নাটক শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়, পান্ডিয়ার ভারত পিছিয়ে ০–২–এ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের প্রথম বল। হার্দিক পান্ডিয়ার করা ফুল লেংথের বলটি বেরিয়ে যাচ্ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে। ব্রেন্ডন কিং দারুণ এক কাভার ড্রাইভ করলেন। কিন্তু ওই শটের চেয়েও দারুণ কিছু করে বসলেন সূর্যকুমার যাদব। ভারতীয় ফিল্ডার ডান দিকে ঝাঁপিয়ে কী চমৎকার এক ক্যাচই না নিলেন।
১৫৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় উইকেটও হারিয়ে ফেলে ৩ বল পরেই। এবার কাভারে দাঁড়ানো তিলক বর্মার হাতে সহজ এক ক্যাচ তুললেন আরেক ওপেনার জনসন চার্লস।
কিন্তু প্রথম ওভারে ২ রানেই ২ উইকেট খোয়ানো সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই শেষ হাসি হেসেছে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে। জয় অবশ্য সহজে আসেনি। পা হড়কিয়ে খাঁদের বিনারে চলে গিয়েছিল ক্যারিবীয়রা। শেষ পর্যন্ত ১৫৩ রানের লক্ষ্যটা ২ উইকেট ও ৭ বল হাতে রেখে ছুঁয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ত্রিনিদাদের তারুবায় প্রথম টি-টোয়েন্টিটা ৪ রানে জিতেছিল স্বাগতিকেরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান নিকোলাস পুরানের। প্রথম ওভারেই উইকেটে আসা সাবেক অধিনায়ক করেছেন সর্বোচ্চ ৬৭ রান। তাঁর ৪০ বলের ইনিংসটি সাজানো ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায়। ৪ ছক্কার প্রথমটি পুরান মেরেছেন তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে হার্দিক পান্ডিয়াকে। ওই ছক্কার আগে প্রথম ৫ বলে মাত্র ১ রানই করেছিলেন পুরান।
পরের ওভারে অর্শদীপ সিংয়ের বলে এলবিডব্লু হয়ে কাইল মায়ার্স যখন ফিরলেন ৩২ রানে ৩ উইকেট নেই ক্যারিবীয়দের।
সেখান থেকেই রোভম্যান পাওয়েলকে নিয়ে ৩৭ বলে ৫৭ রান জুটি পুরানের। দলকে ৮৯ রানে রেখে পান্ডিয়ার তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরার আগে ১৯ বলে ২১ রান করেন পাওয়েল। এরপর শিমরন হেটমায়ারকে নিয়ে ২৫ বলে ৩৭ রানের জুটি পুরানের। ভারতীয় পেসার মুকেশ কুমারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সঞ্জু স্যামসনের হাতে পুরান যখন ক্যাচ হলেন ১৪ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১২৬/৫।
৬ ওভারে দরকার ২৭ রান, হাতে উইকেট ৫টি। এমন সমীকরণে দাঁড়িয়ে কী যেন হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পরের ১২ বলে মাত্র ৩ রান তুলতেই যে নেই আরও ৩ উইকেট। হেটমায়ারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে কোনো বল খেলার আগেই রানআউট রোমারিও শেফার্ড। যুজবেন্দ্র চাহালের করা সেই ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারাল আরও ২ উইকেট। ওভারের চতুর্থ বলে জেসন হোল্ডারকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলার পর শেষ বলে এলবিডব্লু শিমরন হেটমায়ার (২২ বলে ২২)।
৪ উইকেটে ১২৬ থেকে দেখতে না দেখতেই ৮ উইকেটে ১২৯! ২৪ বলে ২৪ রানের সমীকরণটা কি মেলাতে পারবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ? দলকে জিতিয়েই প্রশ্নটার উত্তর দিলেন আকিল হোসেন ও আলজারি জোসেফ। মুকেশ কুমারের করা ১৭তম ওভারে মাত্র ১ রান নিলেন দুজন। অর্শদীপের করা পরের ওভারের প্রথম বলটায় চার মেরে চাপটা একটু কমালেন আকিল। সেই ওভারে এল আরও ৫ রান।
শেষ ১২ বলে দরকার ১২ রান। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে দিলেন জোসেফ। ওভারের চতুর্থ বলে চার মেরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়ে দিলেন আকিল। অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেটে ২৬ রান যোগ করে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়া আকিল ১০ বলে ১৬ ও জোসেফ ৮ বলে ১০ রান করেছেন।
এর আগে ভারতের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন তিলক বর্মা। ভারতের জার্সিতে খেলা দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেই প্রথম ফিফটির দেখা পেলেন ২০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। সর্বশেষ আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে ৩৪৩ রান করা বর্মার ৪১ বলের ইনিংসটি সাজানো ৫ চার ও ১ ছক্কায়।
বাঁহাতি বর্মা ব্যাটিংয়ে নামেন চতুর্থ ওভারেই ভারত ১৮ রানে ২ উইকেট হারানোর পর। তৃতীয় ওভারে শুবমান গিল (১২ বলে ৭ রান) আলজারি জোসেফের বলে থার্ডম্যানে শিমরন হেটমায়ারের হাতে ক্যাচ তোলেন। পরের ওভারেই নেই ২০ ওভারের ক্রিকেটে ভারতের সময়ের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা সূর্যকুমার যাদব। স্কয়ার লেগ থেকে সরাসরি থ্রোতে তাঁকে রানআউট করেন কাইল মায়ার্স। রানআউটের আগে ৩ বলে মাত্র ১ রানই করতে পেরেছেন ‘স্কাই’।
সেখান থেকেই ওপেনার ঈশান কিষানকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৩৬ বলে ৪২ রান যোগ করেন রঞ্জি ট্রফিতে হায়দরাবাদে খেলা তিলক বর্মা। কিষান ফেরেন ২৩ বলে ২৭ রান করে। এরপর সঞ্জু স্যামসনও (৭ বলে ৭) যখন বর্মাকে রেখে ড্রেসিংরুমে ফেরেন ১১.২ ওভারে ভারতের স্কোর ৭৬/৪।
এরপর আউট হওয়ার আগে অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ২৭ বলে ৩৮ রান যোগ করেন বর্মা। বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনের বলে বর্মা যখন ফাইন লেগে ওবেদ ম্যাকয়ের হাতে ক্যাচ দিলেন ভারতের রান ৫ উইকেটে ১১৪।
অক্ষর প্যাটেল (১২ বলে ১৪), রবি বিষ্ণয় (৪ বলে অপরাজিত ৮) ও অর্শদীপ সিং (৩ বলে অপরাজিত ৬) শেষ দুই ওভারে ভারতকে ২৩ রান এনে দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা যথেষ্ট হলো না।
একই মাঠে আগামী মঙ্গলবার সিরিজে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে দুই দল।