৯৯৯৯: ১০ হাজার রান কত কাছে, তবু কত দূর...
এই দুঃখ স্টিভেন স্মিথ কখনো ভুলতে পারবেন?
আগামী ২৯ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুরু গল টেস্টে হয়তো প্রথম বলেই মাইলফলকটা ছুঁয়ে ফেলবেন। হবেন টেস্ট ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করা ১৫তম ব্যাটসম্যান, অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে চতুর্থ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান সিডনিতে যা মিস করলেন, সেটি কি ফিরে পাবেন?
সিডনি স্মিথের শহর। এই শহরেই ভারতের বিপক্ষে বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফির শেষ ম্যাচে দশ হাজার রানে পৌঁছানোর সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। একবার নয়, দুবার। স্মিথের ক্যারিয়ারের বড় এই মাইলফলককে স্মরণীয় করে তুলতে বিশেষ আয়োজন করেছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও (সিএ)। জড়ো করা হয়েছিল তিন সাবেক অধিনায়ককে। কিন্তু সবই মাঠে মারা গেল। সিডনিতে আজ মাত্র ৫ রান দরকার ছিল স্মিথের। কিন্তু স্মিথ আটকে গেলেন ৪ রানে। তিন দিন আগেও যে দশ হাজার রান ছিল খুব কাছে, ৯৯৯৯ রানে আটকে গিয়ে সেটি এখন কত দূরে!
স্মিথের আগে অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে ১০ হাজার রান করেছেন অ্যালান বোর্ডার, স্টিভ ওয়াহ ও রিকি পন্টিং। এই তিনজনকেই সিডনি টেস্টে স্মিথের হাতে স্মারক তুলে দিতে মাঠে থাকার অনুরোধ করেছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। অ্যালান বোর্ডার তো ম্যাচের দ্বিতীয় দিন লাঞ্চ বিরতির আগে ধারাভাষ্যের অংশ হিসেবে বাউন্ডারির পাশেও চলে গিয়েছিলেন। স্মিথ তখন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ব্যাট করছেন। ৩৮ রানে পৌঁছালেই দশ হাজার হবে স্মিথের, মাঠে থেকেই সেটি নিয়ে কথা বলবেন বোর্ডার। কিন্তু স্মিথ থমকে গেলেন ৩৩ রানে। প্রসিধ কৃষ্ণার বলে ক্যাচ দিলেন স্লিপে।
২৪ ঘণ্টা পর আজ অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে ছিল আরও সহজ সুযোগ। ৫ রান করলেই ১০ হাজার। এবারও বাউন্ডারির পাশে বোর্ডার, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাইলফলকটি ছোঁয়া প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি। স্মিথ এক এক করে চার রান নিয়েও ফেললেন। একটা রানই যখন দরকার, প্রসিধ কৃষ্ণার লাফিয়ে ওঠা বলে ক্যাচ গেল গালিতে। ৯৯৯৯ রানে স্মিথ মাঠ ছাড়লেন মাথা নাড়তে নাড়তে।
ক্রিকেটে নার্ভাস নাইনটিজ (নড়বড়ে নব্বই) বলে একটা শব্দ আছে। ১০০ রানে পৌঁছানোর আগে ৯০–এর ঘরে স্নায়ুচাপে ভোগা আর আউট হয়ে যাওয়ার এ সব ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু স্মিথের মতো ‘নড়বড়ে ৯ হাজার ৯ শ ৯০’ বিরলই বলা চলে। কারণ দশ হাজার রান তো আর মাসে মাসে দেখা যায় না, সেঞ্চুরি যেমন প্রতি ম্যাচেই এক বা একাধিক দেখা যায়।
এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে ‘নড়বড়ে ৯ হাজার ৯ শ ৯০’ দেখা গেছে চারবার। প্রথমবার ব্রায়ান লারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ হাজার থেকে ২০ রান দূরে ছিলেন। ইংলিশ অফস্পিনার অ্যাশলে জাইলসের বলে ১৩ রানে আউট হলে ৭ রান দূরে থেকে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। পরের ম্যাচ ছিল ওল্ড ট্রাফোর্ডে। এবার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের বলে আউট ০ রানে। শেষ পর্যন্ত দশ হাজার রানের অপেক্ষা ঘোচে পরের ইনিংসে।
পরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত মাহেলা জয়াবর্ধনে। ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার এই ব্যাটসম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নামেন ১৬ রান দূরে থেকে। স্মিথের মতোই জয়াবর্ধনেকে থামতে হয় ৯৯৯৯ রানে। এক দিক থেকে জয়াবর্ধনের দুঃখটা একটু বেশিও। কারণ স্মিথ ক্যাচ দিয়ে আউট হলেও জয়াবর্ধনে হয়েছিলেন রানআউট। দরকারি বাকি রানটার অপেক্ষা করতে হয়েছিল পরের ম্যাচে ডারবানের বক্সিং ডে টেস্ট পর্যন্ত।
অ্যালিস্টার কুকের অপেক্ষা ছিল আরও কম। ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চেস্টার লি–স্ট্রিট টেস্টে কুকের দরকার ছিল ১৯ রান। কুক প্রথম ইনিংসে ১৫ রান করে আউট হওয়ার তিন দিন পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ মেরে ১০ হাজার রানে পৌঁছান। স্মিথের দুঃখটা এখানেও বিশেষ।
দেখা গেছে, লারা, জয়াবর্ধনে ও কুক তিনজনই ‘নড়বড়ে ৯ হাজার ৯ শ ৯০’ রানে আটকানোর পর সেই ম্যাচেই অথবা সেই সিরিজেই অপেক্ষা ঘুচিয়েছেন। কিন্তু স্মিথ ৯৯৯৯ রানে আটকালেন সিরিজের শেষ টেস্টের শেষ ইনিংসে। অপেক্ষা এখন নতুন টেস্টের, তাও দেশের বাইরে। যেখানে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বোর্ডার–ওয়াহ ও পন্টিংকে একত্রিত করতে পারবে কি না, কে জানে!
আর সেটা যদি হয়ও, আর যা–ই হোক, স্মিথ নিজের শহরের দর্শকের সামনে তো আর মাইলফলকটা স্পর্শ করতে পারছেন না। হাজার মাইল দুরের গলে তখন কজনই বা থাকবে শুধু তাঁকে দেখার জন্য!