ভারত ইনিংসের শেষ ওভার: থ্রিলার গল্পের শেষ অধ্যায়
শেষ ওভারে প্রয়োজন ১৬ রান। টি–টোয়েন্টি বিবেচনায় নিলে খুব কঠিন কিছু নয়। তবে হিসাবটা যখন বিশ্বকাপে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে হয়, তখন সেই ১৬ রানের চাপটাও হয়ে ওঠে বিশাল। মেলবোর্নে আজ হয়েছেও তাই।
মোহাম্মদ নেওয়াজের করা শেষ ওভারটা যেন থ্রিলার গল্পের শেষ অধ্যায়ে জমে ওঠা রহস্য। যেখানে প্রতি বলেই কেঁপে উঠেছে ভাগ্যের দোলক। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ব্যাটে জয়টা হয়েছে ভারতেরই।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক কেমন ছিল নওয়াজের করা সেই ওভারের নাটকীয়তা।
প্রথম বল
৬ বলে প্রয়োজন ১৬
স্ট্রাইকে হার্দিক পান্ডিয়া। দলের বিপর্যয়ে আজ কিছুটা স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিংই করেছিলেন পান্ডিয়া। ফিনিশিংয়ের জন্য বিখ্যাত এই অলরাউন্ডারের সুযোগ ছিল ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার। তবে প্রথম বলেই জোরের ওপর স্লগ করতে গিয়েছিলেন পান্ডিয়া। তবে যা চেয়েছিলেন পারেননি। ফিরতে হয়েছে কাভারে দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমকে ক্যাচ দিয়ে।
দ্বিতীয় বল
৫ বলে প্রয়োজন ১৬
আইসিসির প্রবর্তিত নতুন নিয়মের কারণে পান্ডিয়ার আউটের সময় দুই ব্যাটসম্যান একে অপরকে ক্রিজে অতিক্রম করলেও স্ট্রাইক নিতে পারেননি কোহলি। নতুন ব্যাটসম্যান দিনেশ কার্তিককেই স্ট্রাইক নিতে হয়। নেওয়াজের করা বুক কাছাকাছি মাপের দ্বিতীয় বলটি সামনে বেরিয়ে এসেছিলেন কার্তিক। সাধারণ পজিশনে থাকলে অবশ্য বল এত উঁচুতে উঠত না। ঠিকঠাক ব্যাটে বলে না হলেও এক রান নিয়ে কোহলিকে স্ট্রাইক দেন কার্তিক। সে সময় নো বলের ‘আবেদন’ জানিয়েছিল ভারত, তবে আম্পায়াররা দেননি।
তৃতীয় বল
৪ বলে প্রয়োজন ১৫
প্রায় ওয়াইড ইয়র্কার হওয়া বলটিকে লং অনে পাঠিয়ে দ্রুত দুই রান নিয়ে স্ট্রাইক ধরে রাখেন কোহলি। ৩৭ বছরেও রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে কার্তিকের দৌড় ছিল দেখার মতোই।
চতুর্থ বল (নো বল)
৩ বলে প্রয়োজন ১৩
বেশ উঁচুতে আসা ফুলটসটিকে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারেন কোহলি। ফিল্ডার আসিফ আলী অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন ছক্কা ঠেকাতে। তবে পারেননি। ছক্কার সঙ্গে আম্পায়ারের নো বলের সংকেতে ওই বলেই আসে ৭ রান। আম্পায়ারদের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা যায় বাবর আজমকে। পাকিস্তান অধিনায়ক খুশি হননি, সেটি বলাই যায়! তবে তাতে বয়েই গেছে ভারত দল ও মাঠে থাকা ভারতীয় সমর্থকের! জয় তখন ভারতের হাত ছোঁয়া দূরত্বে।
চতুর্থ বল (ওয়াইড বল)
৩ বলে প্রয়োজন ৬
ফ্রি হিট! স্নায়ুচাপ সামলাতে না পেরে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে বল করে ওয়াইড দিলেন নওয়াজ। ফ্রি হিট বহাল থাকল।
চতুর্থ বল
৩ বলে প্রয়োজন ৫
তৃতীয়বারের মতো চতুর্থ বলটি করলেন নওয়াজ। কোহলিকে বোল্ডও করলেন। ফ্রি হিটের কারণে বেঁচে গেলেন কোহলি। অন্তহীন নাটকীয়তা যেন। স্টাম্পে লেগে বল গেল থার্ড ম্যানে, সেখান থেকে শাহিন শাহ আফ্রিদি ফিল্ডিং করে পাঠানোর আগেই ৩ রান।
পঞ্চম বল
২ বলে প্রয়োজন ২
নেওয়াজের লেগ সাইডের বলটিতে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে মিস করেন দিনেশ কার্তিক। তবে ভুল করেননি রিজওয়ান। স্টাম্পিং করে ফিরিয়ে দেন কার্তিককে। আবার নাটকীয়তা!
ষষ্ঠ বল (ওয়াইড)
১ বলে প্রয়োজন ২
কার্তিক আউট হওয়ার পর রোমাঞ্চ জমে ক্ষীর। তবে পাকিস্তানের আশায় পানি ঢেলে ওয়াইড দিয়ে বসেন নওয়াজ। নতুন ব্যাটসম্যান অশ্বিন মাথা ঠান্ডা রেখে ছেড়ে দেন সেটি। ১ বলে ২ থেকে লক্ষ্য তখন ১ বলে ১। ভারত হারছে না, সেটি নিশ্চিত। পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সেরা ফল ম্যাচটিকে সুপার ওভারে নিয়ে যাওয়া।
ষষ্ঠ বল
১ বলে প্রয়োজন ১
নাহ, আর কোনো নাটকীয়তা নয়। ঠান্ডা মাথায় মিড–অফের ওপর দিয়ে মেরে ভারতের রোমাঞ্চকর জয় নিশ্চিত করেন অশ্বিন। মেলবোর্ন দেখল টি-টোয়েন্টির ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ, অন্যতম নাটকীয় এক শেষ ওভার!