‘সেরা’ বিশ্বকাপেও যত আক্ষেপ সাকিবের
আজ সকালেও এ ম্যাচের সমীকরণ ছিল এমন—জিতলেও সেটি যথেষ্ট না-ও হতে পারে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত খেলবে আগে-পরে, যেখানে তুলনামূলক ‘সহজ’ প্রতিপক্ষ দুই দলের জন্যই। ওই দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত তাদের, মাঝে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের ফল কোনো প্রভাবই ফেলবে না।
তবে অ্যাডিলেডে দিনের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ঘটাল বিশ্বকাপের অন্যতম বড় অঘটন। দক্ষিণ আফ্রিকার হারে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সমীকরণটা হয়ে গেল সরল—জিতলেই সেমিফাইনাল!
হুট করেই সেমিফাইনাল থেকে এক ম্যাচের দূরত্বে নিজেদের আবিষ্কার করল বাংলাদেশ। গুরুত্বপূর্ণ টসটা জিতে ব্যবহৃত উইকেটে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটিং নিলেন সাকিব আল হাসান, ১০.৩ ওভারে ৭৩ রানে ১ উইকেট ছিল বাংলাদেশের। পাকিস্তানের শরীরী ভাষায় তখন বলছিল, চাপ তারা অনুভব করছে ভালোভাবেই।
সে ওভারে সৌম্য সরকার রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুললেন, সাকিবকে ফিরতে হলো আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে। বাংলাদেশ লড়াই থেকে অনেকটাই ছিটকে গেল তখন, ৫৭ বলের মধ্যে ৫৪ রান যোগ করতে তারা হারাল ৭ উইকেট। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও ম্যাচশেষে আক্ষেপ করে বলেছেন, ১৪৫-১৫০ রানের স্কোর এ উইকেটে ভালো হতো।
ওই ধসে ফিরে গেছেন ফিফটি করা নাজমুল হোসেন, পাঁচে নামা আফিফ হোসেনও ২০ বলে ২৪ রানের বেশি করতে পারেননি। এ ছাড়া বলার মতো কিছুও সেভাবে করতে পারেননি কেউ। ম্যাচশেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ড্যানি মরিসনের প্রশ্নের জবাবে সাকিব আক্ষেপ করেছেন থিতু কারও শেষ না করে আসা নিয়ে, ‘অবশ্যই। ইনিংসের মাঝপথে ৭০ রানে ১ বা ২ উইকেট ছিল আমাদের। ১৪৫-১৫০ রানের মতো করতে চেয়েছিলাম। এ পিচে সেটি ভালো একটি স্কোর হতো। প্রথম ম্যাচ দেখেছি দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ডসের। ইনিংসের পরের ১০ ওভারে রান করা কঠিন। সব সময়ই জানতাম, নতুন ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন হবে আমাদের। ফলে থিতু ব্যাটসম্যানদের কাউকে শেষ পর্যন্ত থাকাটা দরকার ছিল। সেটি হয়নি।’
ভারতকে বেশ চেপে ধরার পর ৫ রানে হার, এরপর সেমিফাইনালের হাতছানি থাকা ম্যাচে আবার চাপে ভেঙে পড়া। সুপার টুয়েলভে তাই বাংলাদেশকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি জয় নিয়েই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে এর আগে একবারই একটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ, সেটিও ২০০৭ সালে প্রথম আসরে। সাকিবও বলছেন, ফলের দিক দিয়ে এটিই সেরা বিশ্বকাপ তাদের।
তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে যে সেটি আরও অনেক ভালো হতে পারত, সাকিব নিজেও বলেছেন সেটি, ‘ ফল হিসেবে আমাদের সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তবে আমরা সুযোগ পেয়েছিলাম, আরও ভালো করতে পারতাম। তবে নতুন খেলোয়াড় এসেছে, অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এর চেয়ে কম (বেশি) আশা করতে পারি না।’
সাকিব সুযোগ বলতে হয়তো ভারতের বিপক্ষে রান তাড়ায় শক্ত অবস্থান থেকে ম্যাচ হারার কথা বুঝিয়েছেন। ফিল্ডিংয়ের কথা আলাদা করে বলেননি তিনি, তবে সেটির কথা মাথায় না থেকে পারে না বাংলাদেশ অধিনায়কেরও। আজও যেমন প্রথম ওভারেই মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচ ফেলেন উইকেটকিপার নুরুল হাসান। সরাসরি থ্রোয়ে রানআউটের সুযোগ মিস করেন নাজমুল। এ ছাড়া মিসফিল্ড, ওভারথ্রো থেকে বাউন্ডারি, বোলারদের নো বল তো আছেই!
সাকিব অবশ্য আক্ষেপ করেছেন নিজের পারফরম্যান্স নিয়েও। ত্রিদেশীয় সিরিজে ব্যাটিংয়ে ফর্মটা ভালোই ছিল তাঁর, তবে বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচে ৪৪ রানের বেশি করতে পারেননি। বোলিংয়েও বাংলাদেশ অধিনায়ক ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৬ উইকেট, ২৭.৮৩ গড় ও ৮.৭৮ ইকোনমি রেটে বোলিং করে।
এখন পর্যন্ত সব কটি বিশ্বকাপেই খেলা সাকিবকে ২০২৪ সালেও দেখা যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘আমি জানি না আসলে। বাংলাদেশের হয়ে যত দিন সম্ভব খেলে যেতে চাই। তবে আমাকে ফিট থাকতে হবে, পারফর্ম করতে হবে। অবশ্যই নিজের পারফরম্যান্সের দিক দিয়েও এটি আদর্শ কিছু ছিল না। আরও ভালো করতে পারতাম। তবে হ্যাঁ, ফিট থাকতে পারলে, দলের জন্য অবদান রাখতে পারলে খেলতে ভালো লাগবে।’