শুধুই সেরা খেলোয়াড়, নাকি ভারতের হয়ে শিরোপাও—এবার কোন কোহলি
২০২২ সালে মেলবোর্নে হারিস রউফের বলে মারা সেই শটটি বিরাট কোহলির টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেরই সেরা কি না, এমন আলোচনা উঠেছিল। লেংথ বলে রউফের মাথার ওপর দিয়ে তুলে মারা ছক্কার কাব্যিক বর্ণনা দিয়েছিলেন ধারাভাষ্যে থাকা হার্শা ভোগলে, ‘কোহলি গোজ ডাউন দ্য গ্রাউন্ড, কোহলি গোজ আউট অব দ্য গ্রাউন্ড।’ অস্ট্রেলিয়ার এসইএন রেডিওর জেরার্ড হোয়েটেলির বলা ‘শট অব অ্যান এম্পেরর (সম্রাটের শট)’ কথাটাও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি।
এমসিজিতে ৯০ হাজারের বেশি দর্শকের সামনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের শেষ ২ ওভারেও দরকার ছিল ৩১ রান। রউফের করা ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে মারা কোহলির ছক্কার পর শেষ বলে এল আরেকটি। ম্যাচের শেষ বলে ভারতের জয়ের পর কোহলির উদ্যাপনও ছিল দেখার মতোই। ১৬০ রানের লক্ষ্যে ৩১ রানেই ৪ উইকেট হারানোর পর কোহলির ৫৩ বলে ৮২ রানের ইনিংস এনে দিয়েছিল স্মরণীয় এক জয়। শেষ দিকের নাটক, এমসিজির আবহ—টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেরই স্মরণীয় এক ম্যাচ হয়ে আছে সেটি। আর তাতে নায়ক কোহলি।
ম্যাচটি ছিল গ্রুপ পর্বের, ভারত ও পাকিস্তান দুই দলেরই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ। ভারতের কাছে হারে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের কিছু যায় আসেনি, শেষ পর্যন্ত ফাইনালে গেছে দলটা। আর সেমিফাইনালে গিয়েও কোহলি অর্ধশতক পান ঠিকই, কিন্তু ১০ উইকেটে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় ভারতকে। কোহলির টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ক্যারিয়ারের হাইলাইটস বলা যায় এটিকেই। তিনি স্মরণীয় ইনিংস খেলেছেন, স্মরণীয় টুর্নামেন্ট কাটিয়েছেন, দলটি ভারত বলে অনেক সময় সেসবের প্রচারও হয়েছে অনেক। কিন্তু শিরোপার আক্ষেপ থেকেই গেছে তাঁর।
২০১২ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছিলেন কোহলি। এখন পর্যন্ত ভারতের হয়ে সেমিফাইনাল খেলেছেন ৩টি, ফাইনাল ১টি। বিশ্বকাপে একাধিকবার (২০১৪ ও ২০১৬) টুর্নামেন্ট–সেরা হওয়ার কীর্তিও তাঁরই। অথচ ২০১৪ সালে মিরপুরের ফাইনালে হেরেছিল ভারত, পরেরবার দেশের মাটিতে থামতে হয়েছিল সেমিফাইনালেই। এবার কি শিরোপার আক্ষেপটা ঘুচবে তাঁর?
যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজে এবারের বিশ্বকাপে অবশ্য কোহলির খেলাই নিশ্চিত ছিল না। গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের ওই ম্যাচের পর লম্বা একটা সময় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে দূরে ছিলেন, এখনকার অধিনায়ক রোহিত শর্মার সঙ্গে এ সংস্করণে তাঁর ভবিষ্যৎ তখন পড়ে গিয়েছিল সংশয়ে। তবে এ বছরের শুরুতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ফেরার পর নিশ্চিত হয় কোহলি ভারতের বিশ্বকাপ-পরিকল্পনায় আছেন।
আইপিএলে দারুণ একটা সময় পার করে বিশ্বকাপ খেলতে গেছেন কোহলি। আবারও হয়েছেন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, তবে সেখানেও বেঙ্গালুরুর শিরোপার আক্ষেপ ঘোচেনি। শুরুতে কোহলির স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা হলেও লিগ শেষে সেটি বেশ স্বাস্থ্যকর—১৫৪.৬৯। যুক্তরাষ্ট্রে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সবার শেষে, খেলেননি বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও। তবে সে ম্যাচেও যশস্বী জয়সোয়ালের না খেলা ইঙ্গিত দিয়েছে, এবার ভারতের ওপেনিংয়ে রোহিতের সঙ্গে দেখা যেতে পারে কোহলিকেই।
আইপিএলে তিনি বেশ কয়েক বছর ধরেই এ ভূমিকায় খেলছেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও কোহলির জন্য ওপেনিংয়ে খেলা নতুন নয়, তবে যে ৫ বার ওপেন করেছেন তার শেষটিও ২০১৭ সালের ঘটনা। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে চাপের মুখে ভারতের জড়সড় ব্যাটিং নিয়ে আলোচনাটা পুরোনো। ২০১৩ সালের পর আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে ভারতের শিরোপা না জেতার অন্যতম কারণও মনে করা হয় সেটিকে। কোহলির সামনে সেই ছবিটা মুছে সাফল্যের ছবি আঁকার চ্যালেঞ্জ।
ইনস্টাগ্রামে কোহলির অনুসারী এখন ২৬ কোটি ৯০ লাখের মতো, খেলোয়াড়দের মধ্যে এ ক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে এগিয়ে শুধু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি। সেটিকে মানদণ্ড ধরলেও এ প্রজন্মে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা তিনি। ২০১১ সালে ভারতের ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন, তবে তখনো কোহলি এখনকার কোহলি হয়ে ওঠেননি। বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেছে, হয়তো এটিই হতে যাচ্ছে তাঁর শেষ বিশ্বকাপ।
প্রশ্ন হচ্ছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোহলি কি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন রউফের বলে মারা ওই শটটার কারণেই? নাকি এবার তাঁর সাফল্যের মুকুটেও কিছু যুক্ত হবে?