দুয়ো শোনা সেই ওয়াংখেড়েতেই এখন পান্ডিয়ার নামে স্লোগান
দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের শেষ বলের পর ভারতের সব ফিল্ডার যখন বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ছোটাছুটি করছিলেন, তখন হার্দিক পান্ডিয়া জায়গা থেকে না নড়ে আস্তে করে মাটিতে বসে পড়েন। ভারত জিতেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, কিন্তু দলের অন্যদের তুলনায় পান্ডিয়ার অনুভূতিটা যেন আলাদা। কতটা আলাদা স্পষ্ট হয়ে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। অঝোর ধারায় চোখ বেয়ে জল ঝরছে পান্ডিয়ার। যে কান্না চাইলেই থামিয়ে দেওয়া যায় না।
গত ২৯ জুন বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে বিশ্বকাপ ফাইনালের শিরোপানির্ধারণী মুহূর্তের ওই ঘটনাতেই বোঝা গিয়েছিল, হৃদয়ের কতটা যন্ত্রণা বয়ে বেড়িয়েছিলেন পান্ডিয়া। যে যন্ত্রণার উৎস আইপিএল, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস এবং ওয়াংখেড়ে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর এক সপ্তাহ আগে শেষ হয়েছিল যে আইপিএল, সেখানে রীতিমতো ‘খলনায়ক’ হয়ে উঠেছিলেন পান্ডিয়া। অন্য মাঠে তো বটেই, মুম্বাইয়ের ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়েতেই দুয়ো শুনতে হয়েছে লাগাতার। দুই মাসের ব্যবধানে সেই ওয়াংখেড়েতেই এখন ভিন্ন চিত্র। পান্ডিয়া মাঠে আসার আগেই ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে চলছে ‘হার্দিক, হার্দিক’ স্লোগান। দুয়ো দেওয়া ঠিক ছিল না জানিয়ে কেউ কেউ চাইছেন ক্ষমাও।
২০২৩ সালে গুজরাট টাইটানসে খেলা পান্ডিয়া এ বছর মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে যোগ দেন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পেয়ে যান অধিনায়কত্বও। যদিও মুম্বাইকে পাঁচবার ট্রফি জেতানো অধিনায়ক রোহিত শর্মা আছেন দলেই। মুহূর্তেই মুম্বাই সমর্থকদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন পান্ডিয়া। মুম্বাইয়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পাতায় অনুসারী কমে যায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এরপর পান্ডিয়া মাঠে নামতেই শুরু হয় গ্যালারি থেকে দুয়ো। মুম্বাইয়ের টানা হারে দুয়োর পরিমাণও বাড়তে থাকে।
শেষ পর্যন্ত পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন মুম্বাই আইপিএল শেষ করে দশ দলের মধ্যে সবার নিচে থেকে। পান্ডিয়ার নিজের ফর্ম ভালো না থাকায় তাঁকে বিশ্বকাপ দলে না রাখার দাবিও তোলেন অনেকে। সেই পান্ডিয়াই যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে হয়ে ওঠেন ভারতের বড় ভরসার নাম। ব্যাট হাতে ১১৪ রানের পাশাপাশি বল হাতে নেন ১১ উইকেট, যার মধ্যে ছিল ফাইনালে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ২০ রানে ৩ উইকেট। এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে অলরাউন্ডারদের শীর্ষে উঠে আসে পান্ডিয়ার নাম, র্যাঙ্কিংয়ের ইতিহাসে ভারতের কারও জন্য যা এই প্রথম।
আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দল বার্বাডোজ থেকে দেশে ফিরেছে। মুম্বাইয়ে আয়োজন করা হয়েছে ছাদখোলা বাসে প্যারেড ও ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সংবর্ধনার। বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের বরণ করে নিতে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ওয়াংখেড়ের ভেতরে ও বাইরে হাজার হাজার মানুষ হাজির হয়েছেন। সেখানেই জড়ো হওয়া দর্শক-সমর্থকদের অনেকে হার্দিক পান্ডিয়ার নামে স্লোগান ধরেছেন। কেউ কেউ আগের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্তও। মুম্বাইয়ের সুপরিচিত মেরিন ড্রাইভে দাঁড়িয়ে এক তরুণী ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ‘সব কথার আগে আমি হার্দিক পান্ডিয়াকে “সরি” বলতে চাই। আমি জানি না, কেন তাঁকে ট্রল করেছিলাম। আমি খুবই দুঃখিত। তোমাকে ধন্যবাদ। (বিশ্বকাপ ফাইনালে) তোমার শেষ ওভারটা দুর্দান্ত ছিল। আমি আবারও সরি বলতে চাই। কেন তোমার সঙ্গে ভুলভাল বলেছিলাম, আমি জানি না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গ্যালারিতে থাকা বেশ কিছু দর্শক ‘হার্দিক, হার্দিক’ বলে চিৎকার করছেন। মজার বিষয়, এই দর্শকেরা হার্দিক-বন্দনায় এমন সময়ে, যখন মাঠের ভেতরে কেউ নেই। পান্ডিয়া বা তাঁর দল তখনো মাঠে এসে পৌঁছায়নি। অথচ মাস দুয়েক আগে এখানেই পান্ডিয়া মাঠে নামলেই বা বড় পর্দায় তাঁর ছবি ভেসে উঠলেই দুয়ো দিতেন এখানকার অনেকেই!