গায়ানায় ইংল্যান্ডকে অ্যাডিলেড ফিরিয়ে দিয়ে ফাইনালে ভারত
২০২২ সালের সেমিফাইনাল ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম একপেশে, অ্যাডিলেডে ভারতের দেওয়া ১৬৯ রানের লক্ষ্যকে ইংল্যান্ডের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস বানিয়ে ফেলেছিল ছেলেখেলা। দুই বছর পর গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামের স্পিন-সহায়ক উইকেটে ইংল্যান্ডকে সেই অ্যাডিলেড ফিরিয়ে দিল ভারত।
বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ১৭২ রানের লক্ষ্যে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড গুটিয়ে গেছে ১০৩ রানে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পরে ব্যাটিং করা দলের যেটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে রানের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৮ রানে জিতে ১০ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে চলে গেছে ভারত। আগামীকাল বার্বাডোজের ব্রিজটাউনের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই দলই এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ হারেনি। ফলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রথমবারের মতো দেখতে যাচ্ছে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।
ধীরগতির ও নিচু বাউন্সের এমন উইকেটে ১৭২ রানের লক্ষ্য ইংল্যান্ডের জন্য সহজ হবে না, সেটি বোঝা যাচ্ছিল আগে থেকেই। পাওয়ারপ্লেতে ভালো একটা শুরু দরকার ছিল তাদের। শুরুতে আক্রমণের দায়িত্বটা নিয়েছিলেন বাটলারই, প্রথম ৩ ওভারে সল্ট খেলেন মাত্র ৪ বল। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই নতুন বোলার অক্ষর প্যাটেলকে রিভার্স সুইপ করতে যাওয়া বাটলারের গ্লাভসে লেগে ক্যাচ যায় উইকেটকিপার পন্তের হাতে। ম্যাচ ঘুরে যায় মূলত সেখান থেকেই।
পাওয়ারপ্লেতে ইংল্যান্ড হারায় আরও ২ উইকেট। যশপ্রীত বুমরার গতির বৈচিত্র্যের সঙ্গে পেরে ওঠেননি ফর্মে থাকা ফিল সল্ট, অক্ষরের নিচু বাউন্সের বল মিস করেন জনি বেয়ারস্টো। পাওয়ারপ্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড তোলে ৩৯ রান।
তবে কিছুই যে ইংল্যান্ডের পক্ষে যাচ্ছিল না, সেটি প্রমাণ করতেই যেন অক্ষর প্যাটেলের বলে স্টাম্পিং হন মঈন আলী—বল প্যাডে লেগে পন্তকে পেরিয়ে গেছে ভেবে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। স্পিনের পরের শিকার স্যাম কারেন, কুলদীপের গুগলি পড়তে না পেরে তিনি এলবিডব্লু। অ্যাডিলেডে বিনা উইকেটে ১৭০ রান তোলা ইংল্যান্ড গায়ানায় ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ৪৯ রানেই। এই ৫ উইকেট তারা হারায় চতুর্থ থেকে নবম ওভারের মধ্যে। এ সময়ে আসে মাত্র একটি বাউন্ডারি।
কার্যত ইংল্যান্ডের শেষ ভরসা হয়ে ছিলেন হ্যারি ব্রুক, পানি পানের বিরতির পর কুলদীপকে রিভার্স সুইপে চার মেরে লড়াইয়ের আভাসও দেন। কিন্তু পরের বলে আবার রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে হন বোল্ড। ক্রিস জর্ডান এরপর কুলদীপের তৃতীয় শিকার, লিয়াম লিভিংস্টোন ও আদিল রশিদ হন রানআউট। ইংল্যান্ডের পরাজয় বেশ কিছুক্ষণ থেকেই হয়ে দাঁড়িয়েছিল সময়ের অপেক্ষা। ১৭তম ওভারে বুমরার বলে জফরা আর্চার এলবিডব্লু হওয়ায় নিশ্চিত হয় সেটি।
