সহকারীর চাকরি নেই, পাকিস্তানের কোচ হিসেবে গিলেস্পির ভাগ্য অনিশ্চিত
পাকিস্তান ক্রিকেট দল এই মুহূর্তে দক্ষিণ আফ্রিকায়। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজ শেষে সেখানে ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। লাল বলের এই সিরিজ সামনে রেখে পাকিস্তান টেস্ট দলের সহকারী কোচ টিম নিয়েলসনের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে চাচ্ছে না পিসিবি। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) এ সিদ্ধান্তের পর টেস্ট দলের প্রধান কোচ জেসন গিলেস্পিও নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে ইএসপিএনক্রিকইনফো।
চলতি বছরের আগস্টে নিয়েলসনকে নিয়োগ দিয়েছিল পিসিবি। অফিশিয়ালি তাঁর পদের নাম ছিল ‘হাই পারফরম্যান্সে লাল বলের কোচ’। তাঁর চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়েছিল এবং গত ১৮ নভেম্বর শেষ হওয়া পাকিস্তান দলের অস্ট্রেলিয়া সফরের পর তা নবায়ন করার কথা ছিল। নিয়েলসন এই অপেক্ষাতেই ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান এ কোচ ইএসপিএনক্রিকইনফোকে বলেছেন, দল নিয়ে ‘ভালো উন্নতি করেছেন’ বলে মনে করেন তিনি এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধও ছিলেন। কিন্তু পিসিবি নিয়েলসনকে জানিয়েছে, তাঁকে আর প্রয়োজন নেই।
ইএসপিএনক্রিকইনফো জেনেছে, পাকিস্তান দল দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে প্রধান কোচ গিলেস্পিকে পিসিবি জানায়নি যে তিনি তাঁর সহকারী কোচকে পাচ্ছেন না। পিসিবির এই সিদ্ধান্ত মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না গিলেস্পি। কোনো কিছু না জানিয়ে পিসিবির এমন সিদ্ধান্ত অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তিকে খেপিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে পাকিস্তান ক্রিকেটে গিলেস্পির ভূমিকা অনেক কমার একটি প্রমাণও এটি।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এ পেসারকে গত অক্টোবরে পিসিবি টেস্ট দলের নির্বাচক কমিটি থেকে বাদ দিয়েছে। সে সময় গিলেস্পি বলেছিলেন, তাঁর ভূমিকা এখন বড়জোর ‘ম্যাচের কৌশলবিদ’। গ্যারি কারস্টেন চলে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় সাদা বল সংস্করণের সিরিজে অন্তর্বর্তীকালীন কোচের ভূমিকায় ছিলেন গিলেস্পি। সেই সিরিজ শেষে বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের যোগাযোগও অনেক কমেছে।
নিয়েলসন খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, তাঁর সঙ্গে পিসিবির নতুন করে চুক্তি না করার সিদ্ধান্তে গিলেস্পির খেপে ওঠার এটাও একটি কারণ। নিয়েলসনের সঙ্গে খেলোয়াড়দের ভালো সম্পর্কের কথা গিলেস্পি এর আগেও একাধিকবার বলেছেন। ক্রিকেট–বিষয়ক এই ওয়েব পোর্টালটি আরও জানিয়েছে, গিলেস্পি ও নিয়েলসন দুজনেই মনে করেন, পাকিস্তানে থেকে কাজ না করাটাই পিসিবির নতুন করে চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনের কারণ। তবে নিয়েলসন নিশ্চিত করেছিলেন, সামনের দুটি সফরে তাঁকে পুরোপুরি পাওয়া যাবে।
নিয়েলসনের বিকল্প কে হবেন, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি পিসিবি। পিসিবির বর্তমান প্রশাসন বিদেশি কোচদের সরিয়ে পাকিস্তানের স্থানীয়দের দায়িত্ব দিতে চায়। পাকিস্তানে না থাকার জন্য পিসিবি এর আগে বিদেশি কোচদের ওপর অসন্তুষ্টও হয়েছে। গত অক্টোবরে দায়িত্ব ছাড়া সাবেক প্রোটিয়া কারস্টেনের উদাহরণ দেওয়া যায় এ ক্ষেত্রে। গিলেস্পি অবশ্য সব সময় দাবি করে এসেছেন, তিনি চুক্তির সব শর্ত মেনেই কাজ করছেন।
সাদা বলের সংস্করণে এরই মধ্যে আকিব জাভেদকে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে পিসিবি। তিনি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করবেন এবং পাশাপাশি নির্বাচক প্যানেলেও আছেন। পিসিবি এর আগে কোনো বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ছাড়াই গিলেস্পিকে দায়িত্বটি পালনের অনুরোধ করেছিল। অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ এবং পিসিবির মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার এটাও একটা কারণ।
ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেই গিলেস্পির কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে পিসিবি তাঁকে ছাঁটাই করতে চাইলে বর্তমান চুক্তির বাকি মেয়াদের বেশির ভাগ অর্থই পরিশোধ করতে হবে। গিলেস্পির সঙ্গে পিসিবির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত।
তবে গিলেস্পি নিজে দায়িত্ব ছাড়তে চাইলে পিসিবিকে কম অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
গিলেস্পির অস্ট্রেলিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার কথা আগামীকাল। সেঞ্চুরিয়নে ২৬ ডিসেম্বর শুরু হবে প্রথম টেস্ট। কেপ টাউনে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ৩ জানুয়ারি। ইএসপিএনক্রিকইনফো বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু পিসিবি কোনো মন্তব্য করেনি।