২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মোস্তাফিজ কেন উইকেট পাচ্ছেন না

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে একটি উইকেটও পাননি মোস্তাফিজুর রহমানছবি: শামসুল হক

মিরপুরে মোটামুটি দুই ধরনের উইকেট ছিল বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে। প্রথম ম্যাচ দেখেছে মিরপুরের চেনা রূপ—মন্থর, টার্নিং, অসম বাউন্সের উইকেট। দ্বিতীয়টিতে তা অনেক বেশি ব্যাটিংবান্ধব, বল ভালোভাবে ব্যাটে আসছিল। দুই ধরনের উইকেটের সঙ্গেই বাংলাদেশের চেয়ে ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ড। কন্ডিশন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী দুই ধরনের সেঞ্চুরি করেছেন ডেভিড ম্যালান ও জেসন রয়, হয়েছেন ম্যাচসেরা। অন্যদিকে ইংলিশ বোলারদের সামনে নিজভূমেই যেন পরবাসী বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

ব্যাটিংটা আলোচনায় থাকলেও দ্বিতীয় ম্যাচে বোলিংটাও যে সুবিধার হয়নি, তা মেনে নিয়েছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তাঁর বোলিংয়ের অন্যতম প্রধান অস্ত্র মোস্তাফিজুর রহমানের নিষ্প্রভ থাকার প্রসঙ্গটিও আলোচনায় আসছে ঘুরেফিরে।

প্রথম ম্যাচে ২১তম ওভারে বোলিংয়ে আনা হলেও তখন ম্যাচের পরিস্থিতি তাঁর জন্য আদর্শ মঞ্চ সাজিয়ে বসে ছিল। কিন্তু মোস্তাফিজ তা কাজে লাগাতে পারেননি। উইকেট তো পানইনি, উল্টো ৮ ওভারে দিয়েছেন ৪২ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁকে আগে এনেছেন তামিম, মোস্তাফিজ উইকেটের দেখা পাননি এদিনও। উল্টো ১০ ওভারে দিয়েছেন ৬৩ রান।

বল হাতে ছন্দহীনতা হয়তো মোস্তাফিজের কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলছে
ছবি: প্রথম আলো

শুধু ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ নয়, মোস্তাফিজ ওয়ানডেতে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। হ্যাঁ, সর্বশেষ এক বছরে তাঁর মতো এত ওভার (১০০.২) বোলিং করে এত কম ইকোনমি রেট (৪.৬১) নেই বাংলাদেশের আর কোনো বোলারের।

কিন্তু মোস্তাফিজ মানেই তো শুধু রান আটকে রাখা নয়। তিনি উইকেট এনে দেবেন, স্বাভাবিকভাবেই দলের প্রত্যাশা এমন। মোস্তাফিজ ব্যর্থ সেখানেই। সর্বশেষ এক বছরে ১৩ ইনিংসে বোলিং করেছেন, পেয়েছেন ১০ উইকেট। তবে এর মধ্যে ৫টিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে।

দ্বিতীয় ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক তামিম ইকবালও বলেছেন, উইকেট নেওয়ায় উন্নতি করতে হবে মোস্তাফিজকে, ‘ওর ডিফেন্সিভ স্কিল খুব ভালো। তবে উইকেট নেওয়ার স্কিলে হয়তো উন্নতি করতে হবে। সব সময় কোনো ক্রিকেটারের গ্রাফ এক রকম থাকে না। কখনো ওপরে যায়, কখনো নিচে। তার ওপর আমার বিশ্বাস প্রবল। আমি নিশ্চিত, সে ঘুরে দাঁড়াবে। আমার এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

