এবার নেদারল্যান্ডসের অঘটন, শিকার সেই দক্ষিণ আফ্রিকা
অ্যাডিলেড থেকে ধর্মশালা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে আসল বিশ্বকাপ। সংস্করণ বদলেছে, ভেন্যু বদলেছে, কিন্তু গল্প বদলাল না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি দেখল ৫০ ওভারের বিশ্বকাপও। ১১ মাসের ব্যবধানে আবারও বিশ্ব আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে নেদারল্যান্ডস দেখাল ডাচ রূপকথা। গত নভেম্বরে ২০ ওভারের বিশ্বকাপে ১২ রানে জয়ের পর আজ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচে ৩৮ রানে জিতল ডাচরা। বৃষ্টিতে দুই ঘণ্টা পর শুরু হওয়া ম্যাচে নেদারল্যান্ডস তুলেছিল ৮ উইকেটে ২৪৫ রান। রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট ২০৭ রানে।
নেদারল্যান্ডসের ঘটানো অঘটনে বিশ্বকাপ জমে এখন ক্ষীর। জমছে না বলে বিশ্বকাপ ক্রিকেট থেকে যারা চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা এবার ফিরতে পারেন। বিশ্বকাপকে জমানোর কাজটা করে যাচ্ছে তথাকথিত ছোট দলগুলোই। রোববার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে ‘পুঁচকে’ আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের তবু টেস্ট মর্যাদা আছে, কিন্তু ডাচদের তো সেটিও নেই।
তবে ডাচরা দাবি করতে পারে, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর জিম্বাবুয়ের মতো দুই টেস্ট খেলুড়ে দলকে পেছনে ফেলেই কিন্তু আমরা বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছি!’ সুযোগ পেয়ে যে শুধুই সংখ্যা পূরণ করতে বিশ্বকাপে যায়নি তারা, সেটির প্রমাণ তো পেয়েই গেল ক্রিকেট বিশ্ব। নির্মম ক্রিকেট খেলে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়াকে হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা শিকার হয়ে গেল বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম বড় অঘটনের।
নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টা ঘুরে দাঁড়ানোর কী গল্প লিখেই না পেল কমলা জার্সির দলটি। এবারের বিশ্বকাপে ভালো শুরুর পর পথ হারানোর গল্পই তো এত দিন লিখেছে প্রথমে ব্যাট করা বেশির ভাগ দল। গতকাল টস হেরে ব্যাট করা ডাচরা ২৭তম ওভারের শেষ বলে যখন ষষ্ঠ উইকেট হারায়, তাদের রান মাত্র ১১২। ১৬ ওভার পর সেই দল ইনিংস শেষ করল ২৪৫ রান তুলে। শেষ ১৬ ওভারে ১৩৩ রান যোগ করা নেদারল্যান্ডস আট ওভারের শেষ পাওয়ার প্লেতেই তোলে ৮৯ রান।
ডাচদের ঘুরে দাঁড়ানোয় সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। ২১তম ওভারে পঞ্চম উইকেট পতনের পর উইকেটে আসা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ৭৮ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস শেষ করেন। তাঁর ৬৯ বলের ইনিংসটি সাজানো ১০ চার ও ১ ছক্কায়। শেষ দিকে তাঁকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন রোলফ ফন ডার মারওয়ে ও আরিয়ান দত্ত।
অষ্টম উইকেটে ফন ডার মারওয়েকে নিয়ে ৬৪ রান যোগ করে দলের রানটাকে ২ শর ওপরে নিয়ে যান এডওয়ার্ডস। ১৯ বলে ২৯ রান করে মারওয়ে ফেরার পর উইকেট গিয়ে ঝড় তোলেন আরিয়ান দত্ত। তিন ছক্কায় ৯ বলেই ২৩ রান করেন ২০ বছর বয়সী স্পিনার। বলের চেয়ে রান বেশি করেছেন অধিনায়ক এডওয়ার্ডসও।
স্কোর কার্ডে ২৪৫ রান। তবু ইনিংস শেষে ডাচদের নিয়ে কজন বাজি ধরার সাহস করেছেন কে জানে! আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়া কুইন্টন ডি কককে নিয়ে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ৭.৫ ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকার রানটাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ৩৬-এ। অষ্টম ওভারের শেষ বলটাতেই পতনের সূচনা প্রোটিয়াদের। অফ স্পিনার কলিন অ্যাকারম্যানের করা বল একটু লাফিয়ে ওঠে ডি ককের গ্লাভস ছুঁয়ে আশ্রয় নেয় এডওয়ার্ডসের উইকেটকিপিং গ্লাভসে। ৭ বল পর রোলফ ফন ডার মারওয়ের বাঁহাতি স্পিনে বোল্ড প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর হয়ে হেল ৩৯/২। কী আশ্চর্য, গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাভুমা যখন আউট হলেন তখনো দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ৩৯/২!
আরও দুই ওভার না যেতেই ডাগআউটে অধিনায়কের সঙ্গী এইডেন মার্করাম ও রেসি ফন ডার ডুসেনের মতো দুই ব্যাটসম্যানও। মারওয়েকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে আরিয়ান দত্তকে ক্যাচ দেন ৪ রান করা ডুসেন। এর আগের ওভারেই পেসার পল ফন মিকেরেন বোল্ড করে দিয়েছেন মার্করামকে।
হাইনরিখ ক্লাসেনকে নিয়ে প্রোটিয়া ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটা এরপরই গড়েন ডেভিড মিলার। ১৯তম ওভারে ক্লাসেনকে বিক্রমজিৎ সিংয়ের ক্যাচ বানিয়ে জুটিটা ভাঙেন লোগান ফন বিক। দক্ষিণ আফ্রিকার আশা হয়ে তখনো টিকে থাকা মিলার ২৪তম ওভারে যখন বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ তুলেও বেঁচে গেলেন, মনে হলো ম্যাচটাই ছেড়ে দিলেন ফিল্ডার বাস ডি লিডি।
২৭ রানে জীবন ফিরে পাওয়া কিলার মিলার অবশ্য আর মাত্র ১৫ রানই যোগ করতে পারলেন ফন বিকের বলে বোল্ড হওয়ার আগে। তবু তাঁর ৫২ বলের ৪৩ রানের ইনিংসটিই প্রোটিয়া ইনিংসের সর্বোচ্চ। ৩১ ওভারের শেষ বলে মিলারের বিদায়ের পর প্রোটিয়ারা খেলেছে শুধু ব্যবধানটাকে ভদ্রস্থ করতেই।