দুঃসময় যখন চলতে থাকে, তখন কোনো কিছুই নাকি পক্ষে থাকে না। হার্দিক পান্ডিয়ার হয়েছে তেমন দশা। পান্ডিয়ার নেতৃত্বে এবারের আইপিএলে বিতিকিচ্ছিরি দশা মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের। তিনি নিজেও খুব একটা ভালো করতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় পান্ডিয়া আজ প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিলেন বড় ভাই ক্রুনাল পান্ডিয়ার দল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসকে।
তবে ছোট ভাই হলে কী হবে, মাঠে হার্দিক পান্ডিয়ার মুম্বাইকে কোনো ছাড় দেয়নি ক্রুনালের দল। ঘরের মাঠ অটল বিহারি বাজপেয়ী স্টেডিয়ামে মুম্বাইকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে লক্ষৌ। অপেক্ষাকৃত মন্থর উইকেটে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ১৪৪ রান করেছিল মুম্বাই। লক্ষ্ণৌ লক্ষ্য ছুঁয়েছে ফেলেছে ৪ উইকেট আর ৪ বল বাকি রেখে। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচসেরা হয়েছেন লক্ষ্ণৌর মার্কাস স্টয়নিস।
টানা ৩ হারে পয়েন্ট তালিকার নয়েই রয়ে গেছে মুম্বাই। এ জয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের চেন্নাই সুপার কিংসকে চারে নামিয়ে তিনে উঠে এসেছে লক্ষ্ণৌ। মুম্বাই ও লক্ষ্ণৌ দুই দলই অবশ্য সমান ১০টি করে ম্যাচ খেলেছে। চেন্নাই খেলেছে এক ম্যাচ কম। আজ রাতেই পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে আবারও তিনে উঠে আসার সুযোগ আছে চেন্নাইয়ের। এ ম্যাচটিই এবারের আইপিএলে মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচ হতে চলেছে।
হার্দিক পান্ডিয়া–ক্রুনাল পান্ডিয়া দুই ভাই–ই আজ ব্যাট হাতে একটি করে বল খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তবে প্রথমজন তাঁর ইনিংসটা ভুলে যেতে চাইবেন। লক্ষ্ণৌর বোলার ও ফিল্ডারদের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে মুম্বাই যখন ২৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ঝুঁকছিল, তখন ব্যাটিংয়ে আসেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু দলকে বিপদ থেকে উদ্ধারের বদলে আরও ডুবিয়ে দিয়েছেন। নিজের খেলা প্রথম বলেই ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে।
পাওয়ারপ্লেতেই ৪ উইকেট হারানো মুম্বাইয়ের সংগ্রহটা কিছুটা ভদ্রস্থ হয়েছে ওপেনার ঈশান কিষান ও তরুণ নেহাল বাধেরার পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৬০ রানের সুবাদে। শেষ দিকে টিম ডেভিডের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ১৫০–এর কাছাকাছি পৌঁছায় মুম্বাই। ৩৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌর সেরা বোলার মহসিন খান। একটি করে উইকেট পেয়েছেন চারজন—স্টয়নিস, রবি বিষ্ণই, নাভিন উল হক এবং চোট থেকে ফেরা আলোচিত ফাস্ট বোলার মায়াঙ্ক যাদব।
রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই অভিষিক্ত আরশিন কুলকার্নিকে হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে স্টয়নিসের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। ব্যক্তিগত ২৮ রানে রাহুল আউট হলেও চারে নামা দীপক হুদার সঙ্গে ৪০ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ একরকম লক্ষ্ণৌর হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন স্টয়নিস।
এ দুজন আউট হওয়ার পর অ্যাশটন টার্নার ও আয়ুশ বাদোনিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তবে নিকোলাস পুরান আর কোনো ক্ষতি হতে দেননি। ক্রুনালকে সঙ্গে নিয়ে লক্ষ্ণৌকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন পুরান।
ব্যাটিংয়ে ‘গোল্ডেন ডাক’ মারলেও মুম্বাইয়ের বোলারদের মধ্যে আজ হার্দিক পান্ডিয়াই সবচেয়ে সফল। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। হার্দিকের ভাই ক্রুনালও ১টি বলই খেলেছেন, তা তো আগেই বলা হয়েছে। সেই বলটা ছিল ছোট ভাইয়েরই করা, যেটি থেকে তিনি সিঙ্গেল নিয়েছেন।
দুই ভাইয়ের পরের লড়াইটা আগামী ১৭ মে, মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস: ২০ ওভারে ১৪৪/৭
(বাধেরা ৪৬, ডেভিড ৩৫*, কিষান ৩২; মহসিন ২/৩৬, নাভিন ১/১৫, স্টয়নিস ১/১৯)
লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস: ১৯.২ ওভারে ১৪৫/৬
(স্টয়নিস ৬২, রাহুল ২৮, হুদা ১৮; পান্ডিয়া ২/২৬, নবী ১/১৬, কোয়েৎজি ১/২৯)
ফল: লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মার্কাস স্টয়নিস।