বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারাল বাংলাদেশ
রান তাড়ার দ্বিতীয় বলেই আভাসটা দিয়েছিলেন লিটন দাস। স্যাম কারেনের গুড লেংথের বল দুই পা এগিয়ে এসে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারলেন। শটটায় ছিল কর্তৃত্ব, পরিষ্কার বার্তাও। ইংল্যান্ডের ৬ উইকেটে ১৫৬ রান বাংলাদেশ কীভাবে তাড়া করবে, সেই বার্তা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারিভর্তি দর্শকও যেন তখনই বুঝে গিয়েছিল, আজ কিছু একটা হতে যাচ্ছে।
যিনিই ক্রিজে এসেছেন, খেলেছেন টি-টোয়েন্টিটা যেভাবে খেলা উচিত সেভাবে। আর সেই ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে ধরা দিয়েছে গত নভেম্বরে মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেটের দুর্দান্ত জয়। বাটলারদের বিপক্ষে দ্বিতীয় দেখায় বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। তাতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সাকিবের বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ আজ একাদশ সাজিয়েছিল একদল নতুন মুখ নিয়ে। বিপিএলে ভালো খেলার পুরস্কার হিসেবে দলে ডাক পাওয়া রনি তালুকদার, তৌহিদ হৃদয় ও শামীম হোসেন ছিলেন একাদশে। প্রশ্ন ছিল, লিটনের সঙ্গে ইনিংস শুরু করবেন কে?
রনি সে সুযোগটা পেয়ে কাজে লাগিয়েছেন বিস্ফোরক ব্যাটিং করেই। আলিদ রশিদের গুগলি না বুঝে আউট হওয়ার আগে তিনি ২১ রান করেছেন ১৪ বল খেলে। ১৫০ স্ট্রাইক রেটের সেই ইনিংসটি বাংলাদেশকে এনে দেয় উড়ন্ত সূচনা।
দলীয় ৪৩ রানে জফরা আর্চারের বলে লিটন আউট হয়ে গেলেও সে ধাক্কা খুব একটা অনুভূত হয়নি। তিন ও চারে নামা নাজমুল হোসেন ও তৌহিদ হৃদয় যে রানের গতি কমতে দেননি। বরং দুজনের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে রান বেড়েছে তরতরিয়ে।
ইনিংসের দশম ওভারেই আস্কিং রানরেট ৬–এ নামিয়ে আনেন এই জুটি। নাজমুল ফিফটি করেন ২৭ বলে। তাঁর ফিফটির পরের বলেই মঈন আলীকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় আউট হন হৃদয় (১৭ বলে ২৪)। পরের ওভারে মার্ক উডের নিচু হয়ে আসা গতিময় বলে বোল্ড হন নাজমুল। আউট হওয়ার আগে ৩০ বলে ৫১ রান করেন এই বাঁহাতি।
তবে রানরেটের চাপ না থাকায় নতুন দুই ব্যাটসম্যান সাকিব ও আফিফ হোসেন খুব একটা চাপে পড়েননি। ১ ও ২ রানের সঙ্গে কিছু বাউন্ডারি, তাতেই জয়ের দুয়ারে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। সাকিব অপরাজিত ছিলেন ২৪ বলে ৩৪ রান করে, আফিফ অপরাজিত ১৩ বলে ১৫ রানে। দুজনের ৩৪ বলে ৪৬ রানের জুটিতে ২ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ।
এর আগে টসে জেতা বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আমন্ত্রণে ব্যাটিং করতে নেমে ইংল্যান্ড পেয়েছিল দারুণ শুরু। জস বাটলার ও ফিল সল্ট দ্রুত রান তুলছিলেন বড় কোনো ঝুঁকি না নিয়েই। নতুন বলে ইংলিশদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিলেন একমাত্র নাসুম আহমেদ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সল্টের স্টাম্পের পাশ ঘেঁষে যায় নাসুমের বল। পরে নাসুমের বলে বাটলারের সহজ ক্যাচ ফেলেছেন সাকিব।
ইনিংসের দশম ওভারে এসে উইকেটের দেখা পান নাসুম, সঙ্গে বাংলাদেশও। ৩৫ বলে ৩৮ রান করা সল্ট কট বিহাইন্ড হয়ে যান তাঁর বলে। ইংল্যান্ডের রান তখন ১ উইকেটে ৮০, ২৫ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত বাটলার। শেষ ১০ ওভারে বাটলার ঝড় তুলবেন, দলের অন্য ব্যাটসম্যানরাও হাত খুলে খেলবেন। রানটা শেষ ১০ ওভারে যাবে দুই শর ওপারে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের জন্য স্বাভাবিক হতো সেটাই।
কিন্তু সেটি হতে দেয়নি বাংলাদেশ দলের ডেথ ওভারের বোলিং। শেষ ১০ ওভারে ইংল্যান্ড নিয়মিত উইকেট হারিয়েছে, রান করেছে মাত্র ৭৬। তাতে বাটলারদের রান শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ১৫৬। ইনিংসের শেষ ১০ ওভারের ৪টিই করেছেন হাসান। ওই ৪ ওভার থেকে মাত্র ২৬ রানই নিতে পেরেছে ইংলিশরা।
হাসান নিজের শেষ দুই ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে ফিরিয়েছেন বাটলার ও স্যাম কারেনকে। বাটলারের ব্যাট থেকে এসেছে ইংল্যান্ডের ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪২ বলে ৬৭ রান। দলের অন্য দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানও শেষ দিকে নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। ইংল্যান্ডের রানটাও তাই থেকে যায় বাংলাদেশের নাগালের মধ্যেই।