সাকিব–তামিম: দুজনার দুটি পথ আজ একই দিকে

তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানপ্রথম আলো

সাকিব আল হাসান চেয়েছিলেন, এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে বিদায় বলবেন আন্তর্জাতিক ওয়ানডেকে। হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই। তবে সে ইচ্ছাটা তিনি উহ্য রেখে দিয়েছিলেন। যা–ই হোক, সাকিবের চাওয়া পূরণ হচ্ছে না। যেমন পূরণ হয়নি তাঁর ঘরের মাঠে খেলে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ইচ্ছা।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চেয়েছিল, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা খেলুন তামিম ইকবাল। সেটাও হচ্ছে না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল ঘোষণার আগে নির্বাচকেরা আলোচনায় বসেছিলেন তামিমের সঙ্গে। কিন্তু তামিমের ‘না’কে ‘হ্যাঁ’ করাতে পারেননি। এরপর তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণাই দিয়ে দেন তামিম।

আরও পড়ুন

এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সাকিব–তামিম দুজনের কাছে তাই দুই রকমভাবে ধরা দিচ্ছে। সাকিবের জন্য এটা হতে পারে অতৃপ্তির অন্য নাম। যে রকম বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার তাঁর, বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটের মুখ হয়ে ওঠা সাকিব প্রশ্নাতীতভাবেই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। বড় কোনো আসর থেকে, অন্তত মাঠ থেকে ক্যারিয়ার শেষের ঘোষণা দেওয়াটা তাঁর প্রাপ্য। অথচ এমন একজনের শেষটাই হলো কিনা অপূর্ণতা দিয়ে!

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব–তামিম একসময় বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও ক্যারিয়ারের শেষলগ্নে তাঁরা হয়ে উঠলেন বৈরিতার প্রতীক।

অবশ্য শেষই–বা বলা কীভাবে? আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিদায়’ বলার সুযোগই তো পাননি সাকিব। সাত মাসের রাজনৈতিক পরিচয় বাংলাদেশের ক্রিকেটেই এখন ব্রাত্য করে দিয়েছে একসময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। সব মিলিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা সাকিবের জন্য হয়ে থাকবে না ছুঁতে পারা এক মাইলফলক।

তামিম বিদায় বললেও বাংলাদেশের জার্সিকে সাকিব আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানোর সুযোগ পাননি
প্রথম আলো

তামিমের জন্য তাহলে কী, আত্মত্যাগ? এক বছরের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ওয়ানডে থেকে দূরে থাকা কারও নামটা যখন আগেই খেলোয়াড় তালিকায় লিখে নিয়ে নির্বাচকেরা দল সাজানোর প্রস্তুতি নেন, তখন তো এটা বলাই যায়। তামিম চাইলেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ময়দান থেকে লাল–সবুজ জার্সি গায়ে বিদায় বলতে পারতেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। তা না করে সরে দাঁড়ালেন নতুনদের জন্য পথ খুলে দিয়ে। তাঁর ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে বিদায়ী সংবর্ধনা হলো বিপিএলের ফাইনালে।

এ নিয়ে পরপর দুটি আইসিসির ইভেন্টের আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট সাকিব–তামিম আলোচনায় মুখর থাকল। একটা তো এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে, তার আগে প্রথম বিতর্কটা হয়েছিল ভারতে অনুষ্ঠিত ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে।

যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হতে পারত সাকিব–তামিমের যৌথ বিদায়ী মঞ্চ, আজ সেটিই তাঁদের মিলিয়ে দিচ্ছে অন্যভাবে। হোক দুই রকম কারণে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তো নেই দুজনের কেউই।

বিশ্বকাপের দল নির্বাচন নিয়ে সাকিব–তামিম বিরোধ তখন তুঙ্গে। তামিমকে যে দলে চান না, সেই মনোভাব অধিনায়ক সাকিব প্রকাশ করে দিলেন এক সাক্ষাৎকারে। শেষ পর্যন্ত তামিমকে ছাড়াই হলো বিশ্বকাপের দল। অভিযোগ উঠল, সাকিব আর কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে মিলেই নাকি তামিমকে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেওয়ার ‘চক্রান্ত’ করেছেন। যদিও সাকিব বলেছেন, অভিযোগ ঠিক নয়।

ক্যারিয়ারে শুরুর দিকে এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই ছিল সাকিব ও তামিমের। শেষলগ্নে বৈরিতা ছিল তাঁদের মধ্যে
প্রথম আলো

সে যা–ই হোক, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব–তামিম একসময় বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও ক্যারিয়ারের শেষলগ্নে তাঁরা হয়ে উঠলেন বৈরিতার প্রতীক। সাকিব–তামিম মানেই একে অন্যের সঙ্গে কথা না বলে থাকা, বিদ্বেষী মনোভাব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধ, কাদা–ছোড়াছুড়ি, বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিভেদের ফাটল। শেষ দিকে তাঁদের নিয়ে আলোচনা কখনো প্রীতিকর অনুভূতি তো দেয়ইনি, উল্টো তাঁদের প্রসঙ্গ উঠলেই অনেকে বিরক্তি নিয়ে বলেছেন—আর কত!

আরও পড়ুন

সেই আর কতও আজ শেষের দিকে। শেষের দিকে কী, শেষই তো! বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত সাকিব আছেন নিশ্চুপ প্রবাসজীবনে। ক্রিকেটটা তাঁর কাছে আপাতত ১০–২০ ওভারের ‘ফান’। আবার কখনো দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলবেন কি না, সাকিব নিজেও তা জানেন বলে মনে হয় না।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সাকিব ও তামিমের পথ মিলিয়ে দিয়েছে
প্রথম আলো

এদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলা তামিম এবারের বিপিএল শিরোপার মঞ্চেই জানিয়েছেন, পরের বিপিএলেও তাঁর চোখ আছে। চালিয়ে যাবেন অন্যান্য ঘরোয়া ক্রিকেটও। সমান্তরালে গুঞ্জন তাঁর ক্রিকেট প্রশাসনে আসা নিয়েও।

যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হতে পারত সাকিব–তামিমের যৌথ বিদায়ী মঞ্চ, আজ সেটিই তাঁদের মিলিয়ে দিচ্ছে অন্যভাবে। হোক দুই রকম কারণে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তো নেই দুজনের কেউই। সেটিও একদিক দিয়ে ভালো। ক্যারিয়ারের শেষবেলায় হলেও দুজনার দুটি পথ আজ চলে গেছে একই দিকে।