টেস্ট ক্রিকেট বাঁচাতে কোটি ডলারের তহবিল গঠনের পরিকল্পনা আইসিসির

দুবাইয়ে আইসিসির সদরদপ্তররয়টার্স

টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের যোগ দেওয়ার স্রোত ঠেকাতে টেস্টে ম্যাচ ফি বাড়াতে বাড়ানোর কথা ভাবছে আইসিসি। আর তাই টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আলাদা একটি তহবিল গঠন করা হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব দেশের ক্রিকেট বোর্ড টি–টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর সঙ্গে পারিশ্রমিক দেওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে পারছে না, তাদের সাহায্য করতে এই তহবিল গঠন করা হবে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ তহবিলের মাধ্যমে টেস্টে ন্যূনতম ম্যাচ ফি হতে পারে ১০ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা)। সেরা ক্রিকেটারদের টেস্টে ধরে রাখার লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার দেড় কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ১ কোটি ৮১ হাজার মার্কিন ডলার) বা এরও বেশি অর্থের তহবিল গঠনের উদ্যোগ অনুসরণ করতে পারে আইসিসি।

আরও পড়ুন

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) চেয়ারম্যান মাইক বেয়ার্ড গত জানুয়ারিতে এই তহবিল তৈরির ধারণা দেন। নিউজিল্যান্ডে গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ‘দুর্বল’ দল পাঠানোর পর এই তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল যখন নিউজিল্যান্ড সফর করেছে, সে সময়েই দেশটিতে চলেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি এসএ ২০ টুর্নামেন্ট। সেখানে শীর্ষ সারির ক্রিকেটারেরা থাকায় বাধ্য হয়েই দুর্বল স্কোয়াড নিউজিল্যান্ডে পাঠিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ তখন সমালোচনা করে বলেছিলেন, টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে প্রশাসকদের কোনো ‘ভাবনা নেই’। ওয়াহর এই সমালোচনার পর বেয়ার্ড টেস্ট ক্রিকেটের জন্য কিছু একটা করার তাড়না অনুভব করেন। বেয়ার্ড তখন বলেছিলেন, ‘জাতীয় দলকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, ব্যাপারটা এমন অবস্থায় চলে এলে আমাদের অনেক কিছু্ই করতে হবে।’

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান মাইক বেয়ার্ড
ইনস্টাগ্রাম

এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, টেস্টের জন্য বিশেষ এই তহবিল গঠনের পদক্ষেপে সমর্থন রয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এবং ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি)। আইসিসির পরবর্তী চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব জয় শাহও এর আগে প্রকাশ্যে টেস্টের জন্য তহবিল গঠনের পক্ষে কথা বলেছেন। টাকাপয়সায় ধনী নয়, এমন ক্রিকেট বোর্ডগুলোর টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের খরচ পুষিয়ে দিতে ‘৫০ লাখ কিংবা ১ কোটি ডলারের বেশি’ অর্থের একটি তহবিল গঠনের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন জয়। তবে সিডনি মর্নিং হেরাল্ড এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই তহবিল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী তিনটি ক্রিকেট বোর্ডের (ইংল্যান্ড, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া) সরাসরি উপকৃত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আরও পড়ুন

ইসিবিও অন্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডগুলোকে সাহায্য করতে আগ্রহী। এর আগে জিম্বাবুয়ে দলকে সাহায্য করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে ইসিবি। আগামী বছর মে মাসে একটি টেস্ট খেলতে ইংল্যান্ড সফরে যাবে জিম্বাবুয়ে। এই সফরের জন্য জিম্বাবুয়ে দলকে টাকা দেবে তারা। গত মাসে এই কথা বলেছেন ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড। স্কাই স্পোর্টসকে তিনি বলেছিলেন, ‘(দ্বিপক্ষীয় সিরিজে) সাধারণত যেভাবে কাজটা হয়, সফরকারী দল (নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়) আসার পর তাদের খরচ, থাকার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য খরচ দেওয়া হয়। কিন্তু সফরকারী দলকে কোনো ফি দেওয়া হয় না। আগামী বছর আমরা যখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলব, তখন সফরকারী দলকে (এসবের বাইরে) অর্থ দেওয়া হবে।’

ইসিবি অন্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডগুলোকে সাহায্য করার পক্ষে
ইসিবি ওয়েবসাইট

ইসিবি গতকাল ২০২৫ সালে তাদের দেশের মাটির আন্তর্জাতিক সূচি ঘোষণা করেছে। সেই সূচি অনুযায়ী, আগামী বছরের ২২ মে ট্রেন্ট ব্রিজে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে চার দিনের টেস্ট খেলবে ইংল্যান্ড। ২০০৪ সালের পর থেকে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কোনো সিরিজে অংশ নেয়নি ইংল্যান্ড।

ইসিবি আরও জানিয়েছে, লর্ডসে প্রথমবারের মতো মেয়েদের টেস্ট ম্যাচে অংশ নিতে ২০২৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে যাবে ভারত। ক্রিকেটে সাম্য নিয়ে স্বাধীন কমিশন গত বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হোম অব ক্রিকেট নামে খ্যাত লর্ডসে ইংল্যান্ডের মেয়েদের কখনো টেস্ট খেলতে না পারার ব্যাপারটি ‘সত্যিকার অর্থেই ভয়াবহ’।

আরও পড়ুন