ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েই কি সর্বনাশ

বড় রান তাড়ায় তাওহিদ হৃদয় আউট হন ৬ বলে ৪ রান করেএএফপি
ভারত: ২০ ওভারে ১৯৬/৫
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৬/৮
ফল: ভারত ৫০ রানে জয়ী

টসটা যেমন না করলেও চলত, ইতিহাস মনে রাখলে দ্বিতীয় ইনিংসটা না খেললেও।

ভারতের ইনিংসের পরই তো ম্যাচের ভাগ্য মোটামুটি লেখা হয়ে গেছে। কথাটা অবশ্য কেমন হয়ে গেল! প্রথম ইনিংস যত বড়ই হোক না কেন, দ্বিতীয় ইনিংস তো খেলতেই হবে। তা ছাড়া খেলায় অভাবনীয় কত কিছুই তো ঘটে। এখানেও তো ঘটতে পারত।

আসলে যা ঘটেছে, তা তো মনে হয় জেনেই গেছেন। সুপার এইটে টানা দ্বিতীয় জয়ে বলতে গেলে সেমিফাইনালে উঠেই গেছে ভারত। আর টানা দ্বিতীয় পরাজয়ে বাংলাদেশের জন্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা হয়ে গেছে শুধুই নিয়মরক্ষার। যা খেলতে এই ম্যাচ শেষেই চার্টার্ড বিমানে উঠেছে বাংলাদেশ দল। গন্তব্য আবারও সেই সেন্ট ভিনসেন্ট।

অঙ্কের হিসাবে অবশ্য বাংলাদেশ এখনো সুপার এইটের দৌড়ে আছে। সেটি কীভাবে? ভারত ছাড়া গ্রুপের বাকি তিন দলই যদি একটা করে ম্যাচ জেতে, তাহলে তিন দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যাবে। এটুকু পড়েই হয়তো আপনি হাসতে শুরু করেছেন। নেট রান রেটের প্রসঙ্গটা তাহলে আর না তোলাই ভালো। বড় দুই পরাজয়ে যেখানে বাংলাদেশের করুণ অবস্থা।

টসটা না করলেও হতো বলেছিলাম কেন? কেন, টস হয়ে যাওয়ার পর দুই অধিনায়ক কী বলেছেন, শোনেননি! টসে জিতে নাজমুল হোসেন ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠালেন। রোহিত শর্মা বললেন, টসে জিতলে তিনি প্রথমে ব্যাটিংই করতেন। টসের আগে দুজনের ইচ্ছাটা তাহলে জেনে নিলেই তো হতো!

কোনো কোনো অধিনায়ক অবশ্য একটা চাল-ও চালেন। টসে হেরে ব্যাটিং পেলে বলেন, ‘আমরা ব্যাটিংই করতে চেয়েছিলাম।’ ফিল্ডিং পেলে বলেন, ‘টসে জিতলেও আমি ফিল্ডিংই নিতাম।’ রোহিত শর্মার কথাটা ওই লাইনে কি না, তা অবশ্য নিশ্চিতভাবে বলার উপায় নেই।

আরও পড়ুন

ভারতীয় ইনিংস শুরু হওয়ার পর অবশ্য তাঁর কথাটাকে আর কোনো চাল মনে হলো না। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ, বল খুব ভালো ব্যাটে আসছে। তাহলে তো বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করলেই ভালো করত। তাড়া করার চাপটা থাকত ভারতের ওপরই।

এর চেয়েও বড় চমক অবশ্য অন্য। বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার মতো দুই ব্যাটসম্যান যেখানে ওপেনিংয়ে, দুই প্রান্ত থেকেই নতুন বলে স্পিন লেলিয়ে দেওয়া হলো। মেহেদীর অফ স্পিনের প্রথম ওভারে ৮ রান, সাকিবের বাঁহাতি স্পিনে ১৫--যা নিয়েও প্রশ্ন তুলল। এই বিশ্বকাপে ভারতের দুই ব্যাটিং গ্রেটই বলতে গেলে অচেনাই হয়ে আছেন। রোহিত শর্মার তা–ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটা হাফ সেঞ্চুরি আছে, চার ইনিংসে কোহলির সর্বোচ্চ যেখানে ২৪। বাকি ৩টি ইনিংস মিলিয়ে ৫!