গায়ানায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস এদিন সুবিধার ছিল না মোটেও। বৃষ্টিতে প্রায় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর শুরু হওয়া খেলা ৮ ওভার পর থামে আবার। শুরুতে ভারতের ব্যাটিং অবশ্য শুরুতেই চাপে পড়ে গিয়েছিল। তৃতীয় ওভারে বিরাট কোহলির পর ষষ্ঠ ওভারে ঋষভ পন্তকে হারায় তারা। রিস টপলিকে ছক্কা মারার ১ বল পর আবার চড়াও হতে গিয়ে বোল্ড ৯ বলে ৯ রান করা কোহলি। টুর্নামেন্টটি মোটেও ভালো যাচ্ছে না তাঁর। স্যাম কারেনের বলে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ তোলেন ৬ বলে ৪ রান করা পন্ত।
বৃষ্টিবিরতিতে ভারতের ছন্দপতন হয় একটু। বিরতির পর সতর্ক থাকেন রোহিত শর্মা ও সূর্যকুমার যাদব। ভারতের ফিরতি লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন দুজন। রোহিত শর্মা খেলেন ৩৯ বলে ৫৭ রানের ইনিংস। সঙ্গে ছিলেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করা সূর্যকুমার যাদব।
১৩তম ওভারে কারেনের ওপর চড়াও হন দুজনই, আসে ১৯ রান। রোহিত এবারের বিশ্বকাপের তৃতীয় ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৬ বলে, সূর্যকুমারও দেখাতে থাকেন তাঁর শটের পরিধি। দুজনের জুটি ইংল্যান্ডকে হুমকি দিচ্ছিল ভালোভাবেই। ইংল্যান্ডকে ব্রেকথ্রু এনে দেন আদিল রশিদ। প্রথম ৩ ওভারে তেমন প্রভাব রাখতে না পারলেও নিজের চতুর্থ ওভারে গুগলিতে বোল্ড করেন রোহিতকে। সূর্যকুমারের সঙ্গে তাঁর জুটিতে ৫০ বলে ওঠে ৭৩ রান। এক ওভার পর আর্চারের ব্যাক অব দ্য হ্যান্ড স্লোয়ারে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন সূর্যকুমারও।
দ্রুত দুই উইকেটে চাপ বাড়ে ভারতের, এবার সামনে আসেন হার্দিক পান্ডিয়া। মাঝে লিভিংস্টোনের বিপক্ষে সতর্ক ছিলেন তিনি, প্রথম ৯ বলে করেন মাত্র ৯ রান। এরপর ক্রিস জর্ডানকে মারেন টানা দুটি ছক্কা, যদিও তৃতীয়টি মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েন। পরের বলে শিবম দুবেও হন কট বিহাইন্ড। ২.১ ওভার বাকি থাকতে ভারতের স্কোর ছিল ১৪৬ রান। রবীন্দ্র জাদেজা ও অক্ষর প্যাটেলের ১২ বলে ২৪ রানের ছোট জুটিতে অবশ্য ১৭০ পেরোয় ভারত। ছয় বোলারকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেছেন বাটলার, একজন ছাড়া উইকেটের দেখা পেয়েছেন সবাই। তবে যিনি উইকেট পাননি, সেই লিভিংস্টোন ছিলেন দারুণ কার্যকর-৪ ওভারে তিনি দেন মাত্র ২৪ রান। ম্যাচের ফলে অবশ্য এর কোনো প্রভাবই টের পাওয়া যায়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ২০ ওভারে ১৭১/৭ (রোহিত ৫৭, কোহলি ৯, পন্ত ৪, সূর্যকুমার ৪৭, পান্ডিয়া ২৩, জাদেজা ১৭*, দুবে ০, অক্ষর ১০, অর্শদীপ ১*; টপলি ১/২৫, আর্চার ১/৩৩, কারেন ১/২৫, রশিদ ১/২৫, জর্ডান ৩/৩৭, লিভিংস্টোন ০/২৪)।
ইংল্যান্ড: ১৬.৪ ওভারে ১০৩ (সল্ট ৫, বাটলার ২৩, মঈন ৮, বেয়ারস্টো ০, ব্রুক ২৫, কারেন ২, লিভিংস্টোন ১১, জর্ডান ১, আর্চার ২১, রশিদ ২, টপলি ৩* ; অর্শদীপ ০/১৭, বুমরা ২/১২, অক্ষর ৩/২৩, কুলদীপ ৩/১৯, জাদেজা ০/১৬, পান্ডিয়া ০/১৪)।
ফল: ভারত ৬৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: অক্ষর প্যাটেল।