ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে সফরে বিশ্রাম দেওয়া হয় বিরাট কোহলিকে—কথাটা ঠিক আবারও কারও কারও মতে ভুলও। আসলে বাজে ফর্ম কাটিয়ে উঠতে না পারায় বিরাট কোহলিকে দলের বাইরে রাখা হয়েছিল, এমনও মনে করেন কেউ কেউ।
সে যাই হোক, এশিয়া কাপে কালই ফর্মে ফেরার পরীক্ষায় নামছেন কোহলি। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। এই ম্যাচের আগে নিজের মানসিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন ভারতীয় তারকা। বাজে ফর্মে, চারপাশের আলোচনা-সমালোচনায় একজন ক্রিকেটার মানসিকভাবে কেমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান, তা ঠাহর করে নেওয়া যায় কোহলির কথায়।
আইপিএল এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলিয়ে সর্বশেষ ২২ ইনিংসে মাত্র একটি ফিফটি কোহলির। অথচ এই একই খেলোয়াড় বছরের পর বছর ধারাবাহিক ফর্মের অপর নাম হয়ে উঠেছিলেন। মাঠে তাঁর আক্রমণাত্মক মানসিকতা যেমন সমালোচিত হয়েছে, তেমনি মুগ্ধতাও ছড়িয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি কোহলির টানও দেখা হয় অন্য চোখে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই কোহলিকে যেন কমই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে! আগের চেয়ে বেশ চুপচাপ হয়েছেন ভারতের এই সাবেক অধিনায়ক। ব্যাটে রানখরা ও নানা পদের আলোচনা তাঁর মানসিক দৃঢ়তাকে একটু হলেও নড়বড়ে করে দিয়েছে। ঝড় চলেছে কোহলির মনের ভেতর। স্টার স্পোর্টসের সঙ্গে আজ আলাপচারিতায় সে কথা স্বীকারও করেছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান।
গত মাসে ক্রিকেট থেকে কিছুদিনের বিরতি নেওয়ার আগে মানসিকভাবে বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে গেছেন কোহলি। খেলার বাইরে থাকার এই সময়ে তিনি নিজের ব্যাট ছুঁয়েও দেখেননি! যে পাথরসম দৃঢ় মানসিকতার জন্য সবাই এত দিন প্রশংসা করেছেন, কোহলির সে মানসিকতায় চিড় ধরেছিল। নিজেকে খুব ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত মনে হয়েছে তাঁর।
টিভি চ্যানেল স্টার স্পোর্টসের ভিডিওতে কোহলি বলেছেন, ‘গত ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আমি এক মাস ব্যাট ছুঁয়েও দেখিনি। বুঝতে পারছিলাম, ভালো খেলার জন্য নিজের ভেতরে যে তীব্র ক্ষুধা, তা ঠিকমতো অনূদিত করতে পারছি না। নিজেকে বুঝিয়েছি, ক্ষুধাটা এখনো মরেনি। কিন্তু শরীর থামতে বলছিল। মন বলছিল, একটা বিরতি নাও। এমনিতে আমি মানসিকভাবে শক্তিশালি। কিন্তু সবারই একটা সীমা আছে, নিজের সীমানাটা সবাইকে জানতে হয়। অন্যথায়, তা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সে সময়ে আমি অনেক কিছুই শিখেছি।’
কোহলি জানিয়েছেন, সে সময় তিনি ‘মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার অবস্থায় ছিলেন’। তাঁর ভাষায়, ‘বলতে দ্বিধা নেই, তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার দশায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা নিজেদের ভেতরকার দ্বিধার জন্য এসব নিয়ে কথা বলি না। কারও চোখেই আমরা মানসিকভাবে দুর্বল হিসেবে ধরা পড়তে চাই না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, মানসিকভাবে দুর্বল—এটা স্বীকার করার চেয়ে মানসিকভাবে শক্তিশালি হওয়ার ভণিতা করা বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে।’
মাঠে ফিল্ডিংয়ের সময় কোহলির শরীরী ভাষা আক্রমণাত্মক থাকে। এমনকি ব্যাটিংয়ের সময়ও এমন মানসিকতা দেখাতে কার্পণ্য করেন না। খেলার মধ্যে সব সময় এমন মানসিকতা নিয়ে চলাটা ঠিক কতটা স্বাভাবিক?
এই প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন কোহলি, ‘লোকে আমার কাছে জানতে চায়, মাঠে এতটা আক্রমণাত্মক থাকি কীভাবে? আমি শুধু বলি, সবই খেলাটার প্রতি ভালোবাসা থেকে। এটা ভাবি, প্রতিটি বলেই আমার কিছু না কিছু দেওয়ার আছে। মাঠে নিজের শক্তিমত্তার প্রতিটি ইঞ্চি নিংড়ে দিতে চাই। আমার কাছে কিন্তু এই আচরণ অস্বাভাবিক লাগে না। বাইরের লোক থেকে সতীর্থরাও জানতে চায়, সব সময় এমন মানসিকতা ধরে রাখা কীভাবে সম্ভব? আমি শুধু বলি, আমি জিততে চাই।’