২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সুযোগটা কি কাজে লাগাতে পারবেন সাব্বির?

২০১৯ সালের সর্বশেষ বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন সাব্বির রহমানপ্রথম আলো ফাইল ছবি

১৮ বলে ৩৩ রানের সেই ইনিংসটি কি মনে আছে?

গুয়াংজুতে ২০১০ এশিয়ান গেমস ক্রিকেটের ফাইনাল। টি–টোয়েন্টি ম্যাচে প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। শেষ ৫ ওভারে যখন বাংলাদেশের দরকার ৪৪ রান, বিস্ফোরক ওই ইনিংসে ম্যাচ জিতিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন ১৯ বছর বয়সী সাব্বির রহমান। এরপর কোথাকার জল যে কোথায় গড়াল, কে জানে! স্বয়ং সাব্বিরের কাছেও হয়তো এর ব্যাখ্যা নেই।

২০১৪ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর মাঝেমধ্যে ঝলক দেখা গেছে বটে, কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই বাজে ফর্ম ও মাঠের বাইরের বিতর্কের ঘেরাটোপে বন্দী ছিলেন সাব্বির। সেই সাব্বির প্রায় তিন বছর পর ডাক পেলেন জাতীয় দলে। আজ ঘোষিত এশিয়া কাপের দলে রাখা হয়েছে একসময় বাংলাদেশের নতুন দিনের ক্রিকেটের ‘বিজ্ঞাপন’ হিসেবে বিবেচিত সাব্বিরকে।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গত মৌসুমে ৫১৫ রান করেছেন সাব্বির রহমান
প্রথম আলো ফাইল ছবি

জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লে ফেরার চাবি একটাই হওয়ার কথা—পারফরম্যান্স। সাব্বিরের ঘটনা ঠিক তা নয়। পারফরম্যান্স দিয়ে ফিরেছেন, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। সর্বশেষ স্বীকৃত ক্রিকেট খেলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের গত মৌসুমে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে। ১৫ ম্যাচে ১ শতক ও ১ অর্ধশতকসহ ৩৯.৬১ গড়ে করেছেন ৫১৫ রান। সেটিও বেশ আগে, সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন গত এপ্রিলে। তার আগে বিপিএলেও ভালো করতে পারেননি। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ৬ ম্যাচে ১০৯ রান। বাদ পড়েছিলেন একাদশ থেকেও।

এশিয়া কাপ হবে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে, আর চার মাস আগে ওয়ানডে সংস্করণে প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স দিয়ে সাব্বির নিশ্চয়ই জাতীয় দলে ডাক পাননি। আরও কিছু বিষয় এখানে ভূমিকা রেখেছে বলে আন্দাজ করে নেওয়া যায়।

বাংলাদেশ দলে চোটের মিছিল। দলে থাকলেও নুরুল হাসান এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ থেকে খেলতে পারবেন কি না ঠিক নেই। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে লিটন দাস তো ছিটকেই পড়েছেন। এই চোট–সমস্যার বাইরে দলে ছয় কিংবা সাত নম্বর পজিশনে একজন ‘পাওয়ার হিটার’–এর অভাব তো বাংলাদেশ দলের চিরন্তন আক্ষেপ। জিম্বাবুয়ে সফরে যে প্রয়োজন মোটামুটি ভালোই মিটিয়েছেন আফিফ। আফিফকে ব্যাটিংয়ে অন্তত এক ধাপ ওপরে তুলে নিচে সাব্বিরকে রাখলে দলের ব্যাটিং আরও শক্তিশালী হওয়ার কথা। তবে এসবই অনুমান। জিম্বাবুয়েতে গত সিরিজেই বাংলাদেশ দলে যেখানে পাঁচজন ওপেনার ছিলেন, এশিয়া কাপের দলে স্বীকৃত ওপেনার মাত্র দুজন। যা দেখে সাব্বিরকে দিয়ে ওপেন করানোর চিন্তাভাবনা আছে কি না—এই প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে।

বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে সাব্বির এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে আছেন
ছবি: ফেসবুক

এশিয়া কাপ শুরু হবে ২৭ আগস্ট। তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিন ম্যাচের আনঅফিশিয়াল ওয়ানডে সিরিজ শেষ হবে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের। ১৬, ১৮ ও ২০ আগস্ট তিনটি ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। ‘এ’ দলের হয়ে এই মুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজে থাকা সাব্বির এই তিন ম্যাচে ভালো করতে পারলে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস নিয়ে যেতে পারবেন এশিয়া কাপে।

দেশের হয়ে টি–টোয়েন্টিতে ৪৪ ম্যাচে ২৪.৮৯ গড়ে ৯৪৬ রান করেছেন সাব্বির। স্ট্রাইক রেট ১২০.৮১। কমপক্ষে ৫০০ রান করেছেন, বাংলাদেশের এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা চতুর্থ সেরা। তিন নম্বরে থাকা সাকিবের সঙ্গে অবশ্য দশমিকের ব্যবধান।

দেশের হয়ে টি–টোয়েন্টিতে ৪৪ ম্যাচে ২৪.৮৯ গড়ে ৯৪৬ রান করেছেন সাব্বির। স্ট্রাইক রেট ১২০.৮১। কমপক্ষে ৫০০ রান করেছেন, বাংলাদেশের এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা চতুর্থ সেরা। তিন নম্বরে থাকা সাকিবের সঙ্গে অবশ্য দশমিকের ব্যবধান।

৬৬ ওয়ানডে ও ১১ টেস্ট খেললেও সাব্বির এ দুটি সংস্করণে কখনো ম্যাচসেরা হতে পারেননি। আট বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মাত্র তিনবারই ম্যাচসেরা হয়েছেন, তিনবারই টি–টোয়েন্টিতে। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ৩২ বলে অপরাজিত ৫১ করে প্রথম ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। পরের বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনায় ১৭ বলে ২৭ রানের ইনিংসের পর বল হাতে ২.১ ওভারে ৩ উইকেটে আবার। এরপর ২০১৬ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৪ বলে ৮০ রানের সেই দ্যুতিময় ইনিংস—যে ইনিংসে ভর করে পরে ২৩ রানের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।

সর্বশেষ ম্যাচসেরা হয়েছিলেন যে এশিয়া কাপে, সেই এশিয়া কাপ দিয়েই আবার তাঁর প্রত্যাবর্তন। সাব্বির কি পারবেন ক্যারিয়ারে জিয়নকাঠি ছোঁয়াতে?

আরও পড়ুন