কিছুদিন আগে ভারতের নারী দলের ক্রিকেটার দীপ্তি শর্মা মানকাড আউট করেছিলেন ইংল্যান্ডের শার্লি ডিনকে। ক্রিকেটীয় চেতনার প্রসঙ্গ টেনে তখন ভারতীয়দের অনেক সমালোচনা করেছিল ইংলিশরা। সেই যে ‘ইট’ খেয়েছিল ভারতীয়রা, এবার সুযোগ পেয়ে তার বদলে ‘পাটকেল’ মারার চেষ্টা করছে তারা।
একটু ভিন্নধর্মী রানআউটের সঙ্গে সপ্তাহ দুই আগে যেমন জড়িয়ে গিয়েছিল ভারতের নারী ক্রিকেট দল, এবার তেমনই আরেকটি ভিন্নধর্মী রানআউটের ঘটনায় জড়িয়ে গেছে ইংল্যান্ড জাতীয় দল। যার সূত্র ধরে জস বাটলারদের সমালোচনায় মেতেছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটাররা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে কাল খেলেছে ইংল্যান্ড। ২০৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলে মার্ক উডের বাউন্সারে ব্যাট চালিয়েছিলেন ম্যাথু ওয়েড।
ব্যাটের কানায় লাগার পর ওয়েডের হেলমেটে লেগে ওপরে ওঠে বল। ক্যাচের জন্য ছুটলেও ওয়েডের ‘বাধায়’ কাছে যেতে পারেননি উড।
ক্রিজের বাইরে থাকা ওয়েড শুরুতে যেন বুঝেই উঠতে পারেননি, বল কোথায় গেছে বা তিনি কোথায় আছেন। এরপর নিজেকে যখন ক্রিজের বাইরে আবিষ্কার করেন, ফেরার চেষ্টা করেন তিনি।
তবে সে সময় নিজের হাত প্রসারিত করেন ওয়েড, দেখে মনে হয়েছে উডকে আটকাচ্ছেন। এরপর ডাইভ দেন ক্রিজে ফিরতে। বাধা পেয়ে থেমে যান উডও। বেঁচে যান ওয়েড।
ক্রিকেট আইনের ৩৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যাটসম্যান ফিল্ডারদের ফিল্ডিংয়ে বাধা তৈরি করলে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউটের জন্য বিবেচ্য হবেন। তবে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বাটলার আউটের জন্য আম্পায়ারের কাছে আবেদনই করেননি।
ম্যাচ শেষে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বাটলার বলেন, ‘আমি আসলে পুরোটা সময় বলের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তাই কী ঘটেছে, সে ব্যাপারে পুরো নিশ্চিত ছিলাম না। তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আবেদন করতে চাই কি না। কিন্তু আমার মনে হলো, অস্ট্রেলিয়ায় বেশ লম্বা সময় থাকব। সফরের শুরুতেই এমন করাটা ঝুঁকি হয়ে যাবে।’ তবে ম্যাচটি যদি দ্বিপক্ষীয় না হয়ে বিশ্বকাপে হতো, তাহলে হয়তো আউটের আবেদন করতেন বলে জানান বাটলার।
এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দুই দলেরই সমালোচনা করেছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ভেঙ্কটেশ প্রসাদ।
তবে নারী ক্রিকেটে শার্লি ডিনের রানআউট নিয়ে সমালোচনা করা ইংল্যান্ডকে এ ক্ষেত্রে বেশিই তোপ দেগেছেন তিনি, ‘বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। এককথায় বললে প্রতারণা। অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ডের ঘটনায় ক্রিকেটীয় চেতনা কোথায়? আউটের আবেদন না করে কী ভয়ানক অজুহাত দিলেন বাটলার! এই লোকগুলোর প্রতিপক্ষকে অধিকার দেওয়ার বিবেক অবিশ্বাস্য। যেখানে কোনো চেতনা নেই, সেখানে ফালতু চেতনার কথা বলে।’
প্রসাদের মতো ইংল্যান্ডের সমালোচনা করেছেন সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার আকাশ চোপড়াও। উডকে ওয়েডের বাধা দেওয়ার দৃশ্যটি টুইট করে ক্যাপশনে লিখেছেন- ‘আমাদের ইংলিশ বন্ধুরা (যাঁরা ক্রিকেট চেতনার অভিভাবক) এ ঘটনায় চুপ কেন?’
ভারতের হয়ে চার টেস্ট ও একটি ওয়ানডে খেলা ডোড্ডা গনেশও ‘ক্রিকেট চেতনা’ নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘ওয়েড কি অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউট হননি? ক্রিকেট চেতনার চ্যাম্পিয়নরা এখন চুপ কেন? কী ভণ্ডামি!’
ক্রিকেটাররা যখন এমন সমালোচনায় মুখর, তখন সমর্থকেরাও কি আর ছেড়ে দেবেন? ওয়েড আউট না হওয়ার ঘটনায় ইংল্যান্ডের সমর্থক গোষ্ঠী বার্মি আর্মির অ্যাকাউন্ট থেকে, ‘এটা কীভাবে নট আউট’ লিখে একটা টুইট করা হয়েছিল।
ভারতের সমর্থক গোষ্ঠীর একটা অংশ দ্য ভারত আর্মি নামের টুইটার থেকে সেটি রিটুইট করে লিখেছে, ‘ব্যাপার নয়। এটাই ক্রিকেটীয় চেতনা।’
কেউ কেউ অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার ওয়েডের সমালোচনাও করেছেন। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে বাধা দেওয়ায় আউট হয়েছিলেন বেন স্টোকস। সেই ম্যাচে স্টোকসের বিরুদ্ধে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডের আবেদন করেছিলেন উইকেটের পেছনে থাকা ওয়েড।