সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটা বাংলাদেশ শুধু হারেইনি, অনেক কিছু হারিয়েওছে। প্রথমত ধসে পড়া ব্যাটিং কেড়ে নিয়েছিল তাদের আত্মবিশ্বাস। শঙ্কা ছিল—অমন একটা হারের পর বাংলাদেশ কি আর পারবে সিরিজে ফিরতে!
আঙুলের চোটে পড়া মুশফিকুর রহিমকেও হারাতে হয় ওই ম্যাচের পর। প্রথম ম্যাচে যদিও মুশফিকের কাছ থেকে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি, তবু তাঁকে হারিয়ে দলে অভিজ্ঞতার একটা ঘাটতি তো তৈরি হয়েছেই।
পরশু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাওয়া অনায়াস জয়েও বেশ কিছু প্রাপ্তির সঙ্গে যোগ হয়েছে একটা বড় অস্বস্তির কাঁটা। খোদ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনকে নিয়ে অনিশ্চয়তা, শারজায় আজ সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচে কি তাঁকে পাচ্ছে বাংলাদেশ! পরশুর ম্যাচে কুঁচকিতে চোট পেয়েছেন নাজমুল। কাল রাতে এমআরআই করিয়েছেন, রিপোর্ট পাওয়া যাবে আজ সকালে। এরপরই বোঝা যাবে আজ বিকেলে শুরু শেষ ম্যাচে তিনি খেলবেন কি না।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নাজমুলের অবদান ছিল ৭৬ রানের ইনিংস। পরে উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান জাকের আলীর ২৭ বলে অপরাজিত ৩৭ আর নাসুম আহমেদের ২৪ বলে ২৫ রান বাংলাদেশকে নিয়ে যায় জেতার মতো জায়গায়। ম্যাচের ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ নাসুম তো বোলিংয়েও দুর্দান্ত সফল, ২৮ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট!
ম্যাচটা থেকে প্রাপ্তির খাতায় আরও কিছু যোগ করার আছে। ১০ম ম্যাচে এসে শারজার মাঠে পাওয়া প্রথম জয় তার একটি। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডে থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বোধ হয় সেদিনই সিরিজটা হেরে না যাওয়া। প্রথম ম্যাচের বাজে ব্যাটিং আর বাজে হারের পর এটা বিশ্বাসে আনা খুব কঠিন ছিল যে সিরিজের শেষ ম্যাচটাকে বাংলাদেশ ‘ফাইনাল’ বানাতে পারবে। আজ সেই ‘ফাইনাল’, যাতে জয়ের বিকল্প ভাবার কথা নয় কোনো দলেরই।
এমনিতে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাস ভালো। ১৮ ম্যাচের ১১টিতেই জয়, হার ৭টিতে। তবে আলোচনাটা যখন দ্বিপক্ষীয় সিরিজের, তখন আবার জয়–পরাজয়ের ব্যবধান এত বেশি নয়। ১১ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৬টি, বাকি ৫টি জয় আফগানিস্তানের। সিরিজ জয় বাংলাদেশের বেশি, তবে সেখানেও ব্যবধান মাত্র ২–১–এর।
বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানদের যে একটিমাত্র সিরিজ জয়, সেটি এসেছে গত বছরের জুলাইয়ে দুই দলের মধ্যে চট্টগ্রামে হওয়া সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় সিরিজে। ২০১৬ ও ২০২২ সালের আগের দুটি সিরিজ বাংলাদেশ জিতলেও আফগানদের ধবলধোলাই করতে পারেনি। দুই সিরিজেই জয়ের ব্যবধান ২–১। তার মানে আফগানিস্তান বরাবরই বাংলাদেশের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে গেছে। এবার চতুর্থ সিরিজটিও তিন ম্যাচের, যাতে আফগানদের সামনে সুযোগ সিরিজ জয়ে বাংলাদেশকে ছুঁয়ে ফেলার। তবে বাংলাদেশ চাইবে ব্যবধান বাড়াতে।
বাংলাদেশের সেই চাওয়ায় শঙ্কা ছড়াচ্ছে নাজমুলের কুঁচকির চোট। এমআরআই রিপোর্ট ভালো হলে তো ভালো, তবে এ ধরনের চোট গুরুতর হলে সেরে উঠতে ৮–১০ দিনও লেগে যায় অনেক সময়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে রকম কিছু হলে টপ অর্ডারে আবারও অভিজ্ঞতার সংকট তৈরি হবে, ‘ফাইনাল’ বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠবে চ্যালেঞ্জিং। নাজমুলের জায়গায় হয়তো দলে আসবেন এখন পর্যন্ত একটিমাত্র ওয়ানডে খেলা জাকির হাসান। গত বছর সেপ্টেম্বরে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছে তাঁর। অবশ্য পরশুর ম্যাচে জাকিরও ব্যথা পেয়েছেন। একাদশে না থাকলেও নাজমুলের পরিবর্তক হয়ে ফিল্ডিং করতে নেমে হাঁটুতে বলের আঘাত পান তিনি। তবে সেটি জাকিরকে এখন আর ভোগাচ্ছে না বলেই জানা গেছে।
আজ জয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের আরেকটি বড় প্রত্যাশা মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে রান। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এসে দৌড়ে যেন শুধুই পিছিয়ে যাচ্ছেন তিনি! সর্বশেষ ভারত সফরে টি–টোয়েন্টিকে বিদায় বলেছেন আরও তিন বছর আগে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া মাহমুদউল্লাহ। তিনি মুখে না বললেও বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি ওয়ানডে থেকে অবসর নিতে হয়তো আগামী ফেব্রুয়ারির চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটাকেই পাখির চোখ করছেন। কিন্তু সেই পর্যন্ত দলে জায়গা ধরে রাখতে তো ব্যাটে রান চাই!
আজ যদি খেলেন, প্রত্যাশা মেটানোর আরেকটি সুযোগ পেয়ে যাবেন মাহমুদউল্লাহ। আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দলে সুযোগ দিয়ে তাঁকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ভাবনায় রাখতে নির্বাচকদেরও তো চাই যৌক্তিক কিছু, যার অন্য নাম ‘রান’।