বাবর–আফ্রিদিদের বিরোধ কি কানাডার বিপক্ষেও ডোবাবে পাকিস্তানকে
পাকিস্তান ক্রিকেট আর কোন্দল যেন একসূত্রে গাঁথা। অতীতেও অসংখ্যবার দলীয় কোন্দল ও বিতর্কের কারণে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে দেশটি। এবারও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে হারের পর সামনে এসেছে পাকিস্তান দলের মধ্যে বিরোধের খবর।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ক্রিকেট পাকিস্তান আজ কানাডার বিপক্ষে ম্যাচের আগে দলের ভেতরে চলমান এই কলহের খবর সামনে এনেছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুপার ওভারে হেরে অঘটনের শিকার হয়েছে পাকিস্তান। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে ১১৯ রানে থামিয়েও জিততে পারেনি তারা, হেরেছে ৬ রানে।
টানা দুই হারে দলটি এখন বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পথে। এমন পারফরম্যান্সের কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচনার মুখেও পড়তে হচ্ছে দলের খেলোয়াড়দের। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে অন্তঃকোন্দলের খবর সামনে আসার পর।
সূত্রের বরাত দিয়ে ক্রিকেট পাকিস্তান জানিয়েছে, জাতীয় দলের মধ্যে বিভাজন জেঁকে বসেছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে চলছে দলাদলি। অধিনায়কত্ব নিয়ে তৈরি হওয়া বিরোধ বন্ধুদের এখন শত্রুতে রূপান্তরিত করেছে।
গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ব্যর্থতার পর বাবর আজম সব সংস্করণের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর জায়গায় টি–টোয়েন্টির অধিনায়ক করা হয় শাহিন শাহ আফ্রিদিকে। আফ্রিদির অধিনায়কত্বে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হারে পাকিস্তান। এরপর পিএসএলে আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন লাহোর কালান্দার্সও প্লে-অফ পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয়।
পরবর্তী সময়ে পিসিবি বোর্ডের শীর্ষ পদেও আসে পরিবর্তন। এর জেরে গত ৩১ মার্চ আফ্রিদিকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে আবারও দায়িত্ব দেওয়া হয় বাবরকে। সব মিলিয়ে দলের ভেতর তৈরি হয় অস্থির এক পরিবেশের। ক্রিকেট পাকিস্তান বলছে, অনেক খেলোয়াড় প্রয়োজন ছাড়া নিজেদের মধ্যে কোনো ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করছেন না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দলের খেলাতেও। এমনকি খেলোয়াড়দের এ বিভাজন বোর্ড কর্মকর্তাদেরও নাকি হকচকিত করে দিয়েছে।
নিজেদের খবরে বাবর ও আফ্রিদির বিরোধের বিস্তারিত তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যমটি। কদিন আগেও এ দুজনের বন্ধুত্ব এমন ছিল যে নেতৃত্ব পরিবর্তনের ব্যাপারে ভাবাটাও ছিল নিষিদ্ধ। অথচ বাবরকে সরিয়ে আফ্রিদিকে অধিনায়ক করার পর বদলে গেছে সে চিত্র। এর পর থেকেই দুজনের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে।
এর জন্য পিসিবি কর্তৃপক্ষের দায়ও অবশ্য কম নয়। একটি সিরিজের পর আফ্রিদিকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং তাঁর নামে ভুয়া বিবৃতি দেওয়ার ঘটনা ক্ষুব্ধ করেছে এ পেসারকে। পরবর্তী সময়ে এমনও গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল যে আফ্রিদিকে সহ-অধিনায়কের প্রস্তাব দিয়েছিল পিসিবি, যা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। পিসিবি অবশ্য এমন কোনো প্রস্তাবের কথা অস্বীকার করেছে। এসবের মধ্যে আফ্রিদি অবশ্য দলের হয়ে নিয়মিত পারফর্ম করে গেছেন।
সূত্রের বরাত দিয়ে ক্রিকেট পাকিস্তান জানিয়েছে, দলে অধিনায়ক হিসেবে বাবরের যে সম্মান পাওয়া উচিত, তা তিনি পাচ্ছেন না। প্রয়োজনের সময় খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তাও পাচ্ছেন না। ইমাদ ওয়াসিম ও মোহাম্মদ আমিরকে নাকি বাবর পছন্দ করেন না। কিন্তু অবসর ভেঙে ফেরার পর তাঁদের দলেও ডাকা হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত দলের সমন্বয়ে প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে বাজে পারফরম্যান্সের পরও শাদাব খান ও ইফতেখার আহমেদের সুযোগ পাওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। দলের এমন বিশৃঙ্খল অবস্থার খবর নাকি পিসিবি আগে থেকেই জানত। কিন্তু বিশ্বকাপের কারণে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
খেলোয়াড়দের মধ্যকার বিরোধ নিয়ে কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম বলেছেন, ‘খেলোয়াড়েরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলে না। এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, আর আপনি দেশের হয়ে খেলছেন। এ ধরনের খেলোয়াড়দের দেশে বসিয়ে রাখুন।’
এদিকে প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থতার কারণে আজ কানাডার বিপক্ষে ম্যাচে দলে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পাকিস্তান দল নিয়ে সব সমালোচনা বন্ধ হওয়ার উপায় একটিই—গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে দাপটের সঙ্গে জেতা এবং ভাগ্যের সহায়তা নিয়ে সুপার এইটে ওঠা। বাবর–আফ্রিদিরা সেটি করতে পারবেন কি না, সেটা কয়েক দিনের মধ্যেই বোঝা যাবে।