দুই অধিনায়কের বিদায় যে গ্যারেজে
আলোচনাটা আগের দিন রাতেই শুরু। কী নিয়ে? কোথায় হবে ‘তামিম-বিসিবি’ সভা, তা নিয়ে। গুলশানের কোনো হোটেলে নাকি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই আসবেন সবাই। হয়তো সভাটা হয়ে যাবে অন্য কোথাও। এরপর সংবাদ সম্মেলন হবে আরেক জায়গায়। সংবাদকর্মীদের মধ্যে এই জল্পনাকল্পনা গতকাল সকাল হয়ে দুপুর ও বিকেল পর্যন্ত চলতে থাকে। কোথায় কী হচ্ছে, তা কেউই জানেন না। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যায় জানা গেল সেই জায়গার নাম।
এ লেখা যখন পড়ছেন, তখন তো সবাই জানেন সে জায়গাটা কোথায়। জায়গাটা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের গুলশানের বাসভবনের গ্যারেজ। বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক কাল বোর্ড সভাপতির বাসভবনে এলেন সন্ধ্যার পর। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসও ছিলেন। তিনজনের প্রায় দেড় ঘণ্টা সভার পর বোর্ডপ্রধানের গ্যারেজে হলো যৌথ সংবাদ সম্মেলন। সেখানে তামিম জানান, তিনি আর অধিনায়কত্ব করতে চান না।
তামিমের এ ঘোষণা যেন ফিরিয়ে নিয়ে গেল গত বছরের মে মাসে। তখন বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু দলের পারফরম্যান্স ও ফর্ম—দুইয়ের মিশেলে ভীষণ চাপে মুমিনুলের অধিনায়কত্ব। এরপর গত বছরের ৩১ মে বিকেলের দিকে মুমিনুল যান গুলশানের বোর্ডপ্রধানের বাসভবনে। সেদিনও মুমিনুলের সঙ্গে বোর্ডপ্রধানের বৈঠক হয়, এরপর সংবাদ সম্মেলনটা হয় সেই গ্যারেজে। সেখানে মুমিনুল তাঁর অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন, যা অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুলের শেষ স্মৃতি হয়ে থাকবে। সেই স্মৃতি নিশ্চয়ই মধুর হওয়ার কথা নয়।
এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দুই সংস্করণে দুজন অধিনায়কের বিদায় দেখল, দুটিরই মঞ্চ বোর্ড সভাপতির বাসার গ্যারেজে। দুদিনই স্বাভাবিকভাবে সাংবাদিকদের ভিড় ছিল সেই গ্যারেজে। আর তা দেখে এক সাংবাদিক গতকাল মজা করে বলছিলেন, ‘ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্যারেজ এটি।’
সংবাদকর্মীদের ভিড় দেখে বোর্ডপ্রধানের বাসার এলাকায় এক অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রাস্তা দিয়ে চলাচল করা সাধারণ মানুষের কৌতূহল, উঁকিঝুঁকি বাড়তে থাকে। বাসার নিরাপত্তাকর্মীরাও অপ্রস্তুত হয়ে যান। কাল যেমন সাংবাদিকদের ভিড় দেখে এক নিরাপত্তাকর্মী একটু বিরক্তই হলেন। বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘আজ আমার ডিউটি, আর আজই এ অবস্থা। কপালটাই খারাপ।’ কিছুক্ষণ পর তামিমের গাড়িটা গ্যারেজে প্রবেশ করতে না করতেই সেই নিরাপত্তাকর্মীই নিজের মুঠোফোনের ক্যামেরায় ছবি তোলার চেষ্টা করেন। আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকেরা তা দেখে অবাকই হলেন।
শুধু কি তা–ই, কাল পাশের বাসা থেকেও লোকজন এসে বোর্ড সভাপতির গ্যারেজে ভিড় করেন। এমনই এক ভদ্রলোক তো সাংবাদিকদের ভিড় দেখে খুবই কৌতূহলী হয়ে উঠলেন। অপেক্ষায় থাকা এক সাংবাদিককে তাঁর প্রশ্ন, ‘আজ শেষ পর্যন্ত কী হতে পারে বলুন তো? তামিম খেলবে না ছেড়ে দেবে?’
প্রশ্নটা শেষ হতে না হতেই লিফট থেকে বেরিয়ে এলেন নাজমুল, জালাল ও তামিম। তিনজনকে আসতে দেখে এবার সেই ভদ্রলোক ফটোগ্রাফার হয়ে গেলেন। সাংবাদিকের ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে তামিমের ছবি তুলতে চাইলেন। কিছুক্ষণ পর গ্যারেজের সেই সংবাদ সম্মেলনেও এমন আরও কয়েকজন ঢুকে পড়েন, যাঁরা আদতে সাংবাদিক নন। কেউ নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ দিচ্ছিলেন, কেউ তুলছিলেন ছবি।
মুমিনুলের মতো তামিমও তাঁর অধিনায়কত্বের ইতি টানার ঘোষণাটা দিলেন এমনই এক মঞ্চে। মুমিনুলের মতো তামিমও নিশ্চয়ই এ মঞ্চকে মনে রাখতে চাইবেন না। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে বোর্ড সভাপতির বাসার গ্যারেজ হয়ে থাকবে স্মরণীয় এক জায়গা। দুজন অধিনায়কের বিদায়ের মঞ্চায়ন যে হয়ে গেল এখানেই।