সেই একই শারজা। সেদিন জাভেদ মিয়াঁদাদ, আজ নাসিম শাহ। সময়ের ব্যবধান ৩৬ বছরের।
ক্রিকেটের বিখ্যাত ছক্কার কথা উঠলে অবধারিতভাবে আসে চেতন শর্মার বলে মিয়াঁদাদের সেই ছক্কার গল্প। অস্ট্রেলেশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে শেষ বলে ৪ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। ইয়র্কার দিতে চেয়েছিলেন চেতন; আগে থেকে বোলারের মতিগতি অনুমান করে কিছুটা সামনে এগিয়ে ফুল টস বানিয়ে নেন মিয়াঁদাদ, এরপর সপাটে বল আছড়ে ফেলেন গ্যালারিতে।
মিয়াঁদাদের সেই ছক্কার স্মৃতি ভারত–পাকিস্তান তো বটেই, ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম অবিস্মরণীয়।
সেই একই মাঠে এবার ফজলহক ফারুকির ফুল টসকে গ্যালারিতে পাঠিয়ে পাকিস্তানকে জেতালেন নাসিম শাহ। পার্থক্য হচ্ছে প্রতিপক্ষ এবার ভারত নয়, আফগানিস্তান। নাসিমও মিয়াঁদাদের মতো ব্যাটসম্যান নন, পুরোদস্তুর বোলার।
কিন্তু ক্যারিয়ারের চতুর্থ টি–টোয়েন্টি খেলতে নামা নাসিমের এই ছয় দেখে পাকিস্তান অধিনায়কের বাবর আজমের মনে পড়ে গেছে মিয়াঁদাদের সেই বিখ্যাত ছয়ের কথা, ‘আজকে ব্যাটিংয়ে আমরা নিজেদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারিনি। তবে নাসিম ছিল অনবদ্য। আমার মাথায় ছিল এর আগেও ওকে এ রকম খেলতে দেখেছি। ওর ওপর আমার বিশ্বাস ছিল। ওই মুহূর্তে (ছয় হাঁকানোর সময়) আমার মিয়াঁদাদের সেই ছয়ের কথা মনে পড়ে গেছে।’
মিয়াদাঁদ কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া সেই ছয়টি মেরেছিলেন ১৯৮৬ সালে, নাসিমের জন্ম তারও ১৭ বছর পর—২০০৩ সালে। আদতে তাঁর আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারই শুরু হয়েছে এবারের এশিয়া কাপ দিয়ে। ২৮ আগস্ট অভিষেক ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে আউট হয়েছিলেন প্রথম বলে (ভুবনেশ্বর কুমারের বলে এলবিডব্লু)। হংকং ও ভারতের বিপক্ষে পরের দুটি ম্যাচে ব্যাটই হাতে নিতে হয়নি। নিতে হলো আজ, দলের যখন ঘোর বিপদ।
দলের দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন মাঠে নামেন, তখনো ১০ বলে ২০ রান দরকার পাকিস্তানের, ‘তখনো আসিফ (আলী) ছিলেন মাঠে। আমার কাজ ছিল সিঙ্গেল নিয়ে ওনাকে স্ট্রাইক দেওয়া। কিন্তু উনি আউট হয়ে যাওয়ার পর দায়িত্ব আমার ওপর চলে আসে।’
দায়িত্ব নিয়ে কী করেছেন তা আফগানিস্তান আর ফজলহক ফারুকি টের পেয়েছেন নিদারুণভাবে। সঙ্গী যখন ১১ নম্বরে মোহাম্মদ হাসনাইন, চ্যালেঞ্জ যখন ৬ বলে ১১ রান তোলার মতো পাহাড়সম, তখন টানা দুই বলে এগিয়ে এসে ফজলহককে লং অফ দিয়ে বাউন্ডারির ওপারে আছড়ে ফেললেন নাসিম; পাকিস্তান পেল ১ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয়, উঠে গেল এশিয়া কাপের ফাইনালেও।
নাসিম কি ভাবতে পেরেছিলেন এভাবে টানা দুই ছয় মেরে দলকে জেতাতে পারবেন?
‘বিশ্বাস ছিল আমি ছয় মারতে পারব। আমি কিন্তু নেটে ছয় মারার অনুশীলন করি। আমি জানতাম আমাকে ইয়র্কার দেওয়ার চেষ্টা করবে, ফিল্ডারও সেভাবেই রেখেছে। ওই সময় নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা দরকার ছিল। এদিকে ব্যাটও বদলে নিলাম। এটাই কাজে লেগে গেছে। এই ম্যাচ আমার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
স্মরণীয় শুধু নাসিমের জন্য নয়, এশিয়া কাপের ম্যাচটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের কাছেও।