যাটিং করতে নেমে রোহিত ওর অসাধারণ দক্ষতাকে নষ্ট করে ফেলছিল। ওপেনিংয়ে উঠে আসা ওর টেস্ট ক্যারিয়ার বাঁচিয়ে দিয়েছে। শুধু তা–ই নয়, এই সিদ্ধান্ত ওকে বিরাট কোহলির জনপ্রিয়তার কাছে ঢাকা পড়তে দেয়নি।’
চ্যাপেলের কলামে রোহিতের নেতৃত্বগুণেরও মুগ্ধতা ঝরেছে, ‘টেস্টে রোহিতের পুনরুত্থানের পেছনে অধিনায়কত্বেরও বড় ভূমিকা আছে। দলকে নেতৃত্ব দিতে যে ধরনের শৃঙ্খলা দরকার, সবকিছুই ওর মধ্যে আছে। এটা ওর ব্যাটিংকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।’
নাগপুরের যে পিচে স্মিথ–ওয়ার্নার–লাবুশেনের মতো শীর্ষ সারির ব্যাটসম্যানদের হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে, সেই পিচেই সাবলীল ব্যাটিং করেছেন রোহিত। চ্যাপেল মনে করেন, রোহিত খুব ভালোভাবে উইকেট বুঝতে পেরেছেন ও নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন বলেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন, ‘রোহিত পিচের অবস্থা বুঝে খেলেছে। নিপুণ ইনিংসের প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, নিজের প্রতি ওর অগাধ আত্মবিশ্বাস জন্মেছে। টার্নিং, তবে খেলার অযোগ্য নয়—এমন উইকেটে সে লৌহমানবের মতো দাঁড়িয়ে গেছে। প্রশস্ত পরিসরের শটগুলো অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের হতাশা উপহার দিয়েছে। সে দেখিয়েছে ভারতের পিচগুলোতে কীভাবে খেলতে হয়।’
ভারতের মাটিতে এখন পর্যন্ত ৪ বার টেস্ট সিরিজ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, সর্বশেষ ২০০৪ সালে। তবে ১৯৬৯ সালে সবচেয়ে দাপট দেখিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সিরিজ জিতেছিল ৩–১ ব্যবধানে। ওই সিরিজে দলের অপরিহার্য অংশ ছিলেন চ্যাপেল। ১৯৮০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলা সাবেক এই ব্যাটসম্যান এরপর ৪৫ বছর মাইক্রোফোন হাতে অজস্র ম্যাচে ধারাভাষ্য দিয়েছেন। তাঁর মাপের বিশ্লেষক খুব কমই পেয়েছে বিশ্ব ক্রিকেট। সেই চ্যাপেল যখন রোহিতকে নিয়ে এত বড় মন্তব্য করেছেন, তখন সেটা পরিসংখ্যান দিয়ে যাচাই করতেই হয়।
চ্যাপেল তাঁর কলামে লিখেছেন, ওপেনিংয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত রোহিতের টেস্ট ক্যারিয়ার বাঁচিয়ে দিয়েছে। পরিসংখ্যানও সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের কথায় সায় দিচ্ছে। ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টির মতো টেস্টেও ওপেনিংয়ে উঠে আসার পর রোহিতের ক্যারিয়ার আক্ষরিক অর্থেই আরও সমৃদ্ধ হয়েছে।
২০১৩ সালের নভেম্বরে শচীন টেন্ডুলকারের বিদায়ী সিরিজে টেস্ট অভিষেক হয় রোহিতের। প্রথম দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পেলেও তৃতীয়টির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে চার বছর। সব কটি সেঞ্চুরি করেছেন ভারতের ৪ উইকেট পতনের পর। অভিষেক থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বক্সিং ডে টেস্ট পর্যন্ত কখনো ব্যাটিংয়ের গোড়াপত্তন করেননি তিনি। বেশির ভাগ সময় নেমেছেন পাঁচ বা ছয় নম্বরে।
২০১৩ থেকে ২০১৮—এই ছয় বছরে ২৭ ম্যাচে ৩৯.৬২ গড়ে ১৫৮৫ রান করেছেন রোহিত। সেরা ১৭৭; তাঁর অভিষেক ইনিংসে। তিন সেঞ্চুরির কথা তো আগেই লেখা হয়েছে।
সেই রোহিতই টেস্টে ব্যাট হাতে ওপেনিংয়ে নামার পর পুরোপুরি বদলে গেছেন। ২০১৯ থেকে সর্বশেষ নাগপুর টেস্ট পর্যন্ত ১৯ ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমেছেন ‘হিটম্যান’। এ সময়ে ৫৭.৬৫ গড়ে করেছেন ১৬৭২ রান। সেঞ্চুরি ছয়টি। আছে ডাবল সেঞ্চুরিও। মানে, ওপরে উঠে আসার পর থেকে ইনিংসগুলোকে লম্বা করতে শিখে গেছেন তিনি।
চ্যাপেলের কথা সত্যি না হয়ে পারে?