কোহলিকে বেশি দূর এগোতে দেননি তানজিম হাসান
এএফপি

ম্যাচের আগের দিন ভারতের ঐচ্ছিক অনুশীলনেও দুজন মাঠে এসেছেন। মাঝ উইকেটে যা প্র্যাকটিস করেছেন, ম্যাচেও তা করতে শুরু করেছিলেন দুজনই, বিশেষ করে বিরাট কোহলি। এমন বড় বড় সব ছক্কা মারতে শুরু করলেন যে মনে হলো আগের চার ইনিংসের ব্যর্থতা আজই পুষিয়ে নেবেন। কোহলিকে তা করতে দেননি তানজিম। তিন বলে ২ উইকেট নিয়ে এই পেসারই যা একটু ধাক্কা দিয়েছিলেন ভারতকে। দুই উইকেটের মাঝের বলটায় আবার ছয় হয়েছে। সূর্যকুমার যাদব যাকে বলে ‘সিক্স অ্যান্ড আউট’!

এর আগে রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৫০তম উইকেট পেয়েছেন সাকিব। আগের ৪৯ উইকেটের কোনোটিতে এত আনন্দ পেয়েছেন বলে মনে হয় না। উইকেট পাওয়ার আগে এমন বেধড়ক মার খেলে তো! প্রথম ৯ বলে ২৫ রান দেওয়ার পর ওই উইকেট।

নাজমুলের আশা ততক্ষণে উবে যেতে বসেছে। যে আশার কথা বলেছিলেন টসের পর। ভারতকে ১৫০-১৬০ রানে আটকে রেখে সেই রান তাড়া করে ফেলার আশা। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৫৩ রান উঠে যাওয়ার পরই পরিষ্কার, নাটকীয় কিছু না হলে বাংলাদেশকে আরও অনেক বেশি রান তাড়া করতে হবে।

শেষ পর্যন্ত সেই অঙ্কটা দাঁড়াল ১৯৭। ভারতের ৫ উইকেটে ১৯৬ অ্যান্টিগার এই স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ। এই মাঠে এত রান তাড়া করে কোনো দল জেতেনি এর আগে। আর সব মাঠ সব প্রতিপক্ষ মিলিয়েও টি-টোয়েন্টিতে এত রান তাড়া করে বাংলাদেশের জয় একবারই। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই জয় ৫ উইকেটে ২১৫ রান করে। ৩৫ বলে অপরাজিত ৭২ রান করে মুশফিকুর রহিমের ‘নাগিন নাচ’-এর সেই ম্যাচ।

নাচের অংশটার আর পুনরাবৃত্তি না হওয়াই ভালো। তবে কারও ব্যাটে ওরকম একটা ইনিংস লাগত। বাংলাদেশ দলে সেই ব্যাটসম্যান কই? টানা দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার নাজমুল। কিন্তু সেটি তো ১২৫ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ৪০।

ভারতের হাতে প্রথমেই ব্যাট তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন তোলা যায়। তার ওপর বাংলাদেশ যেখানে এদিন আবার একজন বোলার কম নিয়ে নেমেছে।

লিটনের ইনিংস থেমেছে ১০ বলে ১৩ রানে
এএফপি

তাসকিনকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয়েছে জাকের আলীকে। ব্যাটিংয়ের দুর্দশার কারণেই একজন ব্যাটসম্যান বাড়ানো। সেই বাড়তি ব্যাটসম্যান যখন নেমেছেন, ম্যাচ বলতে গেলে শেষ। ২৭ বলে লাগে ৮৮ রান। সঙ্গে আরেকটা তথ্যও যোগ করে নিন। মাত্রই নাজমুলকে আউট করে প্রথম উইকেট পাওয়া জসপ্রীত বুমরার আরও ৯ বল বাকি। ইদানীং অর্শ্বদীপ সিং-ও খুব একটা কম যাচ্ছেন না বুমরার চেয়ে। তাঁর বাকি আরও ২ ওভার।

জাকের আলী এসব হিসাব–নিকাশে সময় নষ্ট করতে না দিয়ে ১ রান করেই বিদায় নিয়েছেন। এরপর রিশাদ একটু চার-ছয় মেরেছেন। তবে রোহিত শর্মার কপালে তা একটুও ভাঁজ ফেলতে পারেনি। শেষ ৩ ওভারে বাংলাদেশের লাগত ৭৫ রান। রিশাদের কারণে যা শেষ ২ ওভারে ৬০ রানে নেমে এসেছে।

ততক্ষণে আপনিও হয়তো টেলিভিশনের সামনে থেকে উঠে গেছেন।