২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

নেটে মাইন্ড গেমের তালিম নিলেন মাহমুদউল্লাহ

নেটে বিশেষ অনুশীলন করেছেন মাহমুদউল্লাহশামসুল হক

ফরচুন বরিশালের অনুশীলন তখন শেষের পথে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আউটারের দুটি নেটে ভিড় নেই আর। শুধু আছেন মাহমুদউল্লাহ। আর নেটের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর ব্যাটিং দেখছিলেন দলটির কোচ নাজমুল আবেদীন। ব্যাটিং না বলে হিটিং বলা ভালো। কারণ, চট্টগ্রামের অফ স্পিনার রনি চৌধুরী ও একজন থ্রোয়ারের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা করছিলেন টি-টোয়েন্টি ম্যাচের শেষ ১০ ওভারের মতো মেরে খেলার। সঙ্গে ছিল মস্তিষ্কের ব্যবহারও।

চট্টগ্রামের অফ স্পিনার রনি চৌধুরীর বলে মারার সময় মাহমুদউল্লাহকে সে মাথার খেলাটা ধরিয়ে দিচ্ছিলেন নাজমূল আবেদীন। রনির বলগুলোকে বাউন্ডারিতে আছড়ে ফেলার চেষ্টা করছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কখনো ক্রিজ থেকে, কখনো ক্রিজ থেকে বেরিয়ে ফুটওয়ার্ক করে। রনিও চ্যালেঞ্জটা ভালোই সামলে নিচ্ছিলেন। লেংথ সামনে ও পেছনে করে মাহমুদউল্লাহর পরীক্ষা নিচ্ছিলেন ভালোই।

একটি বলে মাহমুদউল্লাহকে ক্রিজ ছেড়ে বেরোতে দেখে রনি লেংথটা একটু টেনে দেন। বলের পিচে সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় টাইমিংটা ভালো হয়নি মাহমুদউল্লাহর। বল ব্যাটের এক পাশে লেগে বাতাসে নেটের যে পাশটায় আঘাত করল, সেখানে শর্ট মিড উইকেট ফিল্ডার থাকার কথা। জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে লেংথ টেনে হারানোর তৃপ্তির হাসি তখন ছয়টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা রনির মুখে।

মাহমুদউল্লাহ খুঁজছিলেন ব্যাটিং উত্কর্ষ
প্রথম আলো

দৃশ্যটা নাজমূল আবেদীনও দেখেছেন। পরের বলটি খেলার আগে মাহমুদউল্লাহকে ডেকে তিনি বললেন, ‘রিয়াদ, তুমি যে ক্রিজ থেকে বের হবে, সেটা কিন্তু সে বুঝতে পেরেছিল। সে কিন্তু তোমাকে রিড করছে। তোমাকেও তাকে রিড করতে হবে। এখানে একটা মাইন্ড গেম আছে।’ মাহমুদউল্লাহও সায় দেয় তাতে, ‘আমি যদি বুঝতে পারি সে কী করতে যাচ্ছে, তাহলে সে হয়তো আমার জোনে বল করবে।’

আরও পড়ুন

কিছুক্ষণ পর ঠিক সেটাই হচ্ছিল। মাহমুদউল্লাহ আগেই শট খেলার পজিশনে না গিয়ে রনির রিলিজ পয়েন্টটা দেখার চেষ্টা করলেন। এরপর ব্যাকফুট থেকে কিছু কাট খেললেন, কিছু ড্রাইভ। সে শটগুলোই পরে পরিণত হলো লফটেড কাভার ড্রাইভ কিংবা স্লগ সুইপে। ব্যাট আর বলের শব্দগুলোও মধুর হতে লাগল। ওপাশ থেকে তখন নাজমূল আবেদীনের কণ্ঠ ভেসে আসে, ‘দেখলে তো, এখন বোলার কিন্তু এলোমেলো বল করছে।’

রিয়াদ, তুমি যে ক্রিজ থেকে বের হবে, সেটা কিন্তু সে বুঝতে পেরেছিল। সে কিন্তু তোমাকে রিড করছে। তোমাকেও তাকে রিড করতে হবে। এখানে একটা মাইন্ড গেম আছে।
মাহমুদউল্লাহকে নেটে ফরচুন বরিশালের কোচ নাজমূল আবেদীন

মাহমুদউল্লাহ যখন নিজের ব্যাটিং ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন, তখন ফরচুন বরিশালের ক্রিকেটাররা মাঠ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পাশের নেটে তখন মাঠকর্মীরা উইকেট পরিচর্যায় ব্যস্ত। আশপাশে সবার কর্মকাণ্ডে অনুশীলন শেষের বার্তা। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ খুঁজছিলেন ব্যাটিং উত্কর্ষ।

আরও পড়ুন

থ্রোয়ারের একটি ফুল লেংথের বল যখন মাহমুদউল্লাহ সোজা মারতে পারলেন, তখনই হয়তো অনুশীলন শেষ করার মতো তৃপ্তি পেলেন । সজোরে মারা সে শটটা খেলে মাহমুদউল্লাহ নেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। নেট ছাড়ার পথে তাঁকে থামালেন নাজমূল আবেদীন। ফুল লেংথের বলটাকে চার না মেরে যে ছক্কাও মারা যেত, তিনি সেটি মনে করিয়ে দিলেন ব্যাটিং করার ভঙ্গি করে। দুজনের সেই ছোট্ট মুহূর্তটা একটাই বার্তা দেয়, উন্নতির কোনো শেষ নেই।

এবারের বিপিএলে মাহমুদউল্লাহকে খুব বেশি ব্যাটিং করতে হয়নি। বরিশালের ৪ ম্যাচের মধ্যে তিন ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন। ১টিতে প্রথম বলে আউট হলেও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ১৭ বলে ২৫ রান করেন, সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ১২ বলে ১৯ রান। ইনিংসগুলো বড় না হলেও দলের জন্য কার্যকরী ছিল। তবে নেটে তাঁকে দেখে মনে হয়েছে, আরও বড় কিছু করতে না পারলেও হয়তো সন্তুষ্ট হবেন না।