পাকিস্তানকে দুই টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশের ধবলধোলাই করার দৃশ্য তামিম ইকবাল হয়তো টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছেন। ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশ দলের খেলা খুব কাছ থেকে দেখছেন তিনি। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক যে এই টেস্টের ধারাভাষ্যকার হিসেবে আছেন। ধারাভাষ্য কক্ষেই তাঁর অবস্থান। তা, চেন্নাই টেস্টের প্রথম দুই দিনে বাংলাদেশের খেলা দেখে কী মনে হয়েছে তাঁর আর কেমনই–বা লেগেছে?
চেন্নাই টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে ধারাভাষ্যকার তামিমকে। দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ের অনেকটা সময় ধারাভাষ্যে ছিলেন তিনি। বিশেষ করে রবীন্দ্র জাদেজার বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে লিটন দাস আর রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে সাকিব আল হাসানের আউটের সময় রবি শাস্ত্রী আর দিনেশ কার্তিকের সঙ্গে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন তামিম।
সেই সময়ই তামিম লিটন আর সাকিবের শট দুটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। দিনের খেলা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও তাঁর কণ্ঠে ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে হতাশা, ‘বাংলাদেশের ব্যাটিং হতাশাজনক, আমি নিশ্চিত। আমরা সবাই আশা করছিলাম, এর চেয়ে আরও ভালো হবে। প্রথম দিনের তুলনায় উইকেটে তেমন বেশি কিছু একটা ছিল না। হতাশ তো অবশ্যই। আমরা চাচ্ছিলাম বাংলাদেশ অন্তত ভারতের কাছাকাছি রান করুক, তাহলে খেলাটা একটু রোমাঞ্চকর হতো।’
তাহলে উইকেটে কোনো জুজু নেই বলতে চাইছেন তামিম? বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের কথা, ‘উইকেট কঠিন, এটা বলব না। কিন্তু কিছু দারুণ ডেলিভারি ছিল, আবার কিছু বাজে শট সিলেকশন ছিল। সুতরাং পুরো ব্যাপারটিই মিশ্র। উইকেটে একেবারে সুবিধা যে পায়নি, তা নয়। নতুন বলে অবশ্যই সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু কিছু ডেলিভারি...আপনি যশপ্রীত বুমরাকে খেলছেন, বিশ্বের সেরা। কিছু ডেলিভারি খুবই ভালো ছিল, সঙ্গে আমরাও কিছু ভুল শট খেলেছি।’
পাকিস্তানে বাংলাদেশের খেলা নিশ্চয়ই দেখেছেন তামিম। তাহলে দুই সিরিজে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের পার্থক্য নিয়ে কী বলবেন? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তামিম বলেন, ‘গত টেস্ট ম্যাচে আপনারা বলছেন সব বদলে গেছে। (এখন আবার) অর্ধেক টেস্ট না যেতেই সেটা বদলে গেছে। আমার কাছে মনে হয়, একটা সিরিজ জিতলে এই কথাটাও বলা উচিত নয় আর একটা ম্যাচ খারাপ খেললে সেটাকে বদলে ফেলাও উচিত নয়।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই সাফল্যই হোক আর ভারতের সঙ্গে চেন্নাই টেস্টের বাজে অবস্থাই হোক—টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের এখনো অনেক কিছু শেখার আছে বলে মনে করেন তামিম, ‘অনেক কিছু উন্নতির বাকি আছে। আমরা প্রায় ২০ (আসলে ২৪ বছর) বছর ধরে খেলছি, আমাদের পারফরম্যান্সটা যে জায়গায় থাকা উচিত ছিল, ওই জায়গায় নেই। এটা আমি স্বীকার করি। আমি যখন খেলছি, তখনও আমি একই কথাই বলতাম। যে জায়গায় থাকা উচিত ওই জায়গায় হয়তোবা নেই।’
তবে কাউকে দল নিয়ে অতি উচ্ছ্বাস বা অতি হতাশায় ভেসে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তামিম, ‘একটি-দুটি খেলায় জিতলে আপনারা একেবারে বদলে ফেলবেন না। খেলোয়াড়েরা কখনোই বলে না, আমরা এখন থেকে দারুণ দল হয়ে গেছি। হ্যাঁ, কিছু অর্জন হয়েছে, সেগুলোর অবশ্যই প্রশংসা করা উচিত। পাকিস্তানে বাংলাদেশ দল যা করেছে, তা অবিশ্বাস্য। যে জিনিসটা ভালো হয়েছে, সেটা বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিট। পেস বোলিং ইউনিট চমৎকার বোলিং করছে, এই টেস্টেও ওরা ভালো বোলিং করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যাটিং যতটা ভালো হওয়ার কথা ছিল বা উচিত ছিল, সেটা হয়নি।’
লিটনের যে শটটি নিয়ে তিনি ধারাভাষ্য কক্ষে হতাশা প্রকাশ করেছেন, সেটি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তামিম বলেছেন, ‘দেখুন, আমি লিটনের ব্যাপারে একটা কথা বলি—ওই নির্দিষ্ট শটটা ও হাজারবার খেলেছে, অনেক রানও করেছে। হয়তোবা আজকে বাস্তবায়নটা ঠিক ছিল না, হয়তোবা সময়টাও ঠিক ছিল না। কারণ, ওই একটা সময় বাংলাদেশের সুন্দর একটা জুটি হচ্ছিল, প্রায় ৫০ রানের ওপর জুটি হয়েছে। ওই জুটিটা যদি একটু বড় হতো, তাহলে আমরা হয়তো আরও একটু ভালো অবস্থায় থাকতাম।’
তা খেলার এখন যা অবস্থা, এখান থেকে কি চেন্নাই টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পক্ষে ভালো কিছু করা সম্ভব? তামিম মনে করেন, কোনোভাবেই সম্ভব নয়, ‘কঠিন, খুব কঠিন। তবে ক্রিকেটে যেকোনো কিছু হতে পারে। তবে সত্যি বলতে কী, অনেক কঠিন।’