কোহলির সেঞ্চুরির জন্যই কি আম্পায়ার ওয়াইড দেননি
ম্যাচের ভাগ্য তখন ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু কোহলির সেঞ্চুরি-ভাগ্য নিশ্চিত ছিল না। ৪২তম ওভারের খেলা শুরুর আগে জয়ের জন্য মাত্র ২ রান দরকার ছিল ভারতের। সেঞ্চুরি পেতে কোহলির দরকার ৩ রান।
বাংলাদেশের স্পিনার নাসুম আহমেদ ৪২তম ওভারে প্রথম বলটি লেগ সাইডে করেছিলেন। কোহলি বলের লাইন বুঝে শেষ মুহূর্তে বাঁ পা সরিয়ে নেন। লেগ সাইড দিয়ে বল জমা পড়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। সাধারণত এমন ডেলিভারি ওয়াইড হয়। কিন্তু গতকাল আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো নাসুমের ওই ডেলিভারিটি ওয়াইড না দিয়ে সবাইকে চমকে দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, ডেলিভারিটি কেন ওয়াইড দেওয়া হলো না? সিদ্ধান্তটা কি কোহলির সেঞ্চুরি নিশ্চিত করতে? অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সংবাদকর্মী ড্যানিয়েল চের্নি যেমন ওয়াইড না দেওয়ার সমালোচনা করে ‘এক্স’-এ পোস্ট করেন, ‘এটা লজ্জার।’ ভারতের সংবাদকর্মী হিমাংশু পারিকও একই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘যেকোনো দিনেই এটা পরিষ্কার ওয়াইড। এমনকি কোহলির প্রতিক্রিয়াতেও সেটা বোঝা গেছে...।’
বলের লাইন থেকে পা সরিয়ে নিয়ে আম্পায়ার কেটেলবরোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন কোহলি। ইংরেজ আম্পায়ার দুই হাত প্রসারিত না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকায় ভারতের ড্রেসিংরুমে হেসেছেন অনেকে। ভিডিওতে তা দেখা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেটেলবরো কেন নাসুমের ওই ডেলিভারি ওয়াইড দিলেন না। এর ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যাটাই–বা কী?
৪২তম ওভারে দ্বিতীয় বলটি ‘ডট’ খেলেন কোহলি। তৃতীয় বলেই ছক্কা মেরে নিজের সেঞ্চুরির সঙ্গে দলের জয়ও তুলে নেন। যুক্তি দেওয়া যেতে পারে, সেটি আম্পায়ার ওয়াইড দিলেও তো কোহলির সেঞ্চুরি হতোই, যেহেতু তৃতীয় বলে ছক্কা মেরেছেন! কিন্তু ছক্কা মেরেছেন ওই ওভারের তিন নম্বর ডেলিভারিতে। আর ওয়াইড দেওয়া হয়নি ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে। অর্থাৎ প্রথম ডেলিভারি পর্যন্ত কেউ জানত না পরে কী হবে!
সে হিসাবে তখন মনে হতেই পারে, কোহলির সেঞ্চুরির জন্যই বুঝি ওয়াইডটি দেওয়া হলো না! আন্তর্জাতিক ম্যাচে এমন ভাবনা কারও কারও আবার শিশুসুলভও মনে হতে পারে। যাহোক, ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু ওয়াইড না দেওয়া নিয়ে ব্যাখ্যায় দাবি করেছে, বলের গতিপথ থেকে পা সরিয়ে নিয়েছেন কোহলি। তাঁর বাঁ পা পূর্বের জায়গায় থাকলে বল সম্ভবত প্যাডে লাগত। যেহেতু পা সরিয়ে নিয়েছেন কেটেলবরো, তাই ওয়াইড দেননি।
ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) ওয়াইড ডেলিভারির ব্যাখ্যায় বলেছে, ‘একটি ডেলিভারি তখনই ওয়াইড হিসেবে গণ্য হবে, যখন এটি ব্যাট দিয়ে স্বাভাবিক স্ট্রোক খেলার নাগালের বাইরে থাকবে।’ তবে এমসিসির নিয়মে এটাও বলা আছে, ‘স্ট্রাইকার (ব্যাটসম্যান) যদি সরে গিয়ে বলটি ওয়াইড বানান, তাহলে আম্পায়ার সেটিকে ওয়াইড হিসেবে গণ্য করবেন না।’
যদিও ম্যাচের পর অফিশিয়াল সম্প্রচারক চ্যানেলের অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক ওপেনার দীপ দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘বিরাট কোহলি লোকেশ রাহুল ও আম্পায়ারের সাহায্যে সেঞ্চুরিটি পেয়েছেন।’
কিন্তু ভারতের সাবেক আন্তর্জাতিক আম্পায়ার বিনায়ক কুলকার্নির যুক্তি, ‘ওয়ানডেতে সাধারণত কোনো বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে বের হয়ে গেলেই ওয়াইড। তবে স্ট্রাইকার না সরলে এবং বল তার পায়ে লাগলে সেটি ওয়াইড হবে না, এমনকি বল লেগ সাইড দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পথে থাকলেও। সহজ ভাষায়, স্ট্রাইকার সরে গিয়ে বলকে ওয়াইড বানাতে পারবেন না। কোহলি অফসাইডে একটু সরে না গেলে বল তার গায়ে লাগত। আর বল গায়ে লাগলে ওয়াইডের প্রশ্ন অবান্তর।’
বাংলাদেশের ২৫৬ রান তাড়া করতে নামা ভারতকে শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে জেতানোর পাশাপাশি সেঞ্চুরিও তুলে নেন কোহলি। ৯৭ বলে ১০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন ভারতীয় তারকা।