অ্যাশেজে পরিবেশবাদীদের বিক্ষোভ ঠেকাতে ‘দৌড়বিদ’
অ্যাশেজ সিরিজে জাস্ট স্টপ অয়েল আন্দোলনকারীদের নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা ছিল। বিশেষ করে পরিবেশবাদী এই গ্রুপ ম্যাচ চলার সময় মাঠে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে পারে, এমন শঙ্কা ছিল। লর্ডসে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ওভারে সেই আশঙ্কা সত্যি হয়েছিল। কয়েকজন বিক্ষোভকারী মাঠে ঢুকে পড়ায় খেলা বন্ধ রাখতে হয়েছিল কিছু সময়।
জেমস অ্যান্ডারসনের প্রথম ওভার শেষ হওয়ার পর লর্ডসের মিডিয়া প্রান্ত থেকে দ্বিতীয় ওভারের বোলিং শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। ঠিক সেই সময়ই গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড থেকে মাঠে ঢুকে পড়েন দুই ব্যক্তি। তাঁদের টি–শার্টে লেখা ছিল ‘জাস্ট স্টপ অয়েল’। হাতে ছিল কমলা রঙের পাউডার। এই গ্রুপের লোকজন খেলার মাঠে ঢুকে পড়ে এই কমলা রঙের পাউডার মাঠে ছড়িয়ে দিয়েই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন সাধারণত।
বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্যবস্তু ছিল লর্ডসের উইকেট। সেখানেই পাউডার ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেটি অবশ্য বিক্ষোভকারীরা করতে পারেননি। উইকেটে পৌঁছানোর আগেই বিক্ষোভকারীদের একজনকে থামান নিরাপত্তাকর্মীরা। ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস ও অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারও নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তা করেন। আরেকজন ধরা পড়েন জনি বেয়ারস্টোর হাতে। ইংলিশ উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যান জাস্ট স্টপ অয়েলের এক কর্মীকে একপ্রকার কোলে করেই মাঠের বাইরে নিয়ে যান। কিন্তু কমলা রঙের পাউডারের হাত থেকে রেহাই পাননি। তাঁকে নিজের জার্সি বদলাতে ড্রেসিংরুমে যেতে হয়েছিল।
তৃতীয় টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে লিডসের হেডিংলিতে। লর্ডসের মাঠে ঢুকে পড়া জাস্ট স্টপ অয়েলের কর্মীদের একজন ছিলেন লিডসের বাসিন্দা। সে কারণেই হেডিংলি টেস্টে এই গ্রুপের কর্মীরা মাঠে প্রবেশ করে বিক্ষোভ দেখাতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই মাঠের মালিক ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট দল জাস্ট স্টপ অয়েলের বিক্ষোভকারীদের থামাতে বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাঠের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের নিয়েও বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব। হেডিংলি টেস্টে নিরাপত্তার দায়িত্বে এমন লোকজনকে দেওয়া হবে, যাঁরা জোরে দৌড়াতে পারেন। জাস্ট স্টপ অয়েলের বিক্ষোভকারীরা যদি মাঠে প্রবেশ করেন, নিরাপত্তাকর্মীরা যেন পেছনে ছুটে তাঁদের পাকড়াও করতে পারেন। হেডিংলিতে নিরাপত্তারক্ষীদের সংখ্যাও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে তাদের। কিছু নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হবে সাইটস্ক্রিনের আশপাশে। বিক্ষোভকারীরা যেন টেস্ট চলাকালীন সাইটস্ক্রিনের আশপাশে না আসতে পারেন। ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্লাব এরই মধ্যে ইয়র্কশায়ার পুলিশের সঙ্গে হেডিংলি টেস্টের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করেছে।
ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্লাবের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘অ্যাশেজ সিরিজ বিশেষ একটা উপলক্ষ। আমরা চাই হেডিংলিতে দর্শকেরা প্রাণভরে, বিনা বাধায় টেস্ট ক্রিকেট উপভোগ করুন। আমাদের কাছে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও দর্শকদের ভালো–মন্দ খুব বড় বিষয়। তাই আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্য থেকে সবাইকে নিরাপদ রাখার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার, আমরা নিচ্ছি। লর্ডস টেস্টে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা এ ব্যাপারে আমাদের মনোযোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড ও ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার পুলিশের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’
এর আগে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচের আগে অস্ট্রেলিয়ার টিম বাস আটকে দিয়েছিল জাস্ট স্টপ অয়েল জোট। তারও আগে ইংল্যান্ড আয়ারল্যান্ড টেস্টের সময়ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে বহন করা বাস আটকে দিয়েছিল এই সংগঠন। ওই সময় বাসের ভেতরে থাকা বেয়ারস্টো থেমে থাকা গাড়ির ভেতর থেকে ছবি তুলে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লেখেন, ‘কিছুটা দেরি হয়ে গেলে কিন্তু আমরা দায়ী নই।’ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বিকল্প উইকেটও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
এর আগে জাস্ট স্টপ অয়েল জোটের কর্মীরা বিশ্ব স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপ ও ইংলিশ প্রিমিয়ারশিপ রাগবি ফাইনালেও বিপত্তি বাধিয়েছিলেন। রাগবি চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এই জোটের দুই কর্মী মাঠে ঢুকে কমলা রঙের পাউডার ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। এতে কিছু সময়ের জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে জাস্ট স্টপ অয়েল জোটের আন্দোলনকারীরা বিশ্ব স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপ ও ইংলিশ প্রিমিয়ারশিপ রাগবি ফাইনালে বিপত্তি বাধিয়েছিলেন। প্রিমিয়ারশিপের ফাইনালে দুজন আন্দোলনকারী কমলা রঙের টি–শার্ট পরে মাঠে কমলা রং ছিটিয়েছিলেন। এতে খেলা বন্ধ ছিল পাঁচ মিনিট।
এই জাস্ট স্টপ অয়েল জোট হচ্ছে একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের জোট। এটি বিশ্বব্যাপী তেল, গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক যেকোনো প্রকল্পের বিরোধী। গত এপ্রিল থেকেই এই জোটের কার্যক্রমে গতি তুলেছে। বিভিন্ন ধরনের রোডমার্চ করে তারা জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থার জানাচ্ছে। তবে এই জোট নিজেদের বক্তব্য প্রচারের জন্য বিভিন্ন খেলাকে বেছে নিচ্ছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের সময় এই জোট যখন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের টিম বাস আটকে দিয়েছিল, তখন তারা টুইটারে ক্রিকেটীয় পরিভাষা ব্যবহার করে লিখেছিল, ‘তারা (ক্রিকেটাররা) ব্যাটিংধস সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে পারে। কিন্তু জলবায়ুসংকট এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয়, এটা আমাদের সবচেয়ে বড় টেস্ট।’