রান আটকে রাখতে পারায় সফল হলেও উইকেট তোলায় মোস্তাফিজ ছন্দে নেই
ছবি: প্রথম আলো

সেই উন্নতিটা হয়তো রাতারাতি হবে না। কিন্তু মোস্তাফিজের উইকেট নেওয়ার সামর্থ্যের কী হলো, সে ব্যাপারে দেশের অভিজ্ঞ কোচ সারওয়ার ইমরানের পর্যবেক্ষণ, ‘বোলারের একটা স্টক ডেলিভারি থাকতে হয়। যেটি সে অনায়াসে লেংথে করবে একটু জোরের ওপর, ব্যাটসম্যান পরাস্ত হবে। মোস্তাফিজ আগে ঘণ্টায় প্রায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে এমন একটা বল করত, যেটি ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে অফ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যেত। এখন সেটি দেখতে পাচ্ছি না। বৈচিত্র্যের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে এমন হতে পারে। আর পরিস্থিতি অনুযায়ী, ব্যাটসম্যানের মনোভাব অনুযায়ী বোলিং করার ব্যাপারটাও চোখে পড়ছে না সেভাবে।’

আরও পড়ুন
স্লোয়ার বা শর্ট বলই করবে—এমন অনুমেয় হয়ে গেছে সে। আগে ইয়র্কারও ভালো করতে পারত, সেটিও দেখি না এখন। যদি লেংথ বল করতে না পারে, ব্যাটসম্যানকে পরাস্ত করতে না পারে, শুরুতে এসেই স্লোয়ার করতে থাকে—তাহলে তো ব্যাটসম্যানের কাজটা সহজ হয়ে যায়।
কোচ সারওয়ার ইমরান

মোস্তাফিজ মানেই স্লোয়ার, সঙ্গে কাটার। তবে এগুলোর অতি ব্যবহারেও সমস্যা দেখছেন সারওয়ার, ‘ও এখন বেশির ভাগই স্লোয়ার করে। স্লোয়ার বা শর্ট বলই করবে—এমন অনুমেয় হয়ে গেছে সে। আগে ইয়র্কারও ভালো করতে পারত, সেটিও দেখি না এখন। যদি লেংথ বল করতে না পারে, ব্যাটসম্যানকে পরাস্ত করতে না পারে, শুরুতে এসেই স্লোয়ার করতে থাকে—তাহলে তো ব্যাটসম্যানের কাজটা সহজ হয়ে যায়।’

আরও পড়ুন

বৈচিত্র্য নিয়ে বেশি ভাবার বদলে মোস্তাফিজের এখন ওই স্টক ডেলিভারি নিয়ে কাজ করা উচিত বলেও মত সারওয়ারের, ‘অফ স্টাম্প, মিডল স্টাম্প ধরে লেংথে করতে হবে, যাতে ব্যাটসম্যান জায়গা না পায়। আড়াআড়ি খেলতে গেলে ঝুঁকি নিতে হয়। স্টাম্প টু স্টাম্প বোলিংয়ের ক্ষেত্রে ওর উন্নতি দরকার। ফুল লেংথ বা ওভারপিচড ডেলিভারির দিকেও মনোযোগী হতে পারে।’

টি-টোয়েন্টিতে এখনো মোস্তাফিজের বিকল্প নেই, এমন বললেও ওয়ানডেতে তাঁর জায়গা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করেন সারওয়ার। প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজ হারের পর শেষ ম্যাচে এ বাঁহাতি পেসারের দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে, এমন মনে করেন সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেনও।

আরও পড়ুন

প্রথম দুই ম্যাচেই অপরিবর্তিত একাদশ খেলানোর পর বাংলাদেশ স্কোয়াডের অন্যদের সুযোগ দিতেই পারে। চট্টগ্রামে সোমবার সিরিজের শেষ ম্যাচ। আজ দুপুরেই ঢাকা থেকে সেখানে পৌঁছে গেছে দুই দল। যদিও দলের সঙ্গে যাননি সাকিব আল হাসান। আগামীকাল সকালে চট্টগ্রাম পৌঁছে দুপুরে দলের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দেবেন তিনি।