’৯৬ বিশ্বকাপ জয়ই শ্রীলঙ্কার জন্য ‘অভিশাপ’
এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের সেরা অর্জন ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়। যে জয়ের মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেটে বড় দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটি। বিশ্বকাপ জেতার পরের দেড় দশকের মধ্যে আরও দুইবার বিশ্বকাপ ফাইনালও খেলে শ্রীলঙ্কা। ২০১৪ সালে জেতে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও।
তবে সাফল্যের চূড়ায় ওঠা সেই ৯৬’ আসরই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে দুর্নীতি এবং অবনতির বীজ বুনে দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। তাঁর মতে, বিশ্বকাপ জেতাটাই শ্রীলঙ্কার জন্য ‘অভিশাপ’ হয়ে গেছে।
২৭ বছর আগে শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপ জিতেছিল লাহোরে অনুষ্ঠিত ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে। সে দিন দেশটির ক্রিকেট নতুন উচ্চতায় ওঠার পাশাপাশি নিচে নেমে যাওয়ার শুরুটাও হয় বলে এএফপিকে বলেছেন রানাতুঙ্গা, ‘১৯৯৬ বিশ্বকাপ জেতাটা প্রচ্ছন্নভাবে একটা অভিশাপ। ওই জয়ের পর আমাদের ক্রিকেটে প্রচুর টাকা ঢুকল। আমরা দেখলাম বোর্ডে অনেক দুর্নীতিবাজও ঢুকে গেল। সেটা ছিল শেষের শুরু।’
৯ বছর আগে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা শ্রীলঙ্কা গত কয়েক বছর ধরে অবনতির ধারায় চলছে। এই মুহূর্তে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে তারা আট নম্বরের দল। ২০২৩ বিশ্বকাপে জায়গা করতে প্রথমবারের মতো বাছাইপর্বও খেলতে হয়েছে দাসুন শানাকাদের। বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগেও খুব একটা স্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হয়নি দলটির। এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে মাত্র ৫০ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর অধিনায়ক শানাকাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিও উঠেছিল দেশটিতে।
মাঠের ক্রিকেটে পিছিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার নাম জড়িয়েছে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের ম্যাচ গড়পেটা ও অন্যান্য দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডে। ২০১৯ সালে দেশটির তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী বলেছিলেন, ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি শ্রীলঙ্কাকে সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ ক্রিকেট দেশগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওই বছরই খেলাধুলায় দুর্নীতিকে ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ হিসেবে একটি আইন প্রনয়ন করে শ্রীলঙ্কা, যদিও এর মধ্যে বিচারের আওতায় এসেছেন মাত্র ১ জন খেলোয়াড়।
তবে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের (এসএলসি) সচিব মোহন ডি সিলভার মতে, মাঠের দুর্দশার কারণ ভালোমানের খেলোয়াড়ের অপ্রাপ্যতা, ‘শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের মূল যে জায়গাটা—স্কুল ক্রিকেট, সেখান থেকে ভালোমানের খেলোয়াড় কম পাওয়া যাচ্ছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে সিনিয়র লেভেলে।’
তবে ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার দামিন্দা ভিজেসুরিয়ার বক্তব্য ভিন্ন। ডেইলি লঙ্কাদীপায় কাজ করা ভিজেসুরিয়ার মতে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের পিছিয়ে যাওয়ার কারণ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ‘আমরা দীর্ঘমেয়াদী কৌশল এবং পরিষ্কার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারিনি। এখানে হস্তক্ষেপের ব্যাপার আছে। কিছু খেলোয়াড়ের দলে জায়গা হয় রাজনৈতিক খুঁটির জোরে।’
বাছাইপর্ব পেরিয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করা শ্রীলঙ্কার এবারের ভালো ফল নিয়ে সন্দিহান তিনি, ‘আমার তো ভয় হয় এবারের বিশ্বকাপে আমরা কেঁদেকেটে না শেষ করে আসি। আমরা যদি ৯ ম্যাচের চারটিতে জিতি, তাতেই আমি খুশি। আর ৭–৮টা জিতে সেমিফাইনালে গেলে তো খুবই ভালো। বিশ্বকাপ জেতাটা হবে বোনাস।’
শ্রীলঙ্কা কি সমর্থকদের ‘বোনাস’ উপহার দেবে, নাকি খুশি রাখা বা অংশগ্রহণেই সীমাবদ্ধ থাকবে, সেটা মাসখানেকের মধ্যেই বোঝা যাবে।
বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার অভিযান শুরু হবে ৭ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।