ব্যাটসম্যানদের জন্য অদ্ভুত এক বিশ্বকাপ

ছবিটি প্রতীকী। ব্যাটসম্যানদের দুর্দশাই যেন ফুটে উঠেছে ছবিটিতে।বিসিবি

অভাবনীয়!

পাওয়ার প্লেতে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং, স্পিনারদের দাপট, দলগুলোর রেকর্ড সংগ্রহ—এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগে আলোচনা ছিল এমন। অথচ বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে এর পুরো উল্টো চিত্র। না, বিশ্বকাপ এখনো শেষ হয়নি, তবে এখন পর্যন্ত শেষ হওয়া প্রথম ৩৪টি (৪টি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত) ম্যাচই ভিন্ন চিত্রটা ফুটিয়ে তুলেছে।

বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রান নেই, চলছে পেসারদের একচ্ছত্র দাপট। ওভারপ্রতি ১০-১২ রান তোলার কথা তো ভুলেই যান, কোনোভাবেই উইকেট বাঁচাতেই ব্যাটসম্যানদের ঘাম ঝরছে। প্রমাণ চান?

এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ওভারপ্রতি রান উঠেছে ৬.৬৯ করে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসেই যা সবচেয়ে কম। এখন পর্যন্ত মোট ৬৯ ইনিংস খেলেছে দলগুলো, এর মধ্যে ৪০ বারই তাদের থামতে হয়েছে ১২০ রানের নিচে। এটিও বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছি, বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্ব এখনো শুরু হয়নি।

দারুণ বোলিং করছেন তানজিম হাসান
এএফপি

পেসারদের দাপট

উইকেটের বিচারে এখন পর্যন্ত সেরা পেসার আফগানিস্তানের ফজল হক-ফারুকি। ৩ ম্যাচে তাঁর উইকেট ১২টি। এরপর আনরিখ নর্কিয়া ও বাংলাদেশের তানজিম হাসান দুজনই ৪ ম্যাচে ৯টি উইকেট নিয়েছেন। এদের তিনজনের মধ্যে সর্বোচ্চ ওভারপ্রতি রান খরচ করেছেন তানজিম—৪.৪০।

বোঝাই যাচ্ছে, কতটা দাপট দেখিয়েছেন তাঁরা। মোস্তাফিজুর রহমানের নামটাও আলাদা করে বলতে হবে। ডেথ ওভার ও পাওয়ার প্লেতে বোলিং করেও এই পেসার ওভারপ্রতি খরচ করেছেন মাত্র ৩.৩৭ রান করে। উইকেট নিয়েছেন ৪ ম্যাচে ৭টি। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির, নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট থেকে ভারতের অর্শদীপ সিং, যশপ্রীত বুমরা—প্রায় সবাই পছন্দের কন্ডিশন পেয়ে দারুণ বোলিং করেছেন।

আরও পড়ুন

ব্যতিক্রম রিশাদ, আকিল, জাম্পা
পেসারদের দাপটের ভিড়েও নিজেদের নামটা আলাদা করে বলতে বাধ্য করছেন দুই লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন, অ্যাডাম জাম্পা ও বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেন। রিশাদ ৪ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন সাতটি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দলকে প্রয়োজনের মুহূর্তে উইকেট দিয়েছেন। জাম্পা ৪ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৯টি। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকিল তো হয়ে উঠেছেন নতুন বল তাদের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম। ৩ ম্যাচে তাঁর উইকেট ৭টি।

রান পাচ্ছেন না বিরাট কোহলি
রয়টার্স

টপ অর্ডারের ব্যর্থতা
টপ অর্ডারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ফিফটি দেখা গেছে মাত্র ১১টি। সর্বোচ্চ ফিফটি এসেছে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেবার টপ অর্ডারের কাছ থেকে ফিফটি এসেছিল ২৫টি। তবে ২০ দলের বিশ্বকাপ হওয়ায় এবারের আসরের ম্যাচসংখ্যা অনেক বেশি। এখন পর্যন্ত ম্যাচ হয়েছে ৩৪টি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ম্যাচ বাকি ছিল ২টি, অর্থাৎ গ্রুপ পর্বের মোট ম্যাচ হওয়ার কথা ৩৬টি। এর আগে মাত্র দুটি বিশ্বকাপেই এর চেয়ে বেশি ম্যাচ হয়েছে। এবার টপ অর্ডার রান করেছে ১০৫.৮৫ স্ট্রাইকরেটে। যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

আরও পড়ুন

ব্যতিক্রম রহমানউল্লাহ গুরবাজ
আফগান এই ওপেনার তিন ম্যাচে রান করেছেন ১৬৭। উগান্ডার বিপক্ষে ৭৬ রানের ইনিংস খেলার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮০ রান করেছিলেন তিনি। ইনিংসের হিসাব করলে গ্রুপ পর্বে ব্যাটসম্যানদের জন্য সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনের নাম অ্যারন জোন্স। যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যাটসম্যান কানাডার বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে করেছিলেন ৪০ বলে অপরাজিত ৯৪ রান।

আফগানিস্তানের রহমানউল্লাহ গুরবাজ
এএফপি

সেই অর্থে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করতে পারেননি কেউ। সাকিব আল হাসান থেকে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা—ব্যাটে বলে একসঙ্গে পারফর্ম করতে ব্যর্থ হয়েছেন বেশির ভাগ অলরাউন্ডার।

আরও পড়ুন