অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে কে এই তানভীর
তানভীর সাংহা—নামটা শুনেছেন কখনো? উত্তরটা না হলেও খুব বেশি সমস্যা নেই। ক্রিকেটের খবর খুব একটা রাখেন না তা মনে করারও কারণ নেই। কারণ, সাংহা তো এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি, ঘরোয়া ক্রিকেটেও যে খুব অভিজ্ঞ সেটাও বলা যাবে না।
এরপরও হঠাৎ তিনি কেন আলোচনায়? এই অনভিজ্ঞ সাংহা যে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে আছেন। অপেক্ষায় আছেন স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা, অ্যাস্টন অ্যাগারদের সঙ্গে ভারতের বিমান ধরার।
তানভীর সাংহা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন মাত্র আটটি (২৪ উইকেট), লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ম্যাচও খেলেছেন হাতে গোনা মাত্র পাঁচটি (৭ উইকেট)। রমরমা টি-টোয়েন্টির বাজারেও এই সংস্করণে সব মিলিয়ে খেলেছেন ২৮টি (৩৭ উইকেট) ম্যাচ।
চোটের কারণে তো গত বছরের আগস্টের পর কোনো পেশাদার ক্রিকেটও খেলেননি। এরপরও নিউ সাউথ ওয়েলসের এই লেগ স্পিনারের ওপর কেন ভরসা রাখল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, সে উত্তর অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলির মুখেই শুনুন, ‘যখন সে ফিট ছিল, সে সময় বিগ ব্যাশে তাঁর ফর্ম আমাদের মুগ্ধ করেছে। তাঁর সম্পর্কে যে কথাটা সবচেয়ে প্রচলিত, সেটা হচ্ছে মাঠে সে অনেক পরিপক্ব।’
বিগ ব্যাশের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই মূলত নির্বাচকদের নজরে এনেছে সাংহাকে। ২০২০-২১ মৌসুমে সিডনি থান্ডারের হয়ে ২১ উইকেট নেওয়ার পরের মৌসুমেই নিয়েছিলেন ১৬ উইকেট। বিগ ব্যাশে খেলার সময়েই আন্দ্রে রাসেলের মতো তারকার কাছ থেকে প্রশংসাও পেয়েছিলেন।
এই স্পিনার সম্পর্কে রাসেল বলেছিলেন, ‘তানভীর বেশ ভালো করছে। সে আমার শরীর লক্ষ্য করে গতির তারতম্যে বল করছিল। ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’ এর আগে ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে এই স্পিনার শিকার করেছিলেন ১৫ উইকেট।
লেগ স্পিনার হিসেবে নজরে আসা সাংহার ক্যারিয়ারের শুরু অবশ্য একজন পেসার হিসেবে। তবে ১৪ বছর বয়সে লেগ স্পিনের প্রতি ঝোঁক আসে তাঁর। ২১ বছর বয়সী সাংহার আইডল যিনি, তাঁরও বোধ হয় একটু পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন আছে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩ ওয়ানডে ও ২ টি-টোয়েন্টি খেলা লেগ স্পিনার ফাওয়াদ আহমেদকেই আদর্শ মানেন সাংহা। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ফাওয়াদই বিগ ব্যাশের একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে তাঁকে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
নামটা শুনেই কিছুটা আন্দাজ করা যায়, নিউ সাউথ ওয়েলসের এই স্পিনার ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাঁর পূর্বপুরুষের বাড়ি পাঞ্জাবের রহিমপুরে। নব্বইয়ের দশকে সাংহার বাবা উন্নত জীবনের আশায় অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। প্রথমে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলেও পরে সিডনিতে ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাজ করেন সাংহার বাবা। পরিবারের সঙ্গে সাংহাও বেশ কয়েকবারই ভারতে বেড়াতে গেছেন। পারিবারিকভাবে কিংবা জন্মসূত্রে ভারতে শেকড় রয়েছে এমন চতুর্থ অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার সাংহা। প্রথম তিনজন গুরিন্দার সান্ধু, স্টুয়ার্ট ক্লার্ক, ব্রান্সবি কুপার।
এই তিন ক্রিকেটারের মধ্যে স্টুয়ার্ট ক্লার্কই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বাবা-মার সন্তান ক্লার্ক অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৪টি টেস্ট, ৩৯টি ওয়ানডে ও ৯টি টি -টোয়েন্টি খেলেছেন। ব্রান্সবি কুপারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঢাকার নাম। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা কুপারের জন্ম ১৮৪৪ সালে ঢাকায়। ওই একটি টেস্টই খেলেছেন এই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান। পেসার সান্ধু ২০১৫ সালে দুটি ওয়ানডে খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের আগে বিশ্বকাপের জন্য চূড়ান্ত দল ঘোষণা করতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। সেই চূড়ান্ত দলে সাংহা থাকবেন কি না, কে জানে। বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫ ম্যাচের ও ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে অস্ট্রেলিয়া। সেই দলে আছেন সাংহা। নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে ২১ বছর বয়সী এই স্পিনারকে বাবার জন্মভূমিতে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে দেখা যেতেই পারে।