কোহলির আউট নিয়ে কেন এত বিতর্ক—কে ঠিক, কেই–বা বেঠিক
কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে বিরাট কোহলির আউট নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। ‘নন-পিচিং’ ডেলিভারি বা ফুলটসের নো বল নির্ধারণে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন উপায়ের আশ্রয় নিয়েছে আইপিএল। সেটি দিয়ে নির্ধারিত হওয়া কোহলির আউটের পক্ষে-বিপক্ষে ভিন্ন রকম মত দিচ্ছেন ক্রিকেট–বিশ্লেষক ও সাবেক ক্রিকেটাররা।
গতকাল ১ রানে হারা ম্যাচে ইডেন গার্ডেনে হারশিত রানার ফুলটসে ৭ বলে ১৮ রান করে আউট হন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ব্যাটসম্যান কোহলি। ফুলটসে ভড়কে গিয়ে লিডিং এজে ফিরতি ক্যাচ দেন কোহলি, অনফিল্ড আম্পায়ার নো বল না দিলে সেটি রিভিউ করেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না থাকলেও আইপিএলে ওয়াইড এবং নো বলের সিদ্ধান্তও রিভিউ করা যায়। টেলিভিশন আম্পায়ার অবশ্য মাঠের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন।
সে সিদ্ধান্ত আসার পর মাঠের আম্পায়ারদের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা যায় দৃশ্যত ক্ষুব্ধ কোহলিকে। তাঁর সঙ্গে এসে যোগ দেন কোহলির ওপেনিং সঙ্গী ও বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিও। মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময়ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কোহলিকে।
আইপিএলের নতুন পদ্ধতিতে বলের অনুমিত গতিপথের সঙ্গে দাঁড়ানো অবস্থায় ব্যাটসম্যানের পা থেকে কোমর–উচ্চতার পার্থক্য মেপে নির্ধারণ করা হচ্ছে নো বল। ব্যাটসম্যানের এ উচ্চতা আগে থেকেই মেপে রাখা হয়েছে। এর আগে বিসিসিআইয়ের এক ভিডিওতে ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথ বলেছিলেন, অফিশিয়াল ফটোশুটের সময়ই সেটি করা হয়েছে। আর বলের উচ্চতা মাপা হচ্ছে হক-আইভিত্তিক বল ট্র্যাকিং পদ্ধতিতে।
অবশ্য ব্যাটে যখন বল লাগে, তখনো সেটির গতিপথ অনুযায়ী তা কোহলির কোমরের ওপরেই ছিল। কিন্তু স্লোয়ার বলটি নিচু হচ্ছিল, কোহলিও ছিলেন ক্রিজের বাইরে। বলটি পপিং ক্রিজ পর্যন্ত পৌঁছালে যে উচ্চতায় (০.৯২) থাকত, সেটি কোহলির কোমরের উচ্চতার (১.০২) কমই ছিল বলে টেলিভিশন আম্পায়ার মাঠের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন।
ভারতের সাবেক পেসার ইরফান পাঠান এক্সে এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন সেটিই, নিয়ম অনুযায়ী কোহলি আউটই ছিলেন। তবে সাবেক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ কাইফের কাছে এ সিদ্ধান্তকে মনে হচ্ছে ‘অন্যায্য’। তিনি বলেছেন, ‘ব্যাটের সঙ্গে সংযোগের সময় বল যদি কোমর-উচ্চতায় থাকে, তাহলে এটি নো বল হিসেবে গণ্য করা উচিত। এবং আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, বল ট্র্যাকিংয়ে এর নিচু হওয়ার গতিপথটি বেশি তীক্ষ্ণ দেখানো হয়েছে।’
আরেক সাবেক ব্যাটসম্যান ওয়াসিম জাফর অবশ্য বলছেন, নিয়ম এমন বললেও সেটি বদলানো উচিত। তাঁর মতেও ব্যাটের সঙ্গে যখন বলের সংযোগ ঘটবে, সেই সময়ে দেখা উচিত বলটি কোমর-উচ্চতায় ছিল কি না।
এমসিসির আইনের ৪১.৭.১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যেকোনো ডেলিভারি পিচে না পড়ে পপিং ক্রিজে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ব্যাটসম্যানের কোমর-উচ্চতার ওপর দিয়ে অতিক্রম করলে বা অতিক্রম করত এমন হলে সেটি অন্যায্য বলে গণ্য করা হবে। এমন ডেলিভারি হলে আম্পায়ার নো বল ডাকবেন।
আইপিএল অবশ্য এ নিয়ম বদলায়নি, শুধু কার্যকর করার পদ্ধতিটি প্রযুক্তির হাতে তুলে দিয়েছে। ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে এটিকে আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছেন, ‘ঈশ্বরকে প্রযুক্তির জন্য ধন্যবাদ। পক্ষপাতের সব অভিযোগ দূর করেছে। আর খেলোয়াড়দের উচ্চতা টুর্নামেন্টের শুরুর আগেই মাপা হয়েছে, যেটির জন্য আমরা অনেকেই অপেক্ষা করছিলাম। ফলে এটা আম্পায়ারদের ব্যাপার নয়; বরং প্রযুক্তির পক্ষপাতশূন্য ব্যবহার।’
মাঠে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ম্যাচ শেষে বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি বলেছেন, ‘অবশ্যই নিয়ম তো নিয়মই। বিরাট ও আমি ওই মুহূর্তে মনে করেছিলাম, বল তার কোমরের ওপরে ছিল। আমার ধারণা, তারা এটি পপিং ক্রিজের ওপর মাপে। এমন সব মুহূর্তে সব সময়ই একটা দল থাকবে, যারা খুশি হবে। আরেকটা দল থাকবে, যারা মনে করবে, এটি সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তবে ক্রিকেট এভাবেই চলে।’