কোহলিকে সেঞ্চুরি করাতে সিঙ্গেলস নিতে মানা করেছিলেন রাহুল

গতকাল ম্যাচের এই ছবিটিকে প্রতীকী ভাবতে পারেন। কোহলির সেঞ্চুরি আটকাতে পারেনি বাংলাদেশ দলছবি: এএফপি

চাই আর মাত্র একটি সেঞ্চুরি!

তাহলেই শচীন টেন্ডুলকারের গড়া ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড ধরে ফেলবেন বিরাট কোহলি। গতকাল পুনেতে যে সেঞ্চুরিটি করে কোহলি টেন্ডুলকারের নিশ্বাস দূরত্বে চলে এলেন, সেটির মহিমাও কী কম! বাংলাদেশের ২৫৬ রান তাড়া করতে নেমে ৩৮ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ২২৯ রান ছিল ভারতের। জয়ের জন্য দরকার ২৮ রান আর কোহলির নিজের রানসংখ্যা তখন ৭৩।

অর্থাৎ, সেঞ্চুরি করতে কোহলিরও দরকার ছিল ২৭ রান। বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেই প্রয়োজনীয় ২৭ রান তুলেছেন কোহলি। ছক্কা মেরে যখন সেঞ্চুরিটি করলেন, তখন নিশ্চয়ই মাথা হেট হয়ে এসেছে বাংলাদেশের বোলারদের। দলের জয়ে যে রান দরকার, সেটা কোনো ব্যাটসম্যান প্রায় একাই তুলে নিজের সেঞ্চুরিও করে ফেললে সেটি প্রতিপক্ষ দলের আর যা–ই হোক, ভালো লাগার কথা না।

আরও পড়ুন

ভারতীয় শিবিরে উল্টো চিত্র। কৌশল মাঠে ফলাতে পারলে কার না ভালো লাগে! লোকেশ রাহুলের মুখেও তাই জয়ের হাসি। কোহলি যেন সেঞ্চুরিটি তুলে নিতে পারেন, সে জন্য সিঙ্গেলস না নেওয়ার বুদ্ধিটা দিয়েছিলেন রাহুল। দলের জয়ে যখন ১৯ রান দরকার আর কোহলিও সেঞ্চুরি থেকে ১৯ রান দূরে ছিলেন, তখনকার ব্যাটিংটা মনে করতে পারেন।

নিশ্চিত কিছু সিঙ্গেলস নেননি রাহুল-কোহলি। সেটি করলে কোহলির আর সেঞ্চুরি হতো না। দলের জয়ে প্রয়োজনীয় রানসংখ্যা কোহলি যেন একাই তুলে সেঞ্চুরিও করে ফেলতে পারেন, সেটা নিশ্চিতে রাহুলের বুদ্ধিটা কাজে লেগেছে। আর বাংলাদেশের বোলারদের জন্য এটাই আবার ভীষণ হতাশার। তখন তিল পরিমাণ প্রতিরোধও গড়ে তুলতে পারেনি!

অথচ কোহলি কিন্তু সেঞ্চুরির কথা ভাবেননি। তখন তাঁর সঙ্গে কী কথা হয়েছে সেটাই ম্যাচ শেষে স্টার স্পোর্টসকে বলেছেন রাহুল, ‘সে (কোহলি) বুঝতে পারছিল না কী করা উচিত। বলেছিল, সিঙ্গেল না নেওয়াটা ঠিক শোভন দেখায় না। এটা তো বিশ্বকাপ, অনেক বড় মঞ্চ। আমি চাই না কেউ ভেবে নিক, আমি মাইলফলকের জন্য খেলছি।’ রাহুলের উত্তর ছিল, ‘আমি বলেছি, এখনো আমরা জিতিনি। তবে জিতব সহজেই। তোমার তাহলে মাইলফলকে পৌঁছানোর সুযোগ থাকলে কেন সেটা করবে না? শেষ পর্যন্ত সে এটাই করেছে। আমি অন্তত সিঙ্গেল নেওয়ার জন্য দৌড়াতাম না।’

আরও পড়ুন

কোহলি সেঞ্চুরির কাছাকাছি থাকতে অন্তত পাঁচটি সিঙ্গেল নেয়নি এই জুটি। জয়ের জন্য ভারতের যখন ২৬ রান দরকার আর সেঞ্চুরি করতে কোহলিরও একই রান প্রয়োজন, তখন হাসান মাহমুদকে ছক্কা মারার পর নাসুম আহমেদের করা ওভার থেকেও চার ও ছক্কা তুলে নেন কোহলি। জয়ের জন্য ভারতের যখন ২ রান দরকার আর কোহলির ৩, নাসুম তখন লেগে বল করলেও আম্পায়ার ওয়াইড দেননি। দুই বল পরই ছক্কা মেরে সেঞ্চুরির সঙ্গে দলের জয়ও এনে দেন কোহলি।

৯৭ বলে ১০৩ রানে অপরাজিত থাকা কোহলি ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘দলের জন্য অবদান রাখতে চেয়েছিলাম। বিশ্বকাপে বেশ কিছু ফিফটি পেয়েছি কিন্তু সেগুলোকে বড় ইনিংসে রূপান্তর করতে পারিনি। তাই এবার ম্যাচটা শেষ করে আসতে চেয়েছিলাম, যেটা অতীতেও দলের জন্য করেছি।’

সেঞ্চুরির পর কোহলি
ছবি: এএফপি

২০১৫ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর বিশ্বকাপে এটাই প্রথম সেঞ্চুরি কোহলির। মাঝে বিশ্বকাপে সাতটি ফিফটি পেয়েছেন। গতকাল ক্রিজে আসার পর কোহলির শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো। তাতে বোলার হাসান মাহমুদের ‘অবদান’ই বেশি! বাংলাদেশের পেসার দুটি নো বল করায় দুটি ফ্রি হিট পান কোহলি, যেখান থেকে চার ও ছক্কা আদায় করে নেন। সেই মুহূর্ত নিয়ে কোহলি বলেছেন, ‘শুবমান গিলকে বলেছি, স্বপ্নেও এমন কোনো মুহূর্তের কথা ভাবলে তুমি আবার ঘুমাতে যাবে, কারণ, এটা বিশ্বাস হবে না। এটা ছিল আমার জন্য স্বপ্নের মতো শুরু।’