টি-টোয়েন্টি তরুণদের ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে উঠতে দিচ্ছে না: ক্লাইভ লয়েড
টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ক্লাইভ লয়েড। ক্যারিবীয় কিংবদন্তি মনে করেন, টি-টোয়েন্টি তরুণদের ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে উঠতে দিচ্ছে না। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার বিশ্বকাপ জেতানো সাবেক এই অধিনায়ক।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘টেলিগ্রাফ’ এ নিয়ে লয়েডের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে, ‘আমি আগেও বলেছি এবং আবারও বলছি, টি-টোয়েন্টি হলো প্রদর্শনী আর টেস্ট ক্রিকেট হলো পরীক্ষা। আমাদের তরুণদের অভ্যাস হলো বল মেরে মাঠের বাইরে পাঠানো, যেন কোথাও চুক্তিবদ্ধ হতে পারে। এটা আমার অপছন্দ।’
আমি মনে করি, সবার সবকিছুর সমান ভাগ পাওয়া উচিত। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তাকান—ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কি লিভারপুলের চেয়ে বেশি পায়? আর্সেনাল কি চেলসির চেয়ে বেশি পায়? না, তারা সমান ভাগ পায়।ক্লাইভ লয়েড
অধিনায়ক হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপের (১৯৭৫, ১৯৭৯ ও ১৯৮৩) ফাইনাল খেলা লয়েড তরুণ ক্রিকেটারদের বড় করে তোলার সংস্কৃতি নিয়েও কথা বলেছেন, ‘আমি সেই সময়ে ফিরে যেতে চাই, কোথাও সফরে গিয়ে যখন তরুণদের বেড়ে ওঠার পথটাও করে দেওয়া হতো। এখন সেটি সম্ভব নয়। ইংল্যান্ড সফরে গেলে দুই ধরনের খেলা হয়—টেস্ট ও ওয়ানডে এবং তারপর সফর শেষ...তারা (তরুণ) দেশটা সম্বন্ধে কিছু শেখে না। আর এ কারণে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কিংবা ভারতে ক্রিকেট কীভাবে খেলতে হয়, সে বিষয়ে তারা কিছুই শেখার সুযোগ পায় না।’
অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন লয়েড। ৭৯ বছর বয়সী লয়েডের অধিনায়কত্বেই ক্রিকেট–বিশ্বে আশির দশকে দাপট দেখিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্ট ও ওয়ানডেতে অজেয় দল হয়ে উঠেছিল লয়েডের দল। সাবেক এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মনে করেন, বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগের দাপট শুরু হলেও টেস্ট ক্রিকেটকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই, ‘এটা (টি-টোয়েন্টি লিগ) রোমাঞ্চকর ব্যাপার। আমি চাই না এটার জন্য টেস্ট ক্রিকেট জায়গা হারাক। এটা সত্য যে এসব কারণে (ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ) ক্রিকেটারদের জীবন আরেকটু সচ্ছল হয়েছে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট এখনো গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, আমরা আরও বেশি এই সংস্করণ দেখতে পাব।’
লভ্যাংশ বণ্টনের ব্যবস্থা নিয়ে আইসিসির সমালোচনাও করেছেন লয়েড। তাঁর মতে, লভ্যাংশের সিংহভাগ ক্রিকেটের ‘বিগ থ্রি’ (ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড) নয়; সব বোর্ডের সমান অর্থ পাওয়া উচিত, ‘আমি মনে করি, সবার সবকিছুর সমান ভাগ পাওয়া উচিত। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তাকান—ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কি লিভারপুলের চেয়ে বেশি পায়? আর্সেনাল কি চেলসির চেয়ে বেশি পায়? না, তারা সমান ভাগ পায়।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদাহরণও টেনেছেন লয়েড, ‘ভুলে যাবেন না, ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমরা কিন্তু ১৪টি দ্বীপ, যেখানে অন্য দেশগুলো একটা দেশই। আমাদের ওখানে কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে প্রচুর খরচ হয়। কারণ নানা জায়গায় ভ্রমণ করতে হয়।’ এরপর লয়েড যুক্তি দেন, ‘তাই আমার মনে হয়, সবার সমান ভাগ পাওয়া উচিত। হ্যাঁ, নেতৃত্বে থাকলে হয়তো কিছু বেশি পেতে পারে...তাই বলে তিনটি দেশ মিলে বাকিদের অগ্রাহ্য করবে, সেটা অনুচিত।’
৩ জানুয়ারি শুরু হওয়া কেপটাউন টেস্টের উইকেট নিয়েও কথা বলেছেন লয়েড। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারতের মধ্যে মাত্র ৬৪২ বলে শেষ হওয়া টেস্টটি ছিল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম। আলোচিত এ পিচকে ‘অসন্তোষজনক’ বলেছে আইসিসি। একটি ডিমেরিট পয়েন্টও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লয়েড ভিন্ন যুক্তি দিলেন, ‘আমার মনে হয় না পিচে কোনো সমস্যা ছিল। কেউ (এইডেন মার্করাম) ওখানে শতক পেয়েছে, তাই আমার মনে হয়, নিজের খেলাটা কীভাবে খেলছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’
লয়েড ভারতে গিয়েছেন, আর সেখানে বিরাট কোহলির ব্যাপারে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে না, তা হয় না। স্বাভাবিকভাবেই ভারতের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে কথা বলতে হয়েছে লয়েডকে। কোহলির প্রশংসাই করেছেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি, ‘সে এখনো তরুণ। আমি নিশ্চিত যেভাবে খেলছে, সে চাইলে যেকোনো কিছুই অর্জন করতে পারে।’
কোহলির অর্জনের প্রসঙ্গটা উঠেছে একটি প্রশ্নের উত্তরে। লয়েডের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোহলি শচীন টেন্ডুলকারের ১০০ আন্তর্জাতিক শতকের রেকর্ড ভাঙতে পারবেন কি না। ৩৫ বছর বয়সী কোহলির আন্তর্জাতিক শতকসংখ্যা ৮০টি। লয়েড মনে করেন, কোহলি টেন্ডুলকারকে শতকসংখ্যায় টপকে যেতে পারলে, ‘সেই অর্জন হবে আনন্দিত হওয়ার মতোই ব্যাপার।’