‘টাইমড আউট’ নাটকের ম্যাচে চিটাগংকে হারিয়ে শুরু খুলনার

ঘটনাবহুল ম্যাচে চিটাগং কিংসে সহজে হারিয়ে বিপিএল অভিযান শুরু করেছে খুলনা টাইগার্সছবি: শামসুল হক

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ‘টাইমড আউটের’ সঙ্গে জড়িয়ে সাকিব আল হাসানের নাম। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন না হলে চিটাগং কিংসের হয়ে নিশ্চয় এই ম্যাচও খেলতেন সাকিব।

শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি) থেকে অনাপত্তিপত্র পেলে প্রথম ‘টাইমড আউটের’ ভুক্তভোগী অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস হতেন চিটাগংয়ে সাকিবের সতীর্থ। সে ক্ষেত্রে ‘টাইমড আউট’ সংক্রান্ত দ্বিতীয় ঘটনার সাক্ষী হতে পারতেন সাকিব ও ম্যাথুস।

কিন্তু তা হলো না। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ‘মহানুভবতা’ দেখিয়ে তা হতে দিলেন না খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।

ব্যাটিংয়ে নামতে দেরি করায় চিটাগংয়ের টম ও’কনেলকে আউট দেন আম্পায়ার। ও’কনেলের বিরুদ্ধে আবেদনটা খুলনার অধিনায়ক মিরাজই প্রথম করেছিলেন। এ নিয়ে মাঠের আম্পায়ার তানভীর আহমেদের সঙ্গে অনেক বিতর্কও হয়। শেষ পর্যন্ত নিজের মত পরিবর্তন করে ও’কনেলকে ফিরিয়ে আনেন মিরাজ। সেই ও’কনেল আউট হন প্রথম বলেই; সেটাও মিরাজকে ক্যাচ দিয়েই!

৫ মিনিটের মহানাটকীয় এই ঘটনা যখন ঘটে, তখন ৫৬ রান তুলতেই ৬ উইকেট নেই চিটাগংয়ের। সেটা ৭৫/৮ হয়ে যায় কিছুক্ষণ পরই।  মনে হচ্ছিল চিটাগং ১০০ রানও করতে পারবে না। তবে এরপর শামীম হোসেনের একার লড়াইয়ে মান বাঁচল চিটাগংয়ের। ১১ বছর পর বিপিএলে ফেরা ফ্র্যাঞ্চাইজিটি আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারল ৩৭ রানে।

শামীম হোসেনের ঝোড়ো ৭৮ রানের ইনিংসটি বৃথা গেছে
ছবি: শামসুল হক

উইলিয়াম বোসিস্টো ও মাহিদুল ইসলামের অপরাজিত ফিফটিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা ৪ উইকেট হারিয়ে করেছিল ২০৩ রান। জবাবে শামীমের ৩৮ বলে ৭৮ রানের সৌজন্যে চিটাগং অলআউট হয় ১৬৬ রানে।

মিরাজের ‘মহানুভবতা’ ছাড়াও ম্যাচটিকে অনেক দিন মনে রাখবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। ১ বলে ১৫ রান, ক্যাচ মিসের মহড়া, এবারের আসরে প্রথমবার দলীয় সংগ্রহ ২০০ পেরোনো, বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম ফিফটি কিংবা ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে শামীমের একার লড়াইয়ে মানরক্ষা—কী ঘটেনি এই ম্যাচে!

আগে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা পাওয়ারপ্লেতে ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমের উইকেট হারায়। এরপর আরেক ওপেনার বোসিস্টোকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন মিরাজ। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন গড়েন ৫১ রানের জুটি।

দলীয় ৮৮ রানে মিরাজ আউট হয়ে যাওয়ার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি ইব্রাহিম জাদরান ও আফিফ হোসেন। তবে এই ম্যাচ দিয়ে চার বছর পর স্বীকৃতি টি–টোয়েন্টি খেলতে নামা বোসিস্টো ছিলেন অবিচল। মাহিদুলকে নিয়ে ৮৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন এই অস্ট্রেলিয়ান, যা পঞ্চম উইকেট জুটিতে খুলনার সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল মুশফিকুর রহিম ও নজিবউল্লাহ জাদরানের ৮২।

বিপিএলে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডটা এখন মাহিদুল ইসলামের
ছবি: শামসুল হক

বোসিস্টো–মাহিদুলের ব্যাটেই এবারের বিপিএলে প্রথম দল হিসেবে ২০০ পেরোয় খুলনা। বোসিস্টো ৭৫ ও মাহিদুল ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন। উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান মাহিদুল ৫০ স্পর্শ করেন ১৮ বলে, যা বিপিএলে তো বটেই; স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম ফিফটি।

চিটাগংয়ের আলিস ও খালেদ আহমেদ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। তবে আলিস ছাড়া বাকিরা ছিলেন খরুচে।

২০০ এর বেশি রান তাড়া করে জেতা যেকোনো দলের জন্য কঠিন। চিটাগং কিংসের জন্য আজ তা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সাকিব ও ম্যাথুস নেই—তা তো জানাই। মঈন আলীও এখনো চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাইজিটিতে যোগ দেননি। বোলিং–ঘাটতি পূরণের জন্য দলটি তাই আজ মাত্র ছয়জন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে নামে। এঁদের মধ্যে এক শামীম ছাড়া পাঁচজনই ব্যর্থ।

চিটাগংয়ের শুরুটা যদিও ভালোই হয়েছিল। প্রথম ৪ বলেই এসেছিল ১৮ রান, ১ বলে ১৫! অবশ্য তাতে অবদান চিটাগংয়ের ব্যাটসম্যানদের চেয়ে খুলনার বোলার ওশান টমাসেরই বেশি। ক্যারিবীয় এই পেসারের প্রথম ৬ বলের মধ্যে বৈধতা পায় মাত্র ১টি। তা থেকেই ১৫ রান আসে।

১ বলে ১৫ রান দেন ওশান টমাস
ছবি: শামসুল হক

এর মধ্যে দুইবার ‘জীবন’ পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি অভিজ্ঞ নাঈম ইসলাম। আসা–যাওয়ার মিছিলে যোগ দিয়েছেন পারভেজ হোসেন, অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন, দুই পাকিস্তানি উসমান খান ও হায়দার আলীও। চিটাগং কার্যত ১০ ওভারের মধ্যেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে।

এরপর শামীমের একার লড়াই। আলিসের সঙ্গে তিনি যোগ করেন ৭৭ রান, যা নবম উইকেট জুটিতে চিটাগংয়ের সর্বোচ্চ। ৭ চারের পাশাপাশি ৫ ছক্কা মারেন শামীম, চিটাগংয়ের কোনো ব্যাটসম্যানের এক ম্যাচে পাঁচ ছক্কা মারার ঘটনা এটাই প্রথম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ২০৩/৪
(বোসিস্টো ৭৫*, মাহিদুল ৫৯*, নাঈম ২৬; আলিস ২/১৭, খালেদ ২/৪৫)।

চিটাগং কিংস: ১৮.৫ ওভারে ১৬৬
(শামীম ৭৮, উসমান ১৮, খালেদ ১৪; আবু হায়দার ৪/৪৪, নেওয়াজ ২/১৩)।

ফল: খুলনা টাইগার্স ৩৭ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মাহিদুল ইসলাম।