কী রোমাঞ্চ! বহুদিন পর ক্রিকেট বিশ্ব দেখল অসাধারণ রোমাঞ্চ ছড়ানো এক টেস্ট। পঞ্চম দিনের একদম শেষবেলায় করাচি টেস্টের ভাগ্য দুলছিল পেণ্ডুলামের কাটায়। একবার পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়ে তো আরেকবার নিউজিল্যান্ডের দিকে। সব রোমাঞ্চে জল ঠেলে দিয়েছে আলোর স্বল্পতা। দিনের খেলা ৩ ওভার যখন বাকি ছিল, পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৫ রান, হাতে ছিল ১ উইকেট। এমন সময়ে আম্পায়ার দুই দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে ম্যাচ ড্র ঘোষণা করেন।
করাচি টেস্টের শেষ দিনের রোমাঞ্চ চূড়ায় পৌছাঁয় যখন ম্যাচ শেষ হতে আর ৯ ওভার বাকি ছিল। সেই সময় হাতে ৩ উইকেট থাকা পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৮ রান। পাকিস্তান কি পারবে ইতিহাস গড়তে—এমন প্রশ্ন তখন উড়ছিল চারদিকে। করাচি টেস্ট জিততে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৩১৯ রান। এ রান টপকে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে হলে রেকর্ড গড়তে হবে বাবর আজমের দলকে। পাকিস্তানের মাটিতে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। এর আগে পাকিস্তানের মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ছিল ৩১৪ রানের। ১৯৯৪ সালে এ করাচিতেই ৩১৩ রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়াকে পাকিস্তান হারিয়েছিল ১ উইকেটে।
সরফরাজ আহমদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে রেকর্ড গড়ে জয়ের স্বপ্নই দেখছিল পাকিস্তান। কিন্তু ম্যাচ শেষ হতে যখন ৮ ওভার বাকি, হাসান আলী এলবিডব্লু হয়ে ফিরলেন। এর ১০ বল পর পাকিস্তানের তখন প্রয়োজন ৩২ রান, উইকেটে সরফরাজের সঙ্গে নাসিম শাহ। এমন সময়েই কি না মাইকেল ব্রেসওয়েলের বলে লেগ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন সরফরাজ। প্রশ্নটা তখন গেল ঘুরে—পাকিস্তান কি পারবে করাচি টেস্ট বাঁচাতে?
করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে গোটা ক্রিকেট বিশ্বে তখন শুধু রোমাঞ্চ আর রোমাঞ্চ। নাসিম কিংবা আবরার আহমেদ, যিনিই ব্যাটিং করছেন, উইকেটকিপারসহ চারদিকে ১০ জন ফিল্ডার ঘিরে রেখেছেন। এর মধ্যে একেকটা বল নাসিম কিংবা আবরার ঠেকাচ্ছেন, গ্যালারিতে হুল্লোড় উঠেছে।
এর মধ্যেই নাসিম ইনিংসের ৮৯তম ওভারে বল করতে আসেন ব্রেসওয়েল। নাসিমকে চৌদিক থেকে ঘিরে রেখেছেন ফিল্ডাররা। এ সুযোগটা নিয়ে সেই ওভারে একটি করে ছয় ও চার মেরে দিলেন নাসিম। এরপর হিসাবটা দাঁড়ায়—পাকিস্তানকে জিততে হলে করতে হবে ১৭ রান।
পরের ওভারে ২ রান যোগ করেন আবরার। সেই সময় ৩ ওভারে পাকিস্তানের জিততে হলে করতে হতো ১৫ রান। আর ১ উইকেট নিতে পারলেই জিতে যেত নিউজিল্যান্ড। ঠিক সেই সময়েই কি না আলোর স্বল্পতা জল ঢেলে দিল সব রোমাঞ্চে। ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে দুই দলের খেলোয়াড়দের।
এর আগে পঞ্চম দিন সকালে পাকিস্তান ৩১৯ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে ৮ উইকেট নিয়ে। আগের দিনের শেষবেলায় ২ উইকেট হারানো পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে তখনো কোনো রান জমা হয়নি। সেই সময় কেই–বা ভাবতে পেরেছিলেন যে ম্যাচটি শেষবেলায় এসে এমন রোমাঞ্চ ছড়াবে।
ম্যাচটি জিততে না পারলেও শেষ পর্যন্ত যে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে, এর জন্য পাকিস্তানের সমর্থকেরা ধন্যবাদ দিতে পারেন সরফরাজকে। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংয়েই যে ম্যাচটি এ পর্যন্ত নিয়ে আসতে পেরেছে পাকিস্তান।
ইমাম–উল হক আর শান মাসুদ দিনের শুরুটা ভালো করতে পারেননি। মাত্র ৩৫ রান যোগ করার পরই ভাঙে পাকিস্তানের তৃতীয় উইকেট জুটি। ১২ রান করে আউট হয়ে ফেরেন ইমাম। অধিনায়ক বাবর আজমও ফিরে গেছেন দ্রুতই। ৪১ বলে ২৭ রান করে আউট হওয়ার আগে শান মাসুদের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে তিনি গড়েছেন ৪২ রানের জুটি।
এরপরই উইকেটে আসেন সরফরাজ। উইকেটে এসে ১১তম বলেই থিতু হয়ে যাওয়া সঙ্গী শান মাসুদকে হারান। আউট হওয়ার আগে ৬৬ বলে ৩৫ রান করেছেন মাসুদ। ছোট ছোট ইনিংস খেলে অন্য প্রান্তে আউটের এ ধারা অব্যাহত থাকে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু এক প্রান্ত আগলে ব্যাটিং করে যেতে থাকেন সরফরাজ। কঠিন উইকেটে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হয়েছেন ১৭৬ বলে ১১৮ রান করে। ব্রেসওয়েলের বলে আউট হওয়ার আগে মেরেছেন ৯টি চার ও ১টি ছয়। ম্যাচ ড্র হওয়ার আগে পাকিস্তান তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে তুলেছে ৩০৪ রান।
সরফরাজের উইকেটটিসহ পাকিস্তানের ৪ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছেন ব্রেসওয়েল। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন টিম সাউদি ও ইশ সোধি। ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন সরফরাজই। ০–০–তে ড্র হওয়া ২ টেস্টের সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ও তিনিই।