বাবরের সেঞ্চুরি, রিজওয়ানের সঙ্গে রেকর্ড জুটিতে পাকিস্তানের ১০ উইকেটের জয়

বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের রেকর্ড জুটিতে ১০ উইকেটের জয় পেয়েছে পাকিস্তানএএফপি

স্যাম কারেনের বলটা অফ সাইডে ঠেলে সিঙ্গেল নিলেন, নন স্ট্রাইক প্রান্তে ক্রিজে পৌঁছে দিলেন লাফ। সঙ্গে গর্জন। বাবর আজমের চোখেমুখে এরপর দেখা গেল স্বস্তির ছাপ। এশিয়া কাপে নিষ্প্রভ ছিলেন, স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল, আলোচনা ছিল ওপেনিংয়ে ব্যাটিং নিয়েও। বাবর সবকিছুর জবাব দিলেন করাচিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে, দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে। কারেনের বলে ওই শটেই তিন অঙ্কে পৌঁছে যান পাকিস্তান অধিনায়ক।

বাবরের রেকর্ড সেঞ্চুরি, মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে তাঁর রেকর্ড জুটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড জয় পেয়েছে পাকিস্তান। ২০০ রানের লক্ষ্যে বাবর খেলেছেন ৬৬ বলে ১১০ রানের অপরাজিত ইনিংস, মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে গড়েছেন ২০৩ রানের অবিচ্ছিন্ন ওপেনিং জুটি। তাতেই ১০ উইকেটের জয় পেয়েছে পাকিস্তান, প্রথম ম্যাচে হারের পর সাত ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই এনেছে সমতা।

আরও পড়ুন

বাবর-রিজওয়ানের জুটি রান তাড়ায় এখন টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ড ছিল এ দুজনেরই, গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁরা গড়েছিলেন অবিচ্ছিন্ন ১৯৭ রানের জুটি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও এটি রেকর্ড রান তাড়া। আর বাবর প্রথম পাকিস্তান ব্যাটসম্যান হিসেবে পেয়েছেন একাধিক টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির পর বাবর আজম, করাচিতে
এএফপি

করাচির ধীরগতির, নিচু উইকেটে ইংল্যান্ডের ১৯৯ রানের স্কোরকে মনে হচ্ছিল যথেষ্টর চেয়েও বেশি। বাবর ও রিজওয়ান শক্ত ভিতই গড়লেন, তবে প্রথম ১০ ওভারে ৮৭ রানের বেশি তুলতে পারেননি তাঁরা। তখনো এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ডই, বিশেষ করে যখন পাকিস্তানের মিডল অর্ডার নিয়েও সাম্প্রতিক সময়ে উঠেছে প্রশ্ন। তবে বাবর-রিজওয়ান ভাবলেন ভিন্ন কিছুই।

১১তম ওভারে লুক উডকে ইনিংসে নিজের প্রথম ছক্কাটি মারলেন বাবর, এরপর বাউন্ডারি আসতে থাকল নিয়মিত বিরতিতেই। ফ্লাডলাইটের আলোয় বল স্কিড করা শুরু করেছে ততক্ষণে, বাবর-রিজওয়ানের আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে ধীরে ধীরে। মাঝে ২৩ ও ৩২ রানে জীবন পেয়েছেন রিজওয়ান, ইংল্যান্ড মিস করেছে জুটি ভাঙার সুযোগ।

দুজন অবশ্য ফিরে তাকাননি আর। রিজওয়ান ফিফটি পূর্ণ করেন ৩০ বলে, বাবরের লাগে ৩৯ বল। তবে ফিফটির পর গতি বাড়ান পাকিস্তান অধিনায়ক, সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৬২ বলে। মানে ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে তাঁর লাগে মাত্র ২৩ বল।

টি-টোয়েন্টিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাবর-রিজওয়ানের জুটি
এএফপি

সময়ের অন্যতম সেরা স্পিনার আদিল রশিদের ওপরও চড়াও হন বাবর-রিজওয়ান, এ লেগ স্পিনার ৩ ওভারেই দেন ৩৪ রান। মঈন আলী অফ স্পিনে এক ওভার করতে এসেছিলেন, তবে তিনি দেন ২১ রান। বাবর ও রিজওয়ান, দুজনই লেগ সাইডে ইন ফ্রন্ট অব স্কয়ারে ছিলেন দারুণ, সবচেয়ে বেশি রান দুজনই তুলেছেন ওই অঞ্চল দিয়ে। বাবর শেষ পর্যন্ত ইনিংসে মারেন ১১টি চার ও ৫টি ছক্কা, রিজওয়ান মেরেছেন ৫টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা। বাবরের স্ট্রাইক রেট ছিল ১৬৬.৬৬, রিজওয়ান খেলেছেন ১৭২.৫৪-তে।

আরও পড়ুন

এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার ফিল সল্ট ও অ্যালেক্স হেলস ৫ ওভারে তুলেছিলেন ৪২ রান, ভালো একটা ভিত পাওয়ার পথেই এগোচ্ছিল ইংল্যান্ড। শাহনেওয়াজ দাহানির পরপর দুই বলে অবশ্য বদলে গেল চিত্রটা। আগের ম্যাচে ফিফটি করা অ্যালেক্স হেলস বোল্ড ২১ বলে ২৬ রান করে, পরের বলে ডেভিড ম্যালান ফেরেন কোনো রান না করেই।

বেন ডাকেট পাকিস্তানের দুই স্পিনার উসমান কাদির ও মোহাম্মদ নেওয়াজের ওপর চড়াও হয়ে অবশ্য রানের গতি বাড়ান। ২২ বলে ৪৩ রানের মধ্যে দুই স্পিনারের ১৮ বলেই ৩৭ রান তোলেন এ বাঁহাতি। এমন উইকেটে তাঁর সুইপ, রিভার্স সুইপ ছিল কার্যকর। এরপর হ্যারি ব্রুক খেলেন ১৯ বলে ৩১ রান। ইংল্যান্ডকে ১৯৯ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পেছনে অবশ্য মূল কৃতিত্ব অধিনায়ক মঈন আলীর। ৩২ রানে তাঁর সহজ ক্যাচ ফেলেন খুশদিল শাহ, এরপর মঈন খেলেন ২৩ বলে ৫৫ রানের অপরাজিত ইনিংস।

শাহনেওয়াজ দাহানি ও হারিস রউফ নেন ২টি করে উইকেট, একটি নেন মোহাম্মদ নেওয়াজ। ইংল্যান্ডের আউট হওয়া পাঁচ ব্যাটসম্যানই হন বোল্ড।