চাহাল-জয়সোয়ালের রেকর্ডের রাতে কলকাতাকে উড়িয়ে দিল রাজস্থান
যুজবেন্দ্র চাহালের জন্য রেকর্ডটি নিজের করে নেওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। এ রাতে ৪ উইকেট নেওয়ার পথে আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে গেছেন রাজস্থান রয়্যালসের লেগ স্পিনার। যশস্বী জয়সোয়াল পরে গড়েছেন আইপিএলে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। এই দুজনের রেকর্ডের রাতে ইডেন গার্ডেনে স্বাগতিক কলকাতা নাইট রাইডার্সকে উড়িয়ে দিয়েছে রাজস্থান। কলকাতার দেওয়া ১৫০ রানের লক্ষ্য রাজস্থান পেরিয়ে গেছে ৪১ বল ও ৯ উইকেট বাকি রেখেই। ৪৭ বলে ৯৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে জয়সোয়াল মারেন ১২টি চার ও ৫টি ছক্কা। ২ চার ও ৫ ছক্কায় ২৯ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত ছিলেন স্যামসন।
ম্যাচটি দুই দলই শুরু করেছিল ১১ ম্যাচে সমান ১০ পয়েন্ট নিয়ে। তবে দুই দলের গতিপথ ছিল বিপরীতমুখী—শেষ ৪ ম্যাচে ৩ জয় ছিল কলকাতার, রাজস্থান হেরেছিল শেষ ৬ ম্যাচের ৫টিতেই। রাজস্থান সে বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এল, আর প্লে-অফে যাওয়ার সমীকরণটা এমন হারে কঠিন হয়ে উঠল কলকাতার।
বোলিংয়ে যা লড়াইয়ের সুযোগ, সেটি যেন আজ প্রথম ওভারেই হারিয়ে ফেলে কলকাতা। প্রথম ওভার করতে এসেছিলেন অধিনায়ক নীতিশ রানা, জয়সোয়াল সে ওভারে একাই তোলেন ২৬ রান। ৩ ওভার শেষে রাজস্থানের দলীয় রান গিয়ে দাঁড়ায় ৫৪-তে, সে সময়ের মধ্যে ১৩ বলে ফিফটি হয়ে যায় জয়সোয়ালের। আইপিএলের রেকর্ডটি গড়লেও স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে যুবরাজ সিংয়ের ১২ বলে ফিফটির রেকর্ডটি ১ বলের জন্য স্পর্শ করা হয়নি তাঁর। এর মধ্যে কোনো রান না করে রানআউট হয়ে ফেরেন বাটলার, তবে জয়সোয়ালের তাতে কিছু যায় আসেনি। তিনে নামা অধিনায়ক স্যামসন তাঁর প্রথম ১০ বলে করেন ১২ রান, তবে রাজস্থান পাওয়ারপ্লেতে ঠিকই তোলে ৭৮ রান।
১৬ রানে ব্যাটিং করার সময় স্যামসনের সহজ ক্যাচ ফেলেন সুনীল নারাইন, রাতে কলকাতার চিত্রটা ফুটে ওঠে যেন তাতেই। ধীরে শুরু করা স্যামসন লাফ দেন অনুকূল রায়ের করা ১১তম ওভারে তিন ছক্কা মেরে। এরপর চড়াও হন বরুণ চক্রবর্তীর ওপর। শেষ দিকে জয়সোয়ালের সেঞ্চুরি নাকি স্যামসনের ফিফটি, নাকি এর আগে রাজস্থানের জয় নিশ্চিত হবে—যা উত্তেজনা ছিল তা নিয়েই। জয়সোয়াল সেঞ্চুরি পাননি, স্যামসনও ফিফটি পর্যন্ত যেতে পারেননি। তবে দুজনের ৬৯ বলে ১২১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি স্তব্ধই করে দিতে পেরেছে ইডেনকে।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা কলকাতার দুই ওপেনারই মোটামুটি ভালো শুরু পেয়েছিলেন, যদিও পাওয়ারপ্লের মধ্যেই আউট দুজনই। দুজনই ফিরেছেন দুটি দুর্দান্ত ক্যাচে। জেসন রয় ধরা পড়েন ডিপ স্কয়ার লেগে শিমরন হেটমায়ারের হাতে, রহমানউল্লাহ গুরবাজ মিড অফে সন্দীপ শর্মার হাতে। দুই ক্ষেত্রেই বোলার ছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। ৬ ওভারে কলকাতা তোলে মাত্র ৩৭ রান।
চতুর্থ ওভারে সন্দীপকে টানা দুটি ছক্কা মেরেছিলেন গুরবাজ, তবে কলকাতাকে পরের বাউন্ডারিটি পেতে অপেক্ষা করতে হয় আরও ২৯ বল। প্রথম ২০ বলে ১০ রান করা ভেঙ্কটেশ আইয়ার দশম ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে টানা দুই ছক্কা মেরে খোলস ছেড়ে বেরোনোর ইঙ্গিত দেন। কলকাতাও ইঙ্গিত দেয় রানের গতি বাড়ানোর। ঠিক পরের ওভারেই যুজবেন্দ্র চাহালের বলে হেটমায়ারের আরেকটি দারুণ ক্যাচে পরিণত হন অধিনায়ক নিতীশ রানা। এ উইকেট দিয়েই ডোয়াইন ব্রাভোকে (১৮৩) টপকে আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন চাহাল।
আন্দ্রে রাসেল তেমন কিছু করতে পারেননি, আইয়ার অবশ্য ছুটছিলেন। শুরুর ধীরগতি পুষিয়ে দিয়েছিলেন অনেকটাই, তবে শেষের উড়ালটা আর দিতে পারেননি। শুরুর মতো শেষটাও কলকাতার ভুলে যাওয়ার মতোই হয়। ১৭তম ওভারে চাহালের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ৪২ বলে ৫৭ রান করে, কলকাতাও পথ হারায় সেখান থেকেই। ওই ওভারেই চাহাল ফেরান শার্দূল ঠাকুরকে, পরের ওভারে এসে নেন রিঙ্কু সিংয়ের উইকেট। শেষ ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান যোগ করতে আরও ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকেরা। চাহাল ৪ উইকেট নেন মাত্র ২৫ রানে।