হারমানপ্রীতের কঠোর শাস্তি চাইলেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার

পুরস্কার বিতরণের মঞ্চেও অক্রিকেটীয় আচরণ করেছেন ভারত নারী দলের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর (ডানে)। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেছবি : শামসুল হক

আইসিসি এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। তবে শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর যে অসংযত আচরণ করেছেন, তাতে শাস্তির ঘোষণা আসা প্রায় নিশ্চিত।

এমন সময়ে ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার মদন লাল হারমানপ্রীতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে ম্যাচের সময়ে ও ম্যাচের পরে হারমানপ্রীত যে সব আচরণ করেছেন, তার সমালোচনা করেছেন দলটির সাবেক অধিনায়ক আনজুম চোপড়াও।

শনিবার মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত মেয়েদের তৃতীয় ওয়ানডে ছিল চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। সিরিজ–নির্ধারণী ম্যাচটি শেষ হয় টাইয়ে। তবে ক্রিকেটীয় রোমাঞ্চের দিনটিকে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ দিয়ে অস্বস্তিকর করে তোলেন হারমানপ্রীত। আম্পায়ার তানভীর আহমেদ তাঁকে আউটের সংকেত দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাট দিয়ে স্টাম্প ভাঙেন। ফিরে যাওয়ার সময় চোখ রাঙানি দেন আম্পায়ারের দিকে। পরে পুরস্কার বিতরণীতে সরাসরিই আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

পুরস্কার বিতরণীর সময় এক পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের ক্রিকেটাররা
ছবি: প্রথম আলো

সেখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশ দলকে কটাক্ষও করেন হারমানপ্রীত। ভারত ও বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ট্রফি হাতে ছবি তোলার জন্য দাঁড়ালে হারমানপ্রীত বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানার উদ্দেশে বলেন, ‘শুধু তোমরা কেন, আম্পায়ার তোমাদের ম্যাচ টাই করিয়েছে। আম্পায়ারকেও ডাকো। একসঙ্গে ছবি তুলি।’ এ সময় ভারত অধিনায়কের শরীরী ভাষাতেও ছিল তাচ্ছিল্যের ভাব। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খুবই অস্বস্তিকর হয়ে ওঠায় নিগার তাঁর দলকে নিয়ে ড্রেসিংরুমে চলে যান।

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মদন লাল হারমানপ্রীতের আচরণকে ‘পীড়াদায়ক’ আখ্যা দিয়েছেন। আজ এক টুইটবার্তায় তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে হারমানপ্রীতের শাস্তিও দাবি করেন, ‘বাংলাদেশ মেয়েদের বিপক্ষে হারমানপ্রীতের আচরণ ছিল পীড়াদায়ক। সে খেলার চেয়ে বড় নয়। ভারতের ক্রিকেটের জন্য সে দুর্নাম বয়ে এনেছে। ওর বিরুদ্ধে বিসিসিআইয়ের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

মেয়েদের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে ১৫৭টি ম্যাচ খেলা আনজুম চোপড়াও হারমানপ্রীতের আচরণের যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না। হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘রাগ কমার পর ও যখন শান্ত হবে, আমি নিশ্চিত, অসন্তুষ্টি প্রকাশে যে ওর আরও সচেতন হওয়া দরকার, সেটা নিজেই বুঝবে। অসন্তুষ্টি প্রকাশে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু কীভাবে আর কখন করবে, সেটা দেখতে হবে। কথা বলার সময় শব্দচয়নে ওর আরও যত্নশীল হওয়া উচিত।’

আনজুমের মতে, বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাশামতো খেলতে না পারার হতাশা থেকেও হারমানপ্রীত এমন আচরণ করে থাকতে পারেন, ‘ভারতীয় দল যদি মনে করে যে কিছু সিদ্ধান্ত তাদের পক্ষে যায়নি, সেটা কি ভিন্নভাবে সামাল দেওয়া যেত না? কেন ম্যাচ–পরবর্তী পুরস্কার বিতরণীতে অধিনায়ককে এভাবে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে হলো? কীভাবে পরিস্থিতি আরও উত্তুঙ্গ হলো? ভারতীয় দলের হতাশার একটা কারণ হতে পারে নিজেদের মান অনুযায়ী খেলতে না পারা, কিন্তু সেটা ড্রেসিংরুমেই রাখতে পারত। এভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করা ঠিক হয়নি।’

হারমানপ্রীতের আচরণ নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলনে জিজ্ঞেস করা হলে নিগার বলেন, ‘ও (হারমানপ্রীত) যেটা করেছে, সেটা ওরই। সেটা আমাদের কোনো কিছু নয়। তবে আমি বলব, ক্রিকেটার হিসেবে সে আরেকটু ভালোভাবে কথা বলতে পারত। তবে ও করেছে, ওর ব্যাপার। আমার কোনো মন্তব্য করা উচিত হবে না।’

ট্রফির সঙ্গে ছবি না তুলে দল নিয়ে সোজা ড্রেসিংরুমে চলে যাওয়ার বিষয়েও খুব বেশি কিছু বলতে চাননি নিগার, ‘কিছু কথা…সব সময় তো সবকিছু বলা যায় না। যা হয়েছে, আমার কাছে মনে হয়নি যে আমার দল নিয়ে ওখানে থাকব। কিছু কথা ছিল যে আমার মনে হয়নি ওখানে থাকা উচিত হবে দল নিয়ে। কারণ, ক্রিকেট খুবই সম্মানজনক একটি জায়গা। শৃঙ্খলার জায়গা। জেন্টলমেনস গেম। আমার কাছে মনে হয়েছে, ওই পরিবেশ ছিল না। তাই দল নিয়ে চলে এসেছি।’