‘কোহলি যেটা করেছে, সেটা আদৌ ক্রিকেট নয়’

সদ্য সমাপ্ত বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে কোহলির আচরণ ছিল প্রশ্নবিদ্ধএক্স

সময় খারাপ যাচ্ছে? মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের কাজটা করে যাও, সময় বদলানোর চেষ্টা করো। এই দর্শন মেনেই এগোন বেশির ভাগ খেলোয়াড়।

বিরাট কোহলি সম্ভবত সেই বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের মধ্যে পড়েন না। তাঁকে খোঁচালে তিনি উত্তেজিত হনই। কখনো কখনো কেউ না খোঁচালেও তিনি উত্তেজিত হন এবং অন্যদের উত্তেজিত করে তোলেন।

খুব সম্প্রতি শেষ হওয়া বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির কথাই ধরুন। সিরিজটা খুব খারাপ কেটেছে ভারতের এবং সমকালীন ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানেরও। আসলে সময়টা তাঁর খারাপ যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই।

তবে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিটা শুরু হয়েছিল কোহলির ফর্মে ফেরার আভাস দিয়ে। পার্থে প্রথম টেস্টে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে এই সংস্করণে ১৬ মাসের সেঞ্চুরি-খরা কাটিয়েছিলেন।

কিন্তু এরপর আবার নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। বাকি ৮ ইনিংসে একটিও ফিফটি নেই। এই ৮ ইনিংসেই আউট হয়েছেন অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেটকিপার কিংবা স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। কখনো কখনো খুব দৃষ্টিকটুভাবে বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে। একটা সেঞ্চুরির পরও সিরিজে তাঁর মোট রান ১৯০, গড় ২৩.৭৫। অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ সফরে এটাই ব্যাট হাতে তাঁর সবচেয়ে বাজে সিরিজ।

এ রকম সময়ে নানা রকম চাপ থাকে। নিজেকে ফিরে পাওয়ার চাপ তো আছেই, মাঠে এবং মাঠের বাইরে নানা রকম কথা শুনতে হয়, সেগুলো সামলাতে হয় খুব ঠান্ডা মাথায়। কোহলি এবার ব্যর্থ সেখানেও।

আরও পড়ুন

মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম দিনে একেবারে অকারণে অস্ট্রেলিয়ান তরুণ ওপেনার স্যাম কনস্টাসকে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা মেরেছেন। যার জন্য পরে তঁকে শাস্তিও পেতে হয়েছে।

ওই টেস্টেই কোহলির ভুলে রান আউট হয়েছেন দারুণ খেলতে থাকা তাঁর সতীর্থ যশস্বী জয়সোয়াল। পরে কোহলি নিজে আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে দর্শকদের দুয়ো শুনেছেন। যা শুনে নিজেকে সামলাতে না পেরে ড্রেসিংরুমের টানেলে ঢুকে পড়ার পর আবার বের হয়ে এসে দর্শকদের পাল্টা কিছু বলেছেন।

সিডনিতে দর্শকদের স্লেজিং শুনেও নিজেকে সংযত করতে পারেননি। মাঠেই পায়জামা টেনে, পকেটে হাত ঢুকিয়ে অস্ট্রেলিয়ান দর্শকদের মনে করিয়ে দিয়েছেন স্মিথ-ওয়ার্নারদের সেই কুখ্যাত ‘স্যান্ডপেপার-গেট’ কেলেঙ্কারির কথা।

ব্যাট হাতে যদি ছন্দে থাকতেন, তাহলে এসবের অনেক কিছুই হয়তো চাপা পড়ে যেত। কিন্তু সময়টা যেহেতু খারাপ যাচ্ছে কোহলির, তাঁর এমন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমনকি সুনীল গাভাস্কারের মতো কিংবদন্তি, যিনি বেশির ভাগ সময় ধারাভাষ্য কক্ষে বা বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়ার সময় ভারতীয় খেলোয়াড়দের সামনে ঢাল হয়ে থাকেন বলে মনে হয়, তিনিও কিছুটা বিরক্ত কোহলির ওপর। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড-এ এক কলামে গাভাস্কার কোহলিকে আরও সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

কনস্টাসের সঙ্গে সেই ঘটনার জন্য কোহলিকেই দায়ী করে গাভাস্কার লিখেছেন, ‘কোহলি যেটা করেছে, (কনস্টাসকে) কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দেওয়া, সেটা আদৌ ক্রিকেট নয়। ভারতীয়দের প্ররোচিত করা হলে ওরা পাল্টা জবাব দিতে দ্বিধা করে না, কিন্তু এখানে এমন কোনো প্ররোচনাই ছিল না।’

ধাক্কার পর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় কোহলি ও কনস্টাসের মধ্যে
এএফপি

দর্শকদের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে কোহলি যা যা করেছেন, সেটা আসলে তাঁর এবং ভারত দলেরই ক্ষতি করেছে বলে মনে করেন গাভাস্কার, ‘খেলোয়াড়েরা অভিজ্ঞতা থেকে যা শেখে, তা হলো, দর্শকদের পাল্টা জবাব দিতে যাওয়া একেবারেই অর্থহীন। যারা খেলা দেখতে আসে, তারা স্রেফ নিজেদের বিনোদনের জন্যই খেলোয়াড়দের খোঁচায়, এটা কখনোই ব্যক্তিগত কিছু নয়। সেগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখানো খেলোয়াড়ের কোনো মঙ্গল করে না, বরং আরও ক্ষতি করে। কোহলির বোঝা উচিত যে দর্শকদের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে সে তার সতীর্থদের ওপর আরও চাপে ফেলছে এবং তারাও দর্শকদের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছে।’

এসবের বাইরে পুরো সিরিজে বারবার একইভাবে আউট হওয়ায়ও কোহলির সমালোচনা করেছেন গাভাস্কার, ‘সে অফ-স্টাম্পের আশপাশের বলগুলো খোঁচা মারা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সে দলে এমন কোনো অবদান রাখতে পারেনি, যা দলীয় রানটাকে আরও বড় করতে পারত।’

আরও পড়ুন

শুধু কোহলি নন, সিরিজটা খুব বাজে কেটেছে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মারও। সিরিজের প্রথম টেস্টে তিনি খেলতে পারেননি পারিবারিক কারণে। পরের তিন টেস্টে সব মিলিয়ে তাঁর রান মাত্র ৩১। বাজে ফর্মের কারণেই সিডনিতে শেষ টেস্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন ভারত অধিনায়ক।

রোহিত শর্মার অস্ট্রেলিয়া সফরও খুব বাজে কেটেছে
এএফপি

দুজনই যদি ভারতের টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন, সেটা খুব বিস্ময়কর হবে না বলেও মনে করেন গাভাস্কার, ‘সাহসিকতার সঙ্গে (সিডনি টেস্ট থেকে) সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তার (রোহিতের) টেস্ট ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। ভারত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ এবং আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি  ইংল্যান্ড সফর দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে পরের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচকেরা যদি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে এমন খেলোয়াড় খোঁজেন, যারা ২০২৭ সালের পরবর্তী ফাইনালে খেলতে পারবে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’