বিশ্ব ক্রিকেটে সোনালি সময় অনেক আগেই পার করে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গর্ব করার মতো যা একটু ছিল টি–টোয়েন্টি।
এক দশকের বেশি সময় মারকাটারি ক্রিকেট আঁকড়ে ধরে বেঁচে ছিল ক্যারিবীয়রা। গ্যারি সোবার্স, ক্লাইভ লয়েড, ভিভিয়ান রিচার্ডস, ব্রায়ান লারাদের উত্তরসূরিরা এখন নিঃশেষ হয়ে গেছেন, তা নয়। কিন্তু রেকর্ড দুবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা গতকাল যেভাবে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে, তাতে তাদের ক্রিকেট কিছুদিনের জন্য হলেও কি ‘লাইফ সাপোর্টে’ চলে যায়নি?
হোবার্টে আয়ারল্যান্ডের কাছে ৯ উইকেটের অসহায় আত্মসমর্পণে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পথচলা শেষ হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ক্রিস গেইল, কাইরন পোলার্ড, ডোয়াইন ব্রাভো–পরবর্তী যুগের দলটাকে ক্রিকেটবোদ্ধারা ফেবারিটের তালিকায় রাখেননি।
র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ে সরাসরি সুপার টুয়েলভে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা কোনো দলকে কজনই–বা এ তালিকায় রাখতে যাবেন। তাই বলে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের সফলতম দলটির এবারের অভিযান তিন ম্যাচ আর পাঁচ দিনেই শেষ হয়ে যাবে, সেটা কেউ কি ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিলেন?
রিকি পন্টিংও হয়তো ভাবেননি। কিন্তু বাস্তবতা ঠিকই মেনে নিতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তিকে। অস্ট্রেলিয়া–নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে আজ শুরু হয়েছে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বের লড়াই। দুই প্রতিবেশীর দ্বৈরথের আগে পন্টিংকে কথা বলতে হয়েছে টুর্নামেন্ট থেকে ক্যারিবীয়দের এত দ্রুত ঝরে পড়া নিয়ে।
অস্ট্রেলিয়ার সেই ‘মহাপরাক্রমশালী’ দলটির অধিনায়ক বলেছেন, ‘এটা অসম্মানজনক। ক্রিকেটের জন্য ব্যাপারটা মোটেও ভালো নয়। ওদের দলে প্রতিভার ছড়াছড়ি। তবু বিশ্বকাপের পরের ধাপে উঠতে না পারল না।’
ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) নির্বাচকদের প্রত্যাশা মেটাতে না পারায় দুই তারকা আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইনকে রাখা হয়নি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে। এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। তাঁদের সঙ্গে কোচ ফিল সিমন্সের চলেছে কথার তির ছোড়াছুড়ি।
অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট ধরতে না পারায় শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শিমরন হেটমায়ারও। পন্টিংয়ের মতে, উইন্ডিজ খেলোয়াড়েরা বিশ্বকাপকে সমীহ করেন না। সে কারণেই এই অধঃপতন, ‘ওদের এক মূল খেলোয়াড় বিমান ধরতে পারেনি। এটাই বলে দেয়, ওদের কাছে বিশ্বকাপ মামুলি হয়ে পড়েছে। ওরা যেভাবে খেলেছে, তাতেও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। আমরা যেমনটা দেখেছি, (নিকোলাস) পুরান ও বাকিরা তার চেয়ে অনেক ভালো খেলোয়াড়। বোঝাই যাচ্ছে, দেশে ফেরার পর ব্যর্থতার জবাবদিহি করতে হবে।’
উইন্ডিজ সমর্থকদের মতো খেলোয়াড়েরাও সমব্যথিত বলে মনে করেন ৪৭ বছর বয়সী ক্রিকেট নক্ষত্র, ‘অন্যদের মতো ওরাও খুব হতাশ। পরের ধাপে উঠতে না পারা একধরনের লাঞ্ছনা—কথাটা এখানে দাঁড়িয়ে বলা যতটা সহজ, ততটাই বেদনার। ওদের পারফরম্যান্স সামর্থ্যের ধারেকাছেও ছিল না। সবাইকে অনেক কাজ করতে হবে।’
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে আগামী মাসে আবার অস্ট্রেলিয়ায় যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে ক্যারিবীয়দের সাদা পোশাকের দলটা একদম আলাদা। স্টিভেন স্মিথ–ডেভিড ওয়ার্নারদের পয়মন্ত মাঠ পার্থ ও অ্যাডিলেডে উইন্ডিজ দল কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, তা নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন পন্টিং।
তা ছাড়া ১৯৯৭ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ক্যারিবীয়রা আর কোনো টেস্ট জিততে না পারায় আসন্ন সিরিজকেও একপেশে মনে হচ্ছে তাঁর কাছে, ‘কোনো সন্দেহ নেই (ক্রেগ) ব্রাফেট ও (জেসন) হোল্ডারের নেতৃত্বে গত কয়েক বছর ওরা ঘরের মাঠে জয়ের কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার উপায় বের করেছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার এই দলটার বিপক্ষে এখানে ভালো করতে হলে আরও উপায় খুঁজে বের করতে হবে। দুই দলের লাইনআপ কাগজে পাশাপাশি লিখে দেখেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো সম্ভাবনা নেই।’