দুবাই স্টেডিয়ামে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া মুম্বাইয়ের কিঞ্চিৎ যেভাবে হংকংয়ের
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ঢুকলেই বিশাল ব্যানারে রোহিত শর্মা, বাবর আজম, সাকিব আল হাসান, দাসুন শানাকা ও মোহাম্মদ নবীর ছবি চোখে পড়বে। কিন্তু এশিয়া কাপের বাছাইপর্ব পার হয়ে মূল পর্বে আসা হংকং দলের কোনো ক্রিকেটারের ছবি খুঁজে পাবেন না। যেন দলটি এই টুর্নামেন্টে অংশই নেয়নি! তবে গ্রুপ পর্বে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে পড়ার আগে এই হংকং দলই হঠাৎ আলোচনায় চলে আসে।
আর দলটাকে আলোচনায় নিয়ে আসেন সহ–অধিনায়ক কিঞ্চিৎ শাহ। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে কিঞ্চিৎ তাঁর বান্ধবীকে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেই বিয়ের প্রস্তাব দেন। হাঁটু গেড়ে বসা সেই বিয়ের প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন তাঁর দীর্ঘদিনের বান্ধবীও। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) টুইটার-ফেসবুকে কিঞ্চিতের সেই ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
কিঞ্চিতের অবশ্য এমন ভরা মাঠে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা ছিল না। প্রথম আলোকে তিনি সে কথাই বলছিলেন, ‘আমি আসলে এত কিছু ভাবিনি। মুম্বাই গিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু হুট করেই যেন সব হয়ে গেল। যখন ম্যাচ খেলছিলাম, তখনো এসব নিয়ে ভাবিনি। ম্যাচ শেষে হুট করেই ভাবনাটা মাথায় আসে। এরপর যা হয়েছে, তা তো দেখেছেনই।’
কিঞ্চিৎকে নিয়ে আলোচনার আরেক কারণ তাঁর পরিবার। ভারতে জন্ম নেওয়া এই অলরাউন্ডারের বাবা হীরার ব্যবসায়ী দেবাং শাহ। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হিসেবে তাঁকে ঘিরে হংকং ক্রিকেটে হইচই সব সময়ই লেগে থাকে। কিঞ্চিতের বাবা আবার হংকং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগে একটি দলের মালিকও। খাওয়ার টেবিলে তাই ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোনো আলোচনা হয় না বললেই চলে, ‘আমার মা খুব বিরক্ত হয়। আমি, আমার ভাই, বাবা—সবাই মিলে ক্রিকেট নিয়ে আড্ডা মারতে থাকি, আর মা রাগতে থাকে। আমরা সব সময় আইপিএল দেখি, টেস্ট ম্যাচ দেখি। পুরো পরিবারই ক্রিকেট আড্ডায় অভ্যস্ত। পরিবারের সবাই টেনিস খেলেও অভ্যস্ত। তবে খাবারের টেবিলে আলোচনা ওই একটাই—ক্রিকেট।’
তবে অর্থ বা ক্ষমতার জোরে নয়, কিঞ্চিৎ নিজের যোগ্যতা দিয়েই হংকং জাতীয় দলে খেলছেন। জাতীয় দলে আসার আগে প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলের হয়ে খেলেছেন। ২০১৪ সালের নভেম্বরে জাতীয় দলের হয়ে কিঞ্চিতের অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টিতে। এখন পর্যন্ত হংকংয়ের হয়ে তিনি ৪৩টি টি-টোয়েন্টি খেলে রান করেছেন ৬৩৩। ৩টি হাফ সেঞ্চুরি আছে, সর্বোচ্চ ইনিংস ৭৯ রানের। বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ১১টি। ব্যাটিং-বোলিংয়ের পাশাপাশি দরকার পড়লে উইকেটকিপিংও করতে পারেন এই বাঁহাতি।
ক্রিকেটে হাতেখড়ির গল্প শোনাতে গিয়ে কিঞ্চিৎ বলেছেন, ‘আমার জন্ম মুম্বাইয়ে। বয়স যখন ৩, আমার পরিবার ভারত ছেড়ে হংকং চলে আসে। বাবা ৩০ বছর ধরে হীরার ব্যবসা করছেন হংকং, মুম্বাই ও নিউইয়র্কে। আমি ২ বছর বয়স থেকেই ক্রিকেট মাঠে আসা–যাওয়া করছি। খেলার প্রতি আবেগটা সেখান থেকেই।’
হংকং ক্রিকেট নিয়েও কিঞ্চিতের বড় আশা। এবারের এশিয়া কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়াকে তিনি দেখছেন এগিয়ে যাওয়ার পথে একটা বড় ধাপ হিসেবে, ‘আমরা এই টুর্নামেন্টে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছি। বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে। আমরা যদি এই ধারা বজায় রাখতে পারি, তাহলে দ্রুতই হংকং ক্রিকেট উন্নতি করবে। আপনারা হয়তো হংকংকে এশিয়া কাপে নিয়মিতই দেখতে পাবেন।’