২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সেমিফাইনালের লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে লিটন দাসছবি: এএফপি

তাহলে সাকিবদের চাপমুক্ত রাখার কৌশল হিসেবেই আগের ওই কথাটা বলেছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।

বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগেই প্রধান কোচ যদি বলে দিতেন, ‘আমাদের স্বপ্নটা এত বড়’, সেই প্রত্যাশার চাপটা সাকিব আল হাসানদের তো বয়ে বেড়াতে হতোই। কিন্তু এখন তো সময় এসে গেছে। যেকোনো অভিযান শুরুর আগে লক্ষ্য জেনে রাখাটা জরুরি। বাংলাদেশেরও বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হচ্ছে আজ, ধর্মশালায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। সেই পথচলা শুরুর আগে তাই কোচ হাথুরুসিংহে সবাইকে সরাসরিই জানিয়ে দিলেন, ‘সেমিফাইনালে যাওয়াই আমাদের প্রথম লক্ষ্য। আমার মনে হয়, সেটি করার মতো যথেষ্ট ভালো একটি দলও আছে আমাদের।’

প্রাথমিক লক্ষ্য যদি সেমিফাইনাল হয়, সেটা পূরণ করা গেলে তো আর মাত্র দুটি ম্যাচ এবং বড় স্বপ্নপূরণের হাতছানি। তাহলে হাথুরু নিজেই যে কিছুদিন আগে প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া এক সাক্ষাৎকারে বড় স্বপ্ন যারা দেখছে, তাদের ‘ঘুম থেকে জেগে উঠতে’ বলেছিলেন! গতকাল হিমাচল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশের প্রধান কোচ বললেন, ‘আমার কাজ হচ্ছে খেলোয়াড়দের ওপর থেকে চাপ কমানো।’

তারপর স্বপ্ন ও লক্ষ্য নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন, ‘মানুষ স্বপ্ন দেখতেই পারে, মানুষ লক্ষ্য ঠিক করতে পারে, উদ্দেশ্য থাকতে পারে। যে শব্দই ব্যবহার করুন, একই জিনিস। আমরা ভালো একটা বিশ্বকাপ খেলার চেষ্টা করছি, ম্যাচ জেতার চেষ্টা করছি। এটিই মূল লক্ষ্য আমার কাছে। যেমনটি বললাম, লক্ষ্য সেমিফাইনালে যাওয়া। সেটি স্বপ্ন হতে পারে, লক্ষ্য হতে পারে, তাতে কিছু যায় আসে না।’

আরও পড়ুন

বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে কিছুদিন ধরে যে ঝড় বয়ে গেছে, বড় স্বপ্নের কথা বলাটাও তখন ঠিক বাড়াবাড়িই লাগত। যাকে অধিনায়ক ভেবে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের পরিকল্পনা করছিল, গত জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচের পর সেই তামিম ইকবাল আচমকা অবসর নেন। টালমাটাল অবস্থার শুরু তখন থেকেই। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তামিম সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন।

তবে তিনি অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এমন জরুরি অবস্থায় বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের নেতৃত্ব যায় সাকিব আল হাসানের কাঁধে। তামিম নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে খেলায় ফিরলেও চোটের কারণে তাঁকে বিশ্বকাপ দলে রাখা হয়নি। অন্তত টিম ম্যানেজমেন্টের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা সেটাই। তবে আসল কারণ যে শুধু এটা নয়, এর মধ্যে যে বাংলাদেশের দুই মহাতারকা সাকিব ও তামিমের দ্বন্দ্বও জড়িত, এটা এখন আর লুকানো কিছু নয়।

সাকিব আল হাসান কি গত আসরের ব্যাটিংয়ের পুনরাবৃত্তি করতে পারবেন?
ছবি: এএফপি

বাংলাদেশ দলকে ভারতে যেতে হয়েছে বিতর্কের এই স্তূপ মাড়িয়ে। সেই বিতর্ক বাংলাদেশ কতটা পেছনে ফেলতে পেরেছে, সেই পরীক্ষাই হবে আজ। অতীত বলে, বড় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ কত দূর যাবে, তা প্রথম ম্যাচেই কিছুটা আঁচ করা যায়। সাকিবের দল নিশ্চয়ই জয় ছাড়া কিছুই ভাবছে না। একটা ভালো শুরু বাংলাদেশকে সেমিফাইনাল খেলার লক্ষ্যের পথে কিছুটা হলেও এগিয়ে দেবে, অনেকটা দেবে আত্মবিশ্বাস।

বাংলাদেশ আজ যেখানে খেলবে, হিমাচল প্রদেশের সেই মাঠে সবুজ ঘাসে মোড়ানো ২২ গজে লুকিয়ে থাকবে সুষম বাউন্স ও রান। আফগানদের হারানোর জন্য বাংলাদেশেরও দুটিই দরকার। দুই দলের সর্বশেষ দেখা হয় গত মাসেই, লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ম্যাচে। বাংলাদেশ সে ম্যাচে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান করে জিতেছে ৮৯ রানে। ওই সুখস্মৃতিটা নিশ্চয়ই বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস দেবে। তবে এটাও ঠিক, গত জুলাই মাসেই বাংলাদেশকে ঘরের মাঠে সিরিজে (২-১) হারিয়েছে আফগানরা। সেই সিরিজে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং মোটেও ভালো হয়নি। গত বছরও দুই দল দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হয়। বাংলাদেশ সেই সিরিজ (২-১) জিতলেও সেই ব্যাটিংই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে।

সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ
ছবি: এএফপি

আর সেই নড়বড়ে ব্যাটিং নিয়েই আজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ফজলহক ফারুকি, মুজিব উর রেহমানের নতুন বলে বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডারের পরীক্ষা নেবেন, মাঝের ওভারে রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবী। আফগান বোলিংয়ের এ পরীক্ষায় উতরে গেলে অবশ্য বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস তরতর করে বাড়বে। আর আফগান ব্যাটিং উড়িয়ে দিতে যে গতি দরকার, তা বাংলাদেশের মূল শক্তি। অভিজ্ঞ তাসকিন-মোস্তাফিজের সঙ্গে তিন তরুণ শরীফুল, হাসান ও তানজিমের যাঁকেই খেলানো হোক, আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে কোনো ঘাটতি হবে না। সাকিব-মিরাজের সঙ্গে বাড়তি স্পিনার হিসেবে সুযোগ হতে পারে মেহেদী কিংবা নাসুমের।

আরও পড়ুন

এই কৌশলের খেলাটা অবশ্য আফগানদেরও জানা। দুই দল সম্প্রতি একে অপরের বিপক্ষে এত বেশি খেলেছে যে শক্তি-দুর্বলতার জায়গাগুলো কমবেশি সবারই জানা। তবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ যেহেতু, দক্ষতা ছাপিয়ে ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা নেবে স্নায়ুর চাপ। সাকিবের দল তা পারবে তো?