২০ ওভার বোলিং করতে না পারলে ভারতের হয়ে খেলার চিন্তা বাদ দেওয়া উচিত

ভারতের পেসার যশপ্রীত বুমরাএএফপি

যশপ্রীত বুমরাকে নিয়ে ভারতের সাবেকেরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত!

কেউ বলছেন, বোর্ডার–গাভাস্কার সিরিজে বুমরাকে ‘আখ চিপে সব রস বের করে ছোবড়া বানানোর মতো’ ব্যবহার করা হয়েছে। কারও কথা উল্টো—ইনিংসে ২০ ওভার বোলিং করতে না পারলে তাঁর ভারতের হয়ে খেলার চিন্তা বাদ দেওয়া উচিত!

বুমরাকে নিয়ে আখবিষয়ক মন্তব্যটি ভারতের সাবেক স্পিনার হরভজন সিংয়ের। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গতকাল এ কথা বলেন। আর ইনিংসে ২০ ওভারের দাবিটা ভারতের হয়ে ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী সাবেক মিডিয়াম পেসার বলবিন্দর সিং সান্ধুর। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেছেন ’৮৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ২ উইকেট নেওয়া বলবিন্দর।

আরও পড়ুন

বোর্ডার–গাভাস্কার সিরিজে ৫ টেস্টে ৯ ইনিংসে ১৫১.২ ওভার বোলিং করেন বুমরা। ভারতের বোলারদের মধ্যে শুধু মোহাম্মদ সিরাজই তাঁর চেয়ে বেশি ওভার (১৫৭.১) বোলিং করেন। যদিও সিরাজ ৫ টেস্টে ১০ ইনিংসেই বল করেছেন। সিডনিতে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টে পিঠে চোট পাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করতে পারেননি বুমরা। ১৬২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সেই ইনিংসে বুমরা বোলিং করলে ওভারসংখ্যায় হয়তো সিরাজকে টপকে যেতেন। তবে পিঠে চোট পেয়ে বুমরা সে ইনিংসে বোলিং করতে না পারার পরই তাঁর ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বুমরার ক্যারিয়ারে পিঠের চোট নতুন কিছু না
এএফপি

হরভজন যেমন ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের প্রতি আঙুল তুলে বলেছেন, ‘তাকে দিয়ে কত ওভার বোলিং করানো হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ম্যানেজমেন্টের।’ কিন্তু বলবিন্দর দাঁড়িয়ে ‘ভাজ্জি’র ঠিক উল্টো পাশে।

৬৮ বছর বয়সী সাবেক এই ক্রিকেটারের যুক্তি, ‘ওয়ার্কলোড? সে কত ওভার বোলিং করেছে? ১৫০–এর মতো, তাই না? কিন্তু সেটা কত ম্যাচ ও ইনিংসে? পাঁচ ম্যাচ কিংবা নয় ইনিংসে, ঠিক না? অর্থাৎ ইনিংসপ্রতি ১৬ ওভার কিংবা ম্যাচপ্রতি ৩০ ওভার করে। আর সে কিন্তু এই ১৫‍+ ওভার টানা করেনি। বিভিন্ন স্পেলে করেছে। এটা এমন কি ব্যাপার? ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট বাজে কথা। এগুলো অস্ট্রেলিয়ান পরিভাষা। অস্ট্রেলিয়ানরাই বের করেছে। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট কিছুই না। আমি এটার সঙ্গে একমত নই।’

আরও পড়ুন

বলবিন্দর এরপর তাঁর খেলার সময়ের প্রসঙ্গ টেনেছেন। ভারতের হয়ে ৮ টেস্ট ও ২২ ওয়ানডে খেলা বলবিন্দর ১৯৮৩ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৮৪–এর অক্টোবর পর্যন্ত খেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সেই সময় সামনে টেনে এনে বলেছেন, ‘আমি এমন এক যুগের, যখন ক্রিকেটারেরা কারও কথা নয়, শুধু শরীরের ওপর ভরসা রাখত। আমি এসবের (ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট) সঙ্গে মোটেও একমত নই।’

ভারতের হয়ে ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী সাবেক পেসার বলবিন্দর সিং
ইনস্টাগ্রাম

বলবিন্দর চলতি সময়ে বিভিন্ন সুবিধার প্রসঙ্গ টেনে সুরটা কঠোর করলেন এভাবে, ‘এক দিনে বিভিন্ন স্পেলে ১৫ ওভার বোলিং করা একজন বোলারের জন্য বড় কিছু নয়। টেস্ট ম্যাচে তো পাঁচ দিনই বোলিং করতে হচ্ছে না। সে (বুমরা) তিন–চারটি স্পেলে ওভারগুলো করেছে। এখন শরীরের যত্ন নিতে সেরা ফিজিও, সেরা চিকিৎসকেরা আছেন। একজন বোলার যদি ইনিংসে ২০ ওভার বোলিং করতে না পারে, তার ভারতের হয়ে খেলার চিন্তা বাদ দেওয়া উচিত। ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে ইনিংসে ২০ ওভার বোলিং করার শক্তি থাকতে হবে। সেটা না পারলে ফিরে গিয়ে টি–টোয়েন্টি খেলা উচিত, যেখানে মাত্র চার ওভার বোলিং করতে হয়। সেই চার ওভারও আবার তিনটি স্পেলে করা যায়।’

ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট—ভাবনাটির সঙ্গে কেন একমত নন, বলবিন্দর সে ব্যাখ্যা দিলেন নিজের সময়ের উদাহরণ টেনে, ‘আমরা দিনে ২৫–৩০ ওভার বোলিং করেছি। কপিল (দেব) ক্যারিয়ারজুড়েই লম্বা স্পেলে বোলিং করেছে। যখন শুধু বোলিং, বোলিং আর বোলিং করবেন, আপনার শরীর ও মাংশপেশিও সে অনুযায়ী তৈরি হয়ে যায়। তাই এই ওয়ার্কলোড ম্যানজেমন্ট ধারণার সঙ্গে আমি একমত নই।’

আরও পড়ুন

বুমরার পিঠের চোট নতুন নয়। চোটমুক্ত রাখতে তাঁকে কয়েক বছর ধরেই বেছে বেছে ম্যাচ খেলিয়ে আসছে ভারত। আইসিসি ও এসিসির টুর্নামেন্ট কিংবা বড় দলের বিপক্ষে সিরিজে বুমরাকে খেলানো হয়। সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বেশ কিছুদিন বিশ্রামে ছিলেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে পিঠে চোট পাওয়ার পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন পরের বছর আগস্টে।

বোর্ডার–গাভাস্কার সিরিজে ৩২ উইকেট নিয়ে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হন বুমরা
এএফপি

তবে অতি ব্যবহারে বুমরা যেন চোটে না পড়েন, সেটা মাথায় রেখে তাঁকে দিয়ে বোলিং করানোর পক্ষে হরভজন। সে জন্যই সিডনি টেস্টে এই পেসার চোট পাওয়ার পর ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের কড়া সমালোচনায় ‘টার্বুনেটর’ বলেছেন, ‘আখ চিপে যেভাবে সব রস বের করে নেওয়া হয়, সেভাবে তাকে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাপারটা এমন ছিল যে ট্রাভিস হেড এসেছে, বলটা বুমরাকে দাও; মারনাস এসেছে, বলটা বুমরাকেই দাও; স্টিভ স্মিথ এসেছে, বুমরাকেই দাও বলটা